রাতে ঘুমানোর সময় ঘন ঘন ওয়াশরুমে যেতে হয়? ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে? সারাদিন কাজ করার সময়ও বারবার প্রস্রাবের চাপ অনুভব হয়? চিন্তার কিছু নেই—এটি শুধু আপনার সমস্যা নয়, বরং লক্ষ লক্ষ মানুষ এই অসুবিধায় ভুগছেন। সুখবর হলো, ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু সহজ নিয়ম মানলে অনেকটাই উপশম পাওয়া সম্ভব।
প্রথমেই জানতে হবে—বারবার প্রস্রাব হওয়ার কারণ কী?
ঘন ঘন প্রস্রাবের সম্ভাব্য কারণ
-
রাতে অতিরিক্ত পানি খাওয়া
-
চা, কফি বা ঠান্ডা পানীয়ের অতিরিক্ত ব্যবহার
-
অ্যালকোহল গ্রহণ
-
ডায়াবেটিস বা হরমোনজনিত সমস্যা
-
মূত্রনালীর সংক্রমণ (UTI)
-
প্রস্টেটের সমস্যা (পুরুষদের ক্ষেত্রে)
-
মূত্রাশয়ের পেশি দুর্বল হয়ে যাওয়া
খারাপ জীবনধারা এবং কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা একসঙ্গে মিলে এই অসুবিধা বাড়িয়ে তোলে।
ঘরোয়া প্রতিকার এবং নিয়ন্ত্রণের টিপস
১. তরল নিয়ন্ত্রণ
পানি শরীরের জন্য অত্যন্ত জরুরি, তবে রাতে অতিরিক্ত পান করলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।
-
ঘুমানোর অন্তত ২–৩ ঘণ্টা আগে থেকে পানি খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিন।
-
দিনের বেলায় সুষমভাবে পানি পান করুন।
২. চা, কফি এবং অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন
-
ক্যাফেইন এবং অ্যালকোহল মূত্রাশয়কে উদ্দীপিত করে।
-
সন্ধ্যার পর চা, কফি বা কোল্ড ড্রিঙ্কস না খাওয়াই ভালো।
-
হঠাৎ পুরোপুরি বন্ধ করতে না পারলে ধীরে ধীরে পরিমাণ কমান।
৩. মূত্রাশয় ট্রেনিং
-
প্রস্রাবের চাপ এলেই সঙ্গে সঙ্গে বাথরুমে না গিয়ে কিছুক্ষণ ধরে রাখার চেষ্টা করুন।
-
ধীরে ধীরে মূত্রাশয় দীর্ঘ সময় প্রস্রাব ধরে রাখতে সক্ষম হবে।
-
এই অভ্যাস রাতে ঘন ঘন প্রস্রাব কমাতে সাহায্য করে।
৪. কেগেল ব্যায়াম
-
পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্যই কার্যকর।
-
প্রস্রাব বন্ধ করার মতো করে ৫ সেকেন্ড পেশি শক্ত করে ধরুন, তারপর ছেড়ে দিন।
-
প্রতিদিন ৮–১০ বার করুন।
-
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি মূত্রাশয়ের নিয়ন্ত্রণে দারুণ কার্যকরী।
অতিরিক্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
-
ডায়াবেটিস চেকআপ করুন: অতিরিক্ত প্রস্রাব ডায়াবেটিসের একটি লক্ষণ হতে পারে।
-
লবণ কম খান: অতিরিক্ত লবণ খেলে শরীরে পানি জমে এবং রাতে বেশি প্রস্রাবের চাপ হয়।
-
ওষুধের প্রভাব: কিছু ওষুধ (যেমন ব্লাড প্রেসার কমানোর ডাইইউরেটিক) প্রস্রাব বাড়াতে পারে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করুন।
-
শোওয়ার আগে টয়লেটে যান: এটি সাধারণ অভ্যাস হলেও খুব কার্যকর।
কখন ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করবেন?
যদি বারবার প্রস্রাবের সঙ্গে সঙ্গে নিচের সমস্যাগুলো দেখা দেয়, তবে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যান—
-
প্রস্রাব করার সময় জ্বালাপোড়া বা ব্যথা
-
প্রস্রাবে রক্ত
-
অত্যধিক দুর্বলতা বা ক্লান্তি
-
প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারা
কারণ এগুলো ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন, কিডনি বা প্রস্টেটের সমস্যা, এমনকি ডায়াবেটিসেরও লক্ষণ হতে পারে।
রাতে ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া একটি সাধারণ সমস্যা হলেও সঠিক অভ্যাস গড়ে তুললে অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তরল নিয়ন্ত্রণ, কফি–অ্যালকোহল এড়িয়ে চলা, মূত্রাশয় ট্রেনিং ও কেগেল ব্যায়াম—এই চারটি টিপস নিয়মিত মানলেই ভালো ফল পাবেন। তবে সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।