“অন্য ধর্মের উপাসনালয়ের ওপর যারা আক্রমণ চালায় তারা কখনোই ধার্মিক হতে পারে না,” মন্তব্য করেছেন ধর্ম উপদেষ্টা।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান চন্দ্রনাথ পাহাড় ঘিরে কোনো ধরনের ‘উসকানিমূলক’ কার্যক্রম দেখা মাত্র ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টা।
বুধবার সকালে ঢাকার রেলভবনে চন্দ্রনাথ ধাম (কাঞ্চননাথ-চন্দ্রনাথ-আদিনাথ) শ্রাইন কমিটির সঙ্গে বৈঠকে তারা তাৎক্ষণিকভাবে এ নির্দেশনা দেন এবং মাঠ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শ্রাইন কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার এবং ধর্ম উপদেষ্টা আ. ফ. ম. খালিদ হোসেন।
গত ১৫ আগস্ট এম এম সাইফুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী ঢাকার বাসিন্দা হিসেবে চন্দ্রনাথ পাহাড় ভ্রমণে যান। পরদিন ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে তিনি লেখেন, “সীতাকুণ্ড পর্বতের চূড়ায় মসজিদ ৯০ শতাংশ কনফার্ম।” সেই পোস্টে হেফাজতে ইসলামের নেতা হারুন ইজহারের সঙ্গে একটি ছবিও প্রকাশ করেন তিনি।
পোস্টটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে অনেকে সেখানে মসজিদ নির্মাণে আর্থিক সহায়তার আগ্রহ প্রকাশ করেন। বিষয়টি হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করে। এ সময় চন্দ্রনাথ মন্দির এলাকা পরিচালনাকারী শ্রাইন কমিটি স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে।
পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে হারুন ইজহারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এরপর ১৭ আগস্ট ফেসবুকে হারুন ইজহার লেখেন, “ঢাকার কিছু তরুণ আলেম উদ্যোক্তা সৌজন্য সাক্ষাতে এসেছিলেন। তখন আমি সফরে বের হচ্ছিলাম, কয়েক মিনিট কথা হয় তাদের সঙ্গে। তারা সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ এলাকায় মসজিদ নির্মাণের কোনো ইচ্ছা প্রকাশ করেননি। শুধু বলেছেন, পর্যটকদের সুবিধার্থে উপযুক্ত স্থানে একটি মসজিদ দরকার এবং এর জন্য অর্থায়নে তারা আগ্রহী। আমি এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।”
১৭ আগস্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফখরুল ইসলাম, স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা ও শ্রাইন কমিটির সদস্যরা চন্দ্রনাথ পাহাড় পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইউএনও জানান, চন্দ্রনাথ মন্দির এলাকায় মসজিদ নির্মাণের কোনো প্রমাণ মেলেনি। তিনি বলেন, “সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আশ্বস্ত করা যাচ্ছে যে, চন্দ্রনাথ মন্দির এলাকায় মসজিদ নির্মাণের অনুমতি প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি।”
২৪ আগস্ট চট্টগ্রামে এক মতবিনিময় সভায় এ প্রসঙ্গে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, “সেখানে কোনো ধরনের মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি এবং প্রচারিত সংবাদ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। চন্দ্রনাথ পাহাড়ে নতুন মসজিদ নির্মাণের প্রশ্নই ওঠে না।”
ঢাকায় বৈঠকে শ্রাইন কমিটির নেতারা অভিযোগ করেন, গত পাঁচ বছর ধরে মন্দির ঘিরে বিভিন্ন ধরনের ‘উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড’ চলছে। তারা জানান, এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সম্প্রীতির পরিবেশ নষ্টের চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি তারা মন্দিরে যাতায়াতের সিঁড়ি সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেন।
শ্রাইন কমিটির সভাপতি অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য বলেন, “সিঁড়ির অবস্থা ভালো নয়, দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।”
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, এ অনুরোধের পর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব রেজাউল মাকছুদ জাহেদীকে তাৎক্ষণিকভাবে ফোন করে সিঁড়ি সংস্কারের নির্দেশ দেন উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।
বৈঠকে উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় বলেন, “ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি নির্বিশেষে অন্তর্বর্তী সরকার বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে কাজ করছে।”
উপদেষ্টা খালিদ হোসেন বলেন, “অন্য ধর্মের উপাসনালয়ের ওপর যারা আক্রমণ চালায় তারা কোনোভাবেই ধার্মিক হতে পারে না। এটা অপরাধ, এতে ধর্ম নেই—অধর্ম আছে। ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্টের যে কোনো প্রয়াস কঠোরভাবে দমন করা হবে। আমি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আহ্বান জানাই, আপনারা ন্যায্য দাবি হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট বরাবর পাঠান, আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব।”
উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, “চন্দ্রনাথ মন্দিরের সঙ্গে ইতিহাস ও ঐতিহ্য জড়িত। আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়—এমন কোনো উসকানিমূলক কার্যক্রম বরদাশত করা হবে না। যে কোনো উসকানির চিহ্ন পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”