বিভাগ:

রাশমিকা বয়স কত হলো?

দক্ষিণী সিনেমার সুপার স্টার রাশমিকা মান্দানা এখনো ৩০ বছরে পা দেননি। অল্প সময়ে চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে একের পর এক সফল সিনেমার সঙ্গে নাম লিখেয়েছেন এ অভিনেত্রী। বলিউড থেকে দক্ষিণী বিনোদন ভুবন দুই জায়গাতেই কাজ করে যাচ্ছেন এ তারকা।

আল্লু অর্জুন থেকে শুরু করে সালমান খান কিংবা রণবীর কাপুর, এরই মধ্যে প্রথম সারির সব বলিউড তারকাদের সঙ্গে কাজ করা ফেলেছেন এ অভিনেত্রী। আসছে ৫ এপ্রিল ২৯ বছরে পদার্পণ করবেন রাশমিকা। জন্মের মাসের শুরুতে তার নতুন উপলদ্ধি তৈরি হয়েছে।

যদিও বয়স যত বাড়ে জন্মদিন নিয়ে উপলব্ধি পাল্টায়। যদিও রাশমিকার তেমন কিছুই হয়নি। তিনি নিজেকে নিয়ে ভীষণ খুশি। এ প্রসঙ্গে রাশমিকা বলেছেন, ‘এটা আমার জন্মদিনের মাস, আমি খুবই উত্তেজিত। আমি সব সময় শুনেছি যে বয়স যত বাড়ে, জন্মদিন উদযাপনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে মানুষ। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা উল্টো।’

রাশমিকা আরও বলেন, ‘বয়স যত বাড়ে, জন্মদিন উদযাপনে তত বেশি উতলা হয়ে উঠছি। বিশ্বাসই হচ্ছে না যে আমি এরই মধ্যেই ২৯ বছরে পা দিয়েছি। আমি আরও একটা বছর সুস্থ, সুখী এবং নিরাপদে কাটিয়ে দিলাম! উদযাপনের জন্য যথেষ্ট কারণটা!’

বাংলাদেশে আসছে পাকিস্তানি ব্যান্ড

পাকিস্তানের জনপ্রিয় রক ব্যান্ড বায়ান প্রথমবারের মতো কনসার্ট করতে বাংলাদেশে আসছে। এই সফর দিয়ে দলটির বিশ্ব ট্যুর শুরু হবে।

বাংলাদেশ সফর নিয়ে বায়ানের অফিসিয়াল ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয় ৩০ মার্চ। ভিডিওতে দলটির ভোকালিস্ট আসফার হুসেনকে বলতে শোনা যায়, ‘কেমন আছো বাংলাদেশ, আমাদের সফরের সঙ্গে যুক্ত হতে প্রস্তত সবাই?’ এর পরই ভিডিওটি বাংলাদেশে তাদের ভক্তদের নজর কারে।

বায়ানের ‘সফর ট্যুর’ শিরোনামের এই কনসার্টটি আয়োজন করেছে দেশের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এরই মধ্যে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ছাড়া হয়েছে টিকিটও। তবে ভেন্যু এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।

পাকিস্তানের সংগীত জগতের আলোচিত ব্যান্ড বায়ান। ‘দ্য সফর ট্যুর’ শিরোনামে তারা পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কনসার্ট করবে।

তাদের জনপ্রিয় গানের তালিকায় রয়েছে ‘নেহি মিলতা’, ‘মেরা মুসাফির’, ‘সুনো’, ‘ফারদা’, ‘কাহা যাউ’ ইত্যাদি।

বায়ান ব্যান্ডের সদস্য সংখ্যা : আসফার হুসাইন, শাহরুখ আসলাম, মনসুর লাশারি, মুকিত শাহজাদ, হায়দার আব্বাস।

মাইনক্রাফ্ট গেমে শিশুরা আসক্ত কেন?

মাইনক্রাফ্ট সর্বকালের অন্যতম জনপ্রিয় ভিডিও গেম। ২০০৯ সালে প্রথম বাজারে আসার পর, ২০২৩ সালের মধ্যে এর ৩০০ মিলিয়নেরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে। এটি এবং রোব্লক্স এবং টেরারিয়ার মতো গেমগুলি শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্ক পর্যন্ত সব বয়সের গেমাররা উপভোগ করে।

এই গেমটি ঘণ্টার পর ঘণ্টা শিশুদের মনোযোগ ধরে রাখতে সক্ষম, এখনকার স্বল্পস্থায়ী মনোযোগের যুগে এটি একটি অসাধারণ কৃতিত্ব। অবশ্য কিছু অভিভাবকের শঙ্কা রয়েছে যে মাইনক্রাফ্টের প্রতি তাদের সন্তানদের আগ্রহ প্রায় আসক্তির পর্যায়ে চলে যেতে পারে। কারণ তারা তাদের কম্পিউটার স্ক্রিন থেকে দূরে সরাতে হিমশিম খান।

মাইনক্রাফ্টের জনপ্রিয়তা এতটাই বেশি যে, জ্যাক ব্ল্যাক এবং জেসন মোমোয়া অভিনীত ‘আ মাইনক্রাফ্ট মুভি’ নামে একটি বহুল প্রতীক্ষিত হলিউড চলচ্চিত্র ২০২৫ সালের এপ্রিলে মুক্তি পেতে চলেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, মাইনক্রাফ্ট এবং এর মতো গেমগুলির সাফল্যের পিছনে গভীর মনস্তাত্ত্বিক- এমনকি বিবর্তনীয় কারণও থাকতে পারে। এই গেমগুলি আমাদের সকলের মধ্যে একটি সহজাত প্রবৃত্তিকে কাজে লাগায়- যা আমাদের সমগ্র প্রজাতির সাফল্যের ভিত্তি। আর সেটি হলো- নির্মাণের আকাঙ্ক্ষা।

শিশুরা সবসময়ই কিছু না কিছু তৈরি করতে পছন্দ করে- স্যান্ডক্যাসল, দুর্গ, ট্রিহাউস- এর কয়েকটি উদাহরণ মাত্র। কাঠের ব্লক, ক্লেডো এবং লেগোও ভাল উদাহরণ। মাইনক্রাফ্ট সম্ভবত ডিজিটাল জগতে এই ধরনের খেলার একটি সাম্প্রতিক সংস্করণ। অনেক শিশুর কাছেই এই বিভিন্ন ধরনের বস্তু তৈরির বিষয়টি আকর্ষণীয় কেন?

যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের বোস্টন কলেজের শিশু শিক্ষার পদ্ধতি নিয়ে গবেষণারত মনোবিজ্ঞানী পিটার গ্রে বলেন, ‘সকল স্তন্যপায়ী প্রাণীই তাদের শৈশবে খেলাধুলা করে। উদাহরণস্বরূপ, শিকারি প্রাণীরা বিভিন্ন প্রাণী বা বস্তু ধরার খেলা খেলে। লাফানো এবং পালানোর অনুশীলন করে।

এ বছরই জনপ্রিয় এই গেমটির থিম নিয়ে একটি সিনেমা মুক্তি পাবে।

গ্রে বলেন, “তাদের বেঁচে থাকার এবং শেষ পর্যন্ত সঙ্গীর সাথে মিলিত হওয়ার ক্ষমতার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতাগুলো তারা খেলার মাধ্যমে আয়ত্ত করে”

মানুষ অন্যান্য প্রাণীদের থেকে আলাদা, কারণ আমাদের বেঁচে থাকার অনেকটাই নির্ভর করে বস্তু তৈরির ক্ষমতার ওপর- কাদা দিয়ে তৈরি কুঁড়েঘর থেকে শুরু করে শিকার এবং সংগ্রহের সরঞ্জাম পর্যন্ত। “এটা আশ্চর্যজনক নয় যে প্রাকৃতিক নির্বাচন শিশুদের জিনিস তৈরির খেলায় শক্তিশালী প্রেরণা দিয়েছে,” বলেন গ্রে।

শিশুরা কথা বলা ও কল্পনাশক্তি ব্যবহার করে খেলাধুলা করে, অথবা এমন সব খেলা তৈরি করে যেখানে নিয়মকানুন থাকে এবং একে অপরের সাথে মেলামেশা করার সুযোগ থাকে। এগুলো তাদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি হিসেবে কাজ করে। তাদের হৃদয়ে থাকে – সবই যেন প্রাপ্তবয়স্ক জীবনের প্রস্তুতির অংশ।

গ্রে বলেন, খেলার সময় শিশুরা কী তৈরি করতে পছন্দ করে এবং কীভাবে তৈরি করে, তা সাধারণত তারা যে সংস্কৃতিতে বাস করে তার প্রতিফলন। তিনি বলেন, “আজ শিশুরা কম্পিউটারে খেলতে সত্যিই আকৃষ্ট হচ্ছে দেখে আমাদের মোটেই অবাক হওয়া উচিত নয় – এবং এটি আমাদের উদ্বিগ্নও করা উচিত নয়। আমি বলবো, শিশুরা তাদের হাড়ে, তাদের সহজাত প্রবৃত্তিতে জানে যে এই দক্ষতাগুলো তাদের বিকাশ করা দরকার।”

নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানী জুলিয়ান টোগেলিয়াস তার নিজের ছেলের মধ্যেও বিভিন্ন জিনিস তৈরির সহজাত প্রবণতা লক্ষ্য করেছেন, যদিও তার বয়স এখনও তিন বছর হয়নি। টোগেলিয়াস ব্যাখ্যা করেন, নার্সারিতে তার ছেলে খেলনা ট্রেন এবং ট্রাক চালানোর জন্য সুড়ঙ্গ তৈরি করতে শুরু করে। যখন তার ছেলে একটু বড় হবে, তখন কম্পিউটারও তার কাছে প্রিয় বস্তু হয়ে দাঁড়াতে পারে। টোগেলিয়াস বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, স্যান্ডবক্স গেমগুলো (যেমন মাইনক্রাফ্ট, যেখানে খেলোয়াড়দের কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছাড়াই তাদের সৃজনশীলতা অন্বেষণ করার স্বাধীনতা দেওয়া হয়) কম্পিউটারে কাজ করা এবং বিভিন্ন কিছু করা সহজ করে তোলে।

তিনি বলেন, “মাইনক্রাফ্টের জগতে সরাসরি এবং সহজভাবে কিছু তৈরি করা যায় । কোড লেখার চেয়ে এটি অনেক সহজ।”

অন্য কথায়, আগেকার দিনে কম্পিউটার শিশুদের নির্মাণের স্বাভাবিক ইচ্ছাকে বাধা দিত। কিন্তু এখনকার এই গেমগুলো সেই ইচ্ছাকে পূরণ করে।

শুধু যে জিনিস তৈরি করা যায়, তা-ই নয়, আরও অনেক কারণে মাইনক্রাফ্ট গেমটি আকর্ষণীয়। গেমের স্যান্ডবক্স মোডে খেলোয়াড়রা নিজেদের ইচ্ছেমতো জিনিস তৈরি করতে পারে। তবে, এখানে সার্ভাইভাল মোডও আছে, যেখানে শত্রুদের সাথে লড়াই করতে হয়। মিনোট্টি বলেন, এছাড়া এই গেমটি খেলার মাধ্যমে সামাজিক সম্পর্কও তৈরি হয়।

যখন তার বাচ্চারা তাদের বন্ধু বা চাচাতো-মামাতো ভাইদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করতে পারে না, তখন তারা অনলাইনে দেখা করতে পারে: “এটি একটি ভার্চুয়াল আড্ডার জায়গা হয়ে ওঠে।”

মাইনক্রাফ্টকে একটি ভার্চুয়াল খেলার মাঠ হিসেবে ভাবা যেতে পারে, যেখানে শিশুরা তাদের নিজস্ব স্থান খুঁজে নিতে পারে। কারণ এই গেমে বিভিন্ন ধরনের কার্যকলাপ এবং খেলার শৈলী বাছাই করার সুযোগ তাদের রয়েছে।

টোগেলিয়াস গবেষণা করেছেন- কীভাবে মাইনক্রাফ্টে গেমারদের আচরণ তাদের ব্যক্তিত্বের দিকগুলো প্রকাশ করে।

তিনি মনে করেন, মাইনক্রাফ্ট গেমে খেলোয়াড়দের নিজেদের মতো করে খেলার স্বাধীনতা দেওয়া হয়। ফলে, আর্কেড ক্লাসিক ‘অ্যাস্টেরয়েডস’ গেমের চেয়ে এই গেমে খেলোয়াড়রা নিজেদের ব্যক্তিত্ব ভালোভাবে প্রকাশ করতে পারে। ‘অ্যাস্টেরয়েডস’ গেমে খেলোয়াড়দের মহাকাশ থেকে আসা পাথরগুলোতে গুলি করতে হয়, যেখানে নিজেদের মতো করে কিছু করার সুযোগ খুব কম।

টোগেলিয়াস তার গবেষণার জন্য প্রাপ্তবয়স্কদের একটি প্রশ্নপত্র পূরণ করতে বলেন। এই প্রশ্নপত্র থেকে তাদের ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে কিছু ধারণা পাওয়া যায়। এরপর, তিনি প্রশ্নপত্রের উত্তরের সঙ্গে মাইনক্রাফ্ট খেলার ধরন তুলনা করেন। গবেষণায় দেখা যায়, মাইনক্রাফ্টে খেলার ধরনের ওপর উত্তরদাতাদের ব্যক্তিত্বের কিছু বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে মিল রয়েছে।

যদিও টোগেলিয়াস শিশুদের নিয়ে গবেষণা করেননি, তার ধারণা, বড়দের মতো শিশুদের ব্যক্তিত্বও গেমে প্রকাশ পায়। তার গবেষণায় তিনি দেখেছেন, মাইনক্রাফ্ট খেলোয়াড়রা সাধারণ মানুষের চেয়ে বেশি কৌতূহলী এবং তাদের মধ্যে প্রতিশোধ নেওয়ার প্রবণতা কম। অর্থাৎ, তারা নতুন জিনিস জানতে চায় এবং অন্যের ক্ষতি করার চেয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণে বেশি আগ্রহী

টেক্সাস টেক ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানী বেইলি ব্রাশিয়ার্স, যিনি মাইনক্রাফ্টকে মনস্তাত্ত্বিক গবেষণার কাজে কীভাবে ব্যবহার করা যায়, তা নিয়ে একটি গবেষণা পত্র প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, স্যান্ডবক্স গেমগুলোর (যেমন: মাইনক্রাফট) বিস্তৃত সুযোগের কারণে এটি অনেকের কাছেই জনপ্রিয়। ব্রাশিয়ার্স গেমটির পাঁচটি প্রধান দিক চিহ্নিত করেছেন:

১. সামাজিক দিক ( যেমন: অন্যদের নিয়ে একসাথে খেলা)

২. নিজের দক্ষতা প্রমাণের সুযোগ ( যেমন: যুদ্ধ বা অনুসন্ধান)

৩. প্রকৌশল ( যেমন: বিভিন্ন জিনিস তৈরি করা)

৪. সৃজনশীলতা ( যেমন: নতুন কিছু বানানো)

৫. টিকে থাকার চেষ্টা ( যেমন: বিপদ থেকে বাঁচা)

ব্রাশিয়ার্স বলেন, “সাধারণত একটি গেমে এই দিকগুলোর মধ্যে এক বা দুটি থাকে। যেমন, ফোর্টনাইট গেমটি মূলত সামাজিক খেলা এবং টিকে থাকার চেষ্টার উপর ভিত্তি করে তৈরি।”

শিশুরা মাইনক্রাফ্টে অনেক বেশি সময় কাটায়, যা তাদের অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম অভিভাবকদের উদ্বেগের কারণ। মেলিসা হোগেনবুমের একটি লেখায় স্ক্রিন টাইমের ভালো-মন্দ দিকগুলো আলোচনা করা হয়েছে।

মিনোট্টি বলেন, তার বাচ্চারা শুধু মাইনক্রাফ্ট খেলে না, তারা বাইরে বাস্কেটবলও খেলে। তবে, তিনি তাদের অতিরিক্ত ভিডিও গেম খেলা থেকে বিরত রাখেন এবং তাদের অনলাইন বন্ধুত্বের অনুরোধগুলো যাচাই করেন। তিনি বলেন, “আমরা তাদের ইন্টারনেটে অবাধে ছেড়ে দিই না।”

যুক্তরাজ্যের শিশুদের দাতব্য সংস্থা এনএসপিসিপি মাইনক্রাফ্ট খেলার সময় শিশুদের নিরাপত্তার জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছে। মাইনক্রাফ্টে শিশুদের ওপর নির্যাতন ও অপব্যবহারের মতো ঘটনা ঘটেছে। রোব্লক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের গেম প্ল্যাটফর্ম থেকে দূরে রাখতে বলেছেন। যদি তারা ক্ষতিকর কিছু দেখার ভয়ে থাকেন।

মিনোট্টি মনে করেন তার বাচ্চারা নিরাপদে মাইনক্রাফ্ট খেলতে পারে। কারণ তিনি তাদের ওপর নজর রাখেন। তিনি বলেন, এটি একটি ডিজিটাল খেলার মাঠের মতো। মাইনক্রাফ্টের মাধ্যমে মানুষ নতুন উপায়ে যোগাযোগ করতে পারে। কোভিড-১৯ এর সময় অধ্যাপকরা মাইনক্রাফ্টের মাধ্যমে অনলাইনে পড়িয়েছেন। আয়ারল্যান্ডের শিক্ষকরা মাইনক্রাফ্ট এডুকেশনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছেন।

শিক্ষার্থীদের গ্যেলিক ভাষা শেখার জন্য মাইনক্রাফ্টে একটি গেম তৈরি করা হয়েছিল। সেখানে রেস্টুরেন্ট ও খাবার তৈরি করে ভাষা শেখানো হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, মাইনক্রাফ্ট শিক্ষার্থীদের স্কুলের কাজে আগ্রহ বাড়ায়। মাইনক্রাফ্ট খেললে খেলোয়াড়রা গভীরভাবে মনোযোগী হয়। এটি তাদের মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে।

তবে, মাইনক্রাফ্ট সবার কাছে সমান জনপ্রিয় নয়। অস্ট্রেলিয়ায় একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা বেশি মাইনক্রাফ্ট খেলে। লেখকরা বলেন, ছেলে ও মেয়ে উভয়ের জন্য গেমগুলো আকর্ষণীয় হওয়া উচিত। কারণ, গেমগুলো শিশুদের ডিজিটাল দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে।

মিনোট্টি তার মেয়েদের কম্পিউটার দক্ষতা নিয়ে চিন্তিত নন। মাইনক্রাফ্ট তাদের পছন্দের খেলা। তাদের লেগো দিয়ে খেলার জায়গা নেই। তাই তারা মাইনক্রাফ্টে খেলে। তিনি বলেন, মাইনক্রাফ্টে তারা তাদের কল্পনার সব লেগো ব্লক ব্যবহার করতে পারে।

হিরো আলম বিদায়! নতুন হিরো রিপন মিয়া 

অসচ্ছল পরিবারের সন্তান রিপন মিয়া। তৃতীয় শ্রেণির পর আর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি। ২০১৬ সালে তার মনে বয়ে যায় ঝড়। কিশোর বয়সের প্রেমের সস্পর্ক ভেঙে যায়। আড়ালে চোখের পানি মুছেছে, কষ্টের কথা কাউকে বলতেও পারেন নি। তিনি বুঝলেন কাঠ মিস্ত্রির জীবনে প্রেম ‘অনেক দূরে’ । খুব বেদনায় কাটছিল সেসময়ের দিনগুলো।

মনের কষ্ট দূর করতে মানুষ কতো কি না করে। কিন্তু রিপন কিছুই ভেবে পায়না। যতোক্ষণ কাঠ মিস্ত্রির কাজ করতেন, ততক্ষণ সেসব ভুলে থাকতেন। কিন্তু এরপর কষ্টের অন্ধকার যেন তার মনজুড়ে জেঁকে বসতো।

কষ্ট ভুলতে ক্যামেরা সামনে এসে কথা বলতে শুরু করেন রিপন। সেই ভিডিও দেখে কিছুটা হলেও মনটা ভালো হয় রিপন। এরপর রিপন বেছে নেন ভিডিও বানানো।

রিপন মিয়ার ভিডিওগুলো মূলত ছন্দে ছন্দে বলা এক-দুই লাইনের কবিতা, যদিও এর আগে কখনও কবিতা চর্চা করেননি তিনি।

প্রথম ভিডিওটিতে তিনি তার প্রিয়জনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “বন্ধু তিনি একা হলে আমায় দিও ডাক, তোমার সঙ্গে গল্প করব আমি সারারাত।”

ভিডিওটি শেষ হয়- তার স্বভাবসুলভ হাসি এবং বিখ্যাত ক্যাচ ফ্রেজ ‘আই লাভ ইউ’ বলে।

রিপনের এই ছোট্ট ছন্দময় বাক্যটি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, উৎসাহ পেয়ে আরও এমন ভিডিও বানাতে শুরু করেন তিনি।

সেসময়ের ভিডিওতে রিপন বলতেন, “হাই ফ্রেন্ডস, আমি রিপন ভিডিও”, “বন্ধু তুমি পাখি হলে, আমি হব নীড়”, “তোমার আমার প্রেম দেখতে লেগে যাবে ভিড়” ইত্যাদি।

নেত্রকোনার রিপন মিয়া, পেশায় কাঠমিস্ত্রি। কাজের ফাঁকে ফাঁকে এভাবে ভিডিও বানিয়ে সোশাল মিডিয়ায় প্রচার করতে থাকেন। কিন্তু একদিন একটি ভিডিও জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় রিপনের।

গত বছরে অটোপাশের দাবি নিয়ে রাস্তায় আন্দোলন করছিলেন এইচএসসি পরীক্ষার্থীরাও। তাদের উদ্দেশ্যে ফেসবুকে একটি ভিডিও ছাড়েন রিপন মিয়া।

ভিডিওতে বলেন, “যারা এইচএসসি পরীক্ষা দিতে চাইতাছো না, তারা আমার কাছে চলে আসো কাঠমিস্ত্রির কাম হিকাইদিতাম, দৈনিক ৫০০ টাকা রোজ পাইবা, নেট এন্ড ক্লিয়ার, হাহাহা…. এটাই বাস্তব।”

শিক্ষার্থীদের সেই সময়ের অযৌক্তিক এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রিপন মিয়ার কথা যথেষ্ট যুক্তিসংগত মনে হয়েছিল দর্শকদের। হু হু করে ডিডিওর দর্শক বাড়ে। সেই সঙ্গে রিপন মিয়ার ফলোয়ার বেড়ে যায়।

গত কয়েক মাসে রিপন মিয়া তার বাস্তবধর্মী ও জীবনমুখী কথাবার্তার কারণে নেটিজেনদের কাছে আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছেন।

কাঠমিস্ত্রির কাজ করতে করতে গ্রীষ্মের তপ্ত রোদে ঘাম ঝরানো, উদ্দেশ্যহীন ঘোরাঘুরি, সাইকেল চালিয়ে কাজে যাওয়া, নিজের রান্না করা খাবার পরিবেশন কিংবা মজার ছলে ইংরেজি সংবাদপত্র পড়ার ভান করার মতো সাধারণ দৃশ্যগুলোই তার ভিডিওর মূল বিষয়বস্তু।

কোনো জাঁকজমক কিংবা ‘স্পেশাল অ্যাফেক্ট’ নেই তার ভিডিও ও রিলসে। কিন্তু তারপরও এ সরল জীবনচিত্র দর্শকদের মন জয় করেছে। গত দুই মাসে তার ভিডিওগুলো ২ কোটি বারেরও বেশি দেখা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রয়েছে তার এক মিলিয়নেরও বেশি অনুসারী।

কোটি কোটি ভিউ, মিলিয়ন ফলোয়ার থাকার পরও সোশাল মিডিয়া থেকে সেভাবে অর্থ উপার্জন করতে পারেন নি রিমন মিয়া। একের পর এক হ্যাক হয়েছে তার অনেকগুলো চ্যানেলে।

রিমন মিয়া বলেন, “লোকেরা আমার কনটেন্ট দিয়ে প্রচুর টাকা বানিয়েছে, কিন্তু আমি এক টাকাও উপার্জন করতে পারলাম না। আমি এখনও একটি জরাজীর্ণ বাড়িতেই থাকি, বাড়ির ভেতর দিয়ে কুকুর হাঁটাচলা করে।”

অনেকবার ঠকে যাওয়া পর একজন মিডিয়া ম্যানেজারের সাথে পরিচয় হয় রিপন মিয়ার, যিনি তাকে আবার নতুন করে ঘুরে দাড়াতে সাহায্য করছেন।

দুজন মিলে এখন পঞ্চাশ-পঞ্চাশ ভাগে লাভ ভাগাভাগি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো পরিচালনা করছেন।

নাম প্রকাশ করতে না চাওয়া ওই ম্যানেজার বলেন, “রিপন ভাই খুবই সহজ সরল মানুষ। মানুষ তার কাছে এসেছিল, কথা বলেছিল, আর কোনোভাবে তার পেজগুলো হ্যাক করে ফেলেছিল, যেগুলোতে ছিল মিলিয়নেরও বেশি অনুসারী।”

রিপন মিয়া এখন বেশ কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেল পরিচালনা করেন। ফেসবুকে তার বর্তমানে পেজ দুটি—’খাদক রিপন’ এবং ‘রিপন মিয়া’। ইউটিউব, টিকটক, ইনস্টাগ্রামে তার এক মিলিয়নেরও বেশি অনুসারী হয়েছে।

কিছুদিন হলো, রিপন ও তার ম্যানেজার চ্যানেলগুলো থেকে আয় করা শুরু করতে পেরেছেন।

খ্যাতি এবং কিছু টাকা আসলেও, রিপন এখনও তার গ্রামীণ কাঠমিস্ত্রির জীবনকেই বেশি উপভোগ করেন। তার ভাষ্যে, আমরা গ্রামের মানুষ, কাজ ছাড়া থাকতে পারি না।

রিপন মিয়া এখন পুরোদমে কাঠমিস্ত্রি এবং সেই কাজের ভিডিওই তৈরি করেন। তিনি এখন যেমন আছেন, যেভাবে কাজ করেন, খাওয়া-দাওয়া করেন, ঘুরেন- এসব নিয়ে ভিডিও বানান।

এক ফেসবুক রিল ভিডিওতে রিপন বলেন, “আমি গরমে কাজ করছি। যারা পড়াশোনা করেছে কিন্তু চাকরি পায় না, তারা আমার সাথে যোগাযোগ করুক। আমি তাদের ব্যবসা শিখিয়ে দেব, আর তারা দিনে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা উপার্জন করতে পারবে।”

ভিডিও শেষ করেন তার পরিচিত হাসি আর ‘এটাই বাস্তব’ বলে।

আরেকটি ভিডিওতে তাকে গরমে রান্না করতে দেখা যায়। আঞ্চলিক ভাষায় তিনি বলেন, “আমাদের মা-বোনেরা এমন কষ্টে রান্না করেন, কিন্তু আমরা তাদের কষ্ট বুঝতে চাই না। একটি ভিডিওতে তাকে চশমা পরে সাইকেল চালিয়ে যৌতুক বিরোধী ক্যাম্পেইন চালাতেও দেখা যায়।”

গত বছরের জুন মাসে পিএসসি ড্রাইভার আবেদ আলীর অবৈধ সম্পদের খবর দেশজুড়ে আলোচনা তৈরি করে। রিপন এনিয়ে একটি ভিডিওতে বলেন, “আবেদ আলীর মতো আমিও ড্রাইভার হতে চাই, কিন্তু তোমার মনের, আই লাভ ইউ।”

যখন এক ইসলামি বক্তা ‘মেসেজ ড্রপ’ শব্দটি অদ্ভুতভাবে ব্যবহার করে ভাইরাল হন, রিপন তাকে অনুসরণ করে তার চিরচেনা হাসি দিয়ে বলেন, “সকাল সকাল তোমাকে একটা মেসেজ ড্রপ করতে চাই— আই লাভ ইউ।”

পুরোনো কিছু ভিডিওতে কিছু আপত্তিকর বা অশালীন শব্দ চোখে পড়তে পারে। তবে সময়ের সঙ্গে রিপন মিয়া নিজেকে পরিবর্তন করেছেন এবং আরও পরিণত হয়েছেন, যা তাকে আরও বেশি দর্শকের মনোযোগ এনে দিয়েছে।

দাঁড়িয়ে পানি পান করা কতটা বিপদের?

পানির অপর নাম জীবন। চিকিৎসকরা শরীরে পানির ভারসাম্য রক্ষার ব্যাপারে নজর রাখার পরামর্শ দেন। একটা প্রচলিত ধারণা যে, দাঁড়িয়ে পানি পান করলে নাকি দেহের জয়েন্টগুলোতে প্রভাব পড়তে পারে এবং ব্যথা হতে পারে।

প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বলা হয়ে আসছে যে, দাঁড়িয়ে নয় পানি পান করতে হবে বসে। কিন্তু এই প্রচিলত ধারনার পিছনে কি আদৌ কোনও বিজ্ঞান আছে? নাকি সবটাই অলীক কল্পনা!

ভারতের ডায়েটিশিয়ান জুহি অরোরা সদ্য একটি রিল শেয়ার করে এই বিষয়ে কথা বলেছেন। তার মতে, এটি আসলে একটি গুজব। ভিডিওতে জুহি বলেছেন, “যদিও এই গুজবগুলো প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ঘুরপাক খাচ্ছে, এর পিছনে কোনও বৈজ্ঞানিক যুক্তি নেই।”

তার মতে “আমরা পানি পান করি, তা খাদ্যনালী দিয়ে পাকস্থলীতে যায়। দাঁড়িয়ে জল পান করলে হাঁটুর উপর প্রভাব পড়তে পারে, এই ধারনাটিতে বাস্তবতার চেয়ে মিথের প্রভাব বেশি। দাঁড়িয়ে পানি পান করলে হাঁটুর স্বাস্থ্যের উপর সরাসরি প্রভাব পড়ে, এমন কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। তবে, মানুষের বিশ্বাস দাঁড়িয়ে পানি পান করলে তা খুব দ্রুত পেটে শোষিত হতে পারে, যা অস্বস্তি বা বদহজমের কারণ হতে পারে। কিন্তু এটি কোনওভাবে হাঁটুর স্বাস্থ্যের সাথে সম্পর্কিত নয়।”

কিছুদিন আগে এক সাক্ষাৎকারে, ভারতের দিল্লির অ্যাপোলো স্পেকট্রারের জেনারেল ফিজিশিয়ান ডাঃ বিপুল রাস্তোগি বলেছিলেন, “দাঁড়িয়ে পানি পান করা ক্ষতিকর।”

তার মতে “আমরা যখন দাঁড়িয়ে পানি পান করি, তখন তা দ্রুত খাদ্যনালীতে প্রবেশ করে এবং তারপর পেটে গিয়ে হজম প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটায়। এরফলে স্নায়ুগুলির ওপর চাপ পড়ে। যা দেহে তরল পদার্থের ভারসাম্য নষ্ট করে। এর প্রভাবে সময়ের সঙ্গে জয়েন্টগুলিতে তরল জমা হতে পারে, যার ফলে আর্থ্রাইটিসের মতো রোগ বাঁধতে পারে শরীরে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা যখন দাঁড়িয়ে পানি পান করি, তখন প্রয়োজনীয় পুষ্টি এবং ভিটামিন পরিপাকতন্ত্রে পৌঁছয় না। দাঁড়িয়ে পানি পানের সময়, উচ্চ চাপে তরল পদার্থটি কোনও পরিস্রাবণ ছাড়াই পেটের নীচের অংশে চলে যায়। এর ফলে অতিরিক্ত পানি মূত্রাশয়ে জমা হয় এবং কিডনির কার্যকারিতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”

ঘিবলি ট্রেন্ড কেন এত জনপ্রিয়?

ইন্টারনেটে নতুন উন্মাদনা ঘিবলি-তে নিজেদের ছবি রূপান্তরিত করছেন অভিনেতা এবং ক্রীড়া তারকা থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ পর্যন্ত। এই প্রবণতা সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে, এতটাই জনপ্রিয় হয়েছে যে এমনকি ওপেনএআই-এর সিইও স্যাম অল্টম্যানও ব্যবহারকারীদের ধীরে চলার জন্য রসিকতার সাথে অনুরোধ করেছেন, কারণ তার দলেরও তো ঘুমের প্রয়োজন! রাতারাতি ঘিবলি’র ট্রেন্ড হয়ে ওঠার পেছনে রয়েছে কিছু মনস্তাত্বিক কারণ।

শৈশবের স্মৃতি যেন সব সময়ই আমাদের কাছে এক সুখানুভূতির উৎস। জাপানি স্টুডিও ঘিবলির জনপ্রিয় চলচ্চিত্র— মাই নেবার টোটোরো, স্পিরিটেড অ্যাওয়ে, কি-কির ডেলিভারি সার্ভিস— বহু মানুষের শৈশবের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। এই চলচ্চিত্রগুলো কেবল বিনোদন নয়, বরং এক রকম আবেগঘন অনুভূতি, যা মানুষকে ফিরিয়ে নেয় নির্ভার শৈশবে। তাই যখন কেউ নিজের জীবনের মুহূর্তগুলোকে ঘিবলি-শৈলীতে উপস্থাপন করেন, তখন তা যেন এক মিষ্টি স্মৃতির জানালা খুলে দেয়।

এস্কেপিজম বা বাস্তবতা থেকে সাময়িক মুক্তি পাওয়া মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। ব্যস্ত নগরজীবন, দায়িত্বের ভার আর প্রযুক্তিনির্ভর যান্ত্রিক জীবন থেকে সামান্য অবসর চায় সবাই। স্টুডিও ঘিবলির চলচ্চিত্রগুলোতে প্রকৃতির স্নিগ্ধতা, জাদুকরী কল্পনা আর সহজ-সরল জীবনের যে রূপায়ণ দেখা যায়, তা আমাদের মনে প্রশান্তির অনুভূতি এনে দেয়। ঘিবলি ট্রেন্ড সেই স্বপ্নময় দুনিয়াকে বাস্তব জীবনে নিয়ে আসার এক প্রচেষ্টা।

চোখের আরামদায়ক রঙ, সূক্ষ্ম আলো-ছায়ার বিন্যাস, আর কল্পনার সঙ্গে বাস্তবের এক অপূর্ব সংমিশ্রণ— ঘিবলি-শৈলীর মূল বৈশিষ্ট্য। মানুষের মন এমন নান্দনিক উপস্থাপনায় সহজেই আকৃষ্ট হয়। নরম রঙের আলো, প্রকৃতির স্নিগ্ধতা, আর গল্পের মতো সাজানো দৃশ্য আমাদের মস্তিষ্কে এক ধরনের প্রশান্তি সৃষ্টি করে। তাই সামাজিক মাধ্যমে যখন কেউ নিজের জীবনের সাধারণ মুহূর্তগুলোকেও এই শৈলীতে রূপান্তরিত করে, তখন তা দর্শকদের হৃদয়ে অনুরণন তোলে।

যেকোনো সামাজিক মাধ্যমের প্রবণতা তখনই জনপ্রিয় হয়, যখন মানুষ তা অনুকরণ করতে শুরু করে। ঘিবলি ট্রেন্ডের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই ঘটেছে। মানুষ যখন দেখে যে, সাধারণ কোনো দৃশ্যকেও ঘিবলি-শৈলীর মাধ্যমে মোহনীয় করে তোলা যায়, তখন তারাও একই কাজ করতে চায়। ফলে একের পর এক ভিডিও তৈরি হতে থাকে, যা মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে।

কখনও ভেবেছেন এই প্রবণতাকে জনপ্রিয় করে তোলার পেছনে কার বড় ভূমিকা ছিল? সিয়াটলের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার গ্রান্ট স্ল্যাটন, অজান্তেই এই ‘ঘিবলি-রূপান্তরিত’ ক্রেজকে জ্বালানি জুগিয়েছিলেন। টাইমস অব ইন্ডিয়া তাদের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করেছে।

গত সপ্তাহে, ওপেনএআই নতুন ইমেজ-জেনারেটিং টুল চালু করে এবং স্ল্যাটন এটি নিয়ে পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি এক্স (পূর্বে টুইটার) এ সমুদ্র সৈকতে তার পরিবার এবং কুকুরের স্টুডিও ঘিবলি-শৈলীর এআই দিয়ে তৈরি ছবি শেয়ার করেন। তার ক্যাপশন ছিল- “আপনার স্ত্রীর কাছে আপনাদের ছবি স্টুডিও ঘিবলি অ্যানিমের মতো বানিয়ে পাঠানোর বিষয়টা এখন খুব ‘আলফা’ (নতুন প্রজন্মের ট্রেন্ড বা জনপ্রিয়তা বোঝাতে)।”

ব্যবহারকারীদের মধ্যে সাড়া ফেলে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পোস্টটি ৪২ হাজার লাইক এবং প্রায় ২ কোটি ৭০ লাখ ভিউ পায়। আর এর ফলেই ঘিবলি-অনুপ্রাণিত ছবি সম্পাদনার ঢেউ তৈরি হয়।

যদিও স্ল্যাটন এই টুল ব্যবহারকারী প্রথম ব্যক্তি ছিলেন না, তবে তার ভাইরাল পোস্টটি এই প্রবণতাকে সবচেয়ে বড় ধাক্কা দেয়, যা বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে।

ইচ্ছে করলে সমুদ্র নিচে মানুষ বসতি গড়তে পারে?

সমুদ্রের নিচে টানা ১২০ দিন কাটিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন জার্মানির এক ইঞ্জিনিয়ার। ইচ্ছে করলে মানুষ সমুদ্রের নিচে থাকতে পারে, গড়তে পারে বসতিও-  এমনই অভিজ্ঞাতা হয়েছে এই গড়ে উঠতে পারে- এমন অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন জার্মান এই নাগরিক।

রুডিগার কোচ। বয়স ৫৯। পেশায় মহাকাশ ইঞ্জিনিয়ার। ৩০ বর্গমিটার সমুদ্রের নিচে একটি ডুবোজাহাজের কক্ষে  (ক্যাপসুল) টানা ১২০ দিন ছিলেন। 

পানামা উপকূল থেকে ১৫ মিনিট দূরত্বে থাকা ক্যাপসুল থেকে দেখেন এক অন্য পৃথিবীকে। পানির নিচের পৃথিবী, যেখানে সবকিছু শান্ত, সবকিছু নিজেদের মতো করে বেঁচে আছে। 

৩০ বর্গমিটার, সমুদ্রের অনেক নিচে। কীভাবে আলো, খাবার পৌঁছত সেখানে? 

সবটাই হয়েছে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে। ১২০ দিনের প্রতিটি দিন  এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বাঁচতে সাহায্য করেছে সৌর বিদ্যুত। অত্যাধুনিক সব ব্যবস্থা ছিল ওই ক্যাপসুলে। টয়লেট, টিভি, কম্পিউটার। কোনও সমস্যা হয়নি রুডিগার। ছিল এক্সারসাইজ করার সাইকেল। ফলে শরীরচর্চাও হয়েছে।

এর আগে এই রেকর্ড ছিল আমেরিকার জোসেফ ডিটুরির। তিনি ১০০ দিন ডুবোজাহাজে থেকেছেন টানা। সেই রেকর্ডই নতুন বছরে ভাঙলেন রুডিগার। কেমন ছিল অভিজ্ঞতা? 

রুডিগারের কথায়, “দারুণ অ্যাডভেঞ্চার। ভীষণভাবে উপভোগ করেছি। বের হওয়ার সময় মন খারাপই হচ্ছিল।”

তিনি আরও বলেন, “এই অভিজ্ঞতার ফলে যা বুঝলাম পানির নিচে ইচ্ছে করলে মানুষ থাকতে পারে। সেখানেও বসতি গড়ে উঠতে পারে। খুবই শান্ত জায়গা। সাগরের রূপ সেখানে অনেকটা আলাদা। রাতে ঝলমল করে উঠত সবকিছু।”

গার্ডিয়ান অবলম্বনে

আয়কর রিটার্ন ভুল হলে সমাধান আছে আইনেই

আয়কর রিটার্ন ভুল হলে সমাধান আছে আইনেই

মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন

আয়কর রিটার্ন দাখিল করাকে অনেকে ঝামেলার কাজ মনে করেন। এই ঝামেলা মনে করার কারণ নানাবিধ। কেউ মনে করেন তিনি আয় করেন, সরকারকে ট্যাক্স দিয়ে দেন, এটাই যথেষ্ট, আবার রিটার্ন দেবেন কেন? এটা কেউ বুঝে বলেন কিনা তাও বোঝা যায় না, কেউ একেবারেই না বুঝে বলেন, কেউ বা বলেন ধারণা থেকে। এই বলাবলির শেষ হয়তো হবে না, কিন্তু তার বা তাহাদের বা নাগরিকদের শেষ পরিণতি হলো আয়, ব্যয় ও সম্পত্তির হিসাব এনবিআর-এ জমা দিতে হয়। কারণ রীতিতে আছে, দুনিয়ার অন্যান্য দেশে আছে, আমাদের দেশে আইনেও আছে। নাগরিক হিসেবে আইন না মানলে আর্থিক দণ্ড হওয়ার যেমন ভয় আছে, তেমনি জেলও খাটার ভয় আছে।

এসব দলিলি, বেদলিলি আলোচনা যখন বাজারে চলমান থাকে, এর মাঝে আরেক দল নাগরিককে হা-হুতাশ করতে থাকে, তার রিটার্ন ভুল হয়ে গেছে! এখন কী করবেন? কর অফিসে গেলেই বুঝি একঝাঁক বকা আর কেরানির ঘুতঘুতানি শুনতে হবে। কেউ বা মনে মনে ধরেই নিয়েছে অফিসে গেলেই কেউ একজন টেবিলের নিচ দিয়ে হাত দিয়ে বলবেন কিছু দিয়ে দেন ঠিক করে দেবেন, বা কেউ হেসে বলবে চা খাবার পয়সা দেন ঠিক করে দিচ্ছি। কেউ বলবেন, “আরে আল্লাহ! আপনি বিশাল ভুল করেছেন! আপনার বড় অঙ্কের জরিমানা হবে!” এসব হতাশা ও মুখরোচক বা অপ্রিয় কথাগুলো করদাতা শুনেন প্রতিনিয়ত, এমনটা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

আচ্ছা ধরে নিলাম আপনি আয়কর রিটার্ন নিজে নিজে করেন। আপনি একজন করদাতা যখন নিজেই রিটার্ন দাখিল করার উদ্যোগ নেবেন, বা নিয়েছেন, এই জন্য আপনাকে এই অধমের পক্ষ থেকে প্রথমেই আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। কারণ আপনি একজন গর্বিত করদাতাই শুধু নয়, আপনি একজন সচেতন নাগরিকও বটে। অধিকতর সচেতন মানুষেরাই নিজের কাজ নিজে করেন। এই জন্যে আপনি নিজের আয়-ব্যয় ও সম্পত্তির হিসাব সরকারকে দিতে উদ্যোগ নিয়েছেন বা নিজেই দিয়ে থাকেন। হ্যাঁ, সবাই সমানভাবে পারবেন এমনটা কখনও চিন্তা করা ঠিক না। ভুল হতেই পারে। ভুল যেখানে, সমাধানও সেখানে আছে।

একজন দাতা সাধারণত নিজে নিজে ফাইল করতে গিয়ে যে ভুলগুলো করে থাকেন: একাধিক খাতের আয় থাকলে সব খাতের আয় যথাযথভাবে উপস্থাপন করেন না, সম্পত্তির হিসাব সঠিকভাবে লিখেন না, কোন সম্পত্তি ক্রয় বা বিক্রি থাকলে তা সঠিকভাবে উপস্থাপন করেন না, বিগত বছরের জের টানতে ভুল করেন, বিগত বছরের নিট সম্পত্তি চলতি বছরে লেখতে ভুল করেন, আর্থিক পরিসম্পদ থেকে আয়গুলো যথাসময়ে হিসাবভুক্ত করেন না, পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করার অর্থ প্রদর্শন করেন না, আগের জমি বা প্লট বা ফ্ল্যাট বিক্রির অর্থ যথাযথভাবে উপস্থাপন করেন না বা কোনও নিকট আত্মীয় থেকে প্রাপ্ত দান প্রদর্শন করতে ভুলে যান ইত্যাদি। কিন্তু রিটার্ন জমা দেওয়ার পর তার কাছে মনে হলো তিনি এই ভুলগুলোর মধ্যে কোনও না কোনও ভুল করেছেন।

রিটার্ন নিজের কাছে ধরার সাথেই যে কাজটি করবেন: আপনার জমা দেওয়া রিটার্ন পরবর্তীতে ভুল হয়েছে এমন মনে হলে একজন নিয়মিত কর-আইনজীবীর সহায়তা নিতে পারেন বা আপনার চেয়েও ভালো জানেন এমন কোনও একজন সহকর্মী, বন্ধু বা পরিচিতজনকে অনুরোধ করতে পারেন, আপনি যা ভুল মনে করছেন, তা ভুল কিনা। যদি সত্যিই ভুল হয়েই থাকে, তাহলে কোনও রকম ভয়-ডর ছাড়াই আপনি সংশোধনী রিটার্ন দাখিল করতে পারেন। এই সংশোধনী রিটার্ন যেকোনও সময় দাখিল করা যায়। তবে আইনে আছে ৬ মাসের মধ্যে কোনও দরখাস্ত করতে হবে না। এই সময়ের মধ্যে আপনি যখনই মনে করবেন আপনার রিটার্ন ভুল হয়েছে, তখনই সংশোধনী রিটার্ন জমা দিবেন। ছয় মাস অতিবাহিত হলে আপনার সার্কেলের উপ-কর কমিশনার বরাবর একটা দরখাস্ত করে আপনি স্ব-উদ্যোগে সংশোধনী রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন। এই জন্যে অহেতুক কোনও চিন্তা করা থেকে বিরত থাকলেই যথেষ্ট।

সংশোধনী রিটার্ন সম্পর্কে আইনে যে সমাধান আছে: আয়কর আইন ২০২৩ এর ১৭৫ ধারা মোতাবেক “সাধারণ রিটার্ন”-এর ক্ষেত্রে সংশোধনী রিটার্ন দাখিল করা যাবে। (১) ধারা ১৬৬ বা ২১২ অনুসারে “সাধারণ রিটার্ন” দাখিলের পর রিটার্নে কোনও উপেক্ষিত বা অশুদ্ধ বিবৃতি পরিলক্ষিত হলে, কোনও প্রকার করদায় হ্রাস না করে, সংশোধনী রিটার্ন দাখিল করা যাবে। যে ক্ষেত্রে কর নির্ধারণ সম্পন্ন হয়নি, সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট করবর্ষের কর নির্ধারণী আদেশে প্রণয়নের সর্বশেষ তারিখের অন্তত ৬ (ছয়) মাস পূর্বে অথবা প্রথমবার ধার্যকৃত শুনানির তারিখের পূর্বে, যা আগে ঘটবে, সংশোধনী রিটার্ন দাখিল করতে হবে। (২) রিটার্ন বা সংশোধনী রিটার্নটি অসম্পূর্ণ বলা হলে, উপ-কর কমিশনার, কারণ উল্লেখপূর্বক, করদাতার নিকট সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি যাচাইকরণ, বিবৃতি বা দলিলাদি নোটিশে উল্লেখিত সময়ের মধ্যে দাখিল করার জন্য নোটিশ প্রদান করবেন। (৩) কোনও করদাতা উপ-ধারা (২)-এর অধীনে প্রদত্ত নোটিশ সম্পূর্ণরূপে অনুসরণ করতে ব্যর্থ হলে, রিটার্ন বা সংশোধনী রিটার্ন যা অসম্পূর্ণ বলা হয়েছিল তা বাতিল বা অবৈধভাবে বিবেচিত হবে।

এছাড়া সংশোধিত রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে “আয়কর আইন ২০২৩-এর ধারা ১৮০-এর উপ-ধারা ২ দফা-গ অনুযায়ী যদি আইনের অধীন প্রদেয় কর সঠিকভাবে পরিগণিত না হয় বা সঠিক পরিশোধিত না হয়, তাহলে করদাতা একটি লিখিত বিবৃতিতে কারণ উল্লেখপূর্বক সংশোধিত রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন।”

করদাতাগণকে সতর্ক থাকতে হবে যেন আয়কর রিটার্নে ইচ্ছাকৃত কোনও ভুল তথ্য বা অতিরিক্ত কাগজপত্রাদি সংযুক্ত করা না হয়। এতে সংশ্লিষ্ট কর-কর্মকর্তারা অহেতুক বিবর্তন হন এবং করদাতাকে ভুল বুঝতে পারেন। সরল বিশ্বাসে ভুল হলে সংশোধন করা যায়। কিন্তু ইচ্ছাকৃত কোনও তথ্য গোপন করা বা ভুল তথ্য উপস্থাপন কাম্য নয়, বরং এতে আইনি জটিলতা বৃদ্ধি পায়। আসুন আইন জানি, সতর্ক থাকি এবং আইনি সুরক্ষার সুযোগগুলো গ্রহণ করি।

মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন: আইনজীবী, ঢাকা।

একটি পক্ষপাতহীন, দক্ষ বিশ্ব চাই নারীর জন্য

একটি পক্ষপাতহীন, দক্ষ বিশ্ব চাই নারীর জন্য

সুপ্রীতি ধর

জাতিসংঘের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ২০২২ সালের ঘোষণায় লিঙ্গবৈষম্যহীন একটি বিশ্ব কল্পনা করতে বলা হয়েছিল যেখানে থাকবে না কোন ধরনের পক্ষপাত, স্টেরিওটাইপ এবং বৈষম্য, বিশ্ব হবে বৈচিত্র্যময়, সমতাপূর্ণ এবং সবার সমান অন্তর্ভুক্তি যেখানে নিশ্চিত হবে, যে বিশ্বে ভিন্নতা, পার্থক্যকে মূল্যায়ন করা হবে, উদযাপন করা হবে। বলা হয়েছিল, রুখে দাও ‘পক্ষপাত’, সমতাপূর্ণ বিশ্বের এই হোক মূলমন্ত্র।

আবার ২০২৩ সালে বলা হয়েছে, জেন্ডার সমতার লক্ষ্যে উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি। সারাবিশ্বে এই খাতে নারীর অংশগ্রহণ শতকরা মাত্র ২২ ভাগ বলেই নারীকে উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় শামিল করাই ছিল এই উদ্যোগের লক্ষ্য।

ঠিক এর পরের বছরই নারীর প্রতি বিনিয়োগ বাড়ানোর কথা বলা হলো যেন উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়।

মূলত প্রতিটি ঘোষণা এবং উদ্যোগই নারীর ক্ষমতায়ণ ও অগ্রগতি সাধনের লক্ষ্যে। কোন সন্দেহ নেই এতে। একসাথে মিলে আমরাই পারি নারীর জন্য সমতাপূর্ণ এমন একটি বিশ্ব তৈরি করতে। এবং সবাই মিলেই এই পক্ষপাতদুষ্ট সিস্টেমকে বদলে দিতে।

স্বতঃস্ফূর্ত হোক অথবা অসচেতনতার কারণেই হোক, পক্ষপাত যে কাউকে, বিশেষ করে নারীর সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথটাকে কঠিন করে তোলে, কখনও কখনও তা অতিক্রম করা অসম্ভব হয়ে উঠে নারীর জন্য, সেই প্রতিবন্ধকতাগুলোকে চিহ্নিত করে উপড়ে ফেলতে না পারলে আমরা মুখে যতোই নারীর অগ্রযাত্রা আর সাম্যের গান গাই না কেন, খুব বেশিদূর নারীর পক্ষে হাঁটা সম্ভব হয় না। সমাজে, রাষ্ট্রে বৈষম্য, পক্ষপাত আছে, এটা জানাও বড় কথা নয়, একটা লেভেল-প্লেয়িং ফিল্ড গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতেই হবে, এর বিকল্প নেই আর।

আমরা আমাদের কর্মক্ষেত্রগুলোতে প্রতিদিনই নানারকম পক্ষপাতের মুখোমুখি হচ্ছি, প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছি, কখনও কখনও রুখে দাঁড়ালেও সম্মিলিত প্রয়াসের অভাবে তা মূলত কাজে আসে না, উপরন্তু চাকরিচ্যুতি থেকে শুরু করে নানারকম হয়রানির শিকার হতে হয় আমাদের। তাই সংঘবদ্ধ হওয়ার কোন বিকল্প নেই। তথ্য প্রযুক্তির এই বিকাশমান ধারায় নারীর এগিয়ে যাওয়ার বিকল্পও নেই। নারী এগিয়ে যাচ্ছেও। যদিও সেই সংখ্যাটা আনুপাতিক হারে এখনও তেমন উল্লেখযোগ্য নয়।

আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো প্রতিনিয়তই এই সংঘবদ্ধ হয়ে কাজ করাকে উৎসাহিত করে যাচ্ছে। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে তাদের কার্যক্রম আছে। তারপরও কেন নারীদের সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ এতোটা পক্ষপাতদুষ্ট?  এমনকি ছোটবেলা থেকে স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব পক্ষপাতের সম্মুখীন আমরা হই, তার প্রতিও সরব হওয়া প্রয়োজন থাকলেও কেন আমরা তা পারছি না?

পথ একটাই সামনে। নারীর অর্জনকে উদযাপন করা জানতে হবে, করতে হবে। যেকোনো ধরনের পক্ষপাত ও বৈষম্যমূলক আচরণের বিরোধিতা করতে হবে, সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। সমতাপূর্ণ বিশ্ব তৈরির লক্ষ্যে কাজ করে যেতে হবে, পদক্ষেপ নিতে হবে। এভাবেই একদিন পক্ষপাতের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়তে বাধ্য।

সুপ্রীতি ধর, সাংবাদিক, লেখক এবং অধিকারকর্মী

স্থানীয় সরকার: একটি সহজিয়া ভাবনা

স্থানীয় সরকার: একটি সহজিয়া ভাবনা

মুক্তাদীর আহমদ মুক্তা

স্থানীয় সরকার নিয়ে বাংলাদেশে অনেক জ্ঞানগর্ভ আলোচনা ও বিশ্লেষণ দেখা যায়। অথচ দেশের সংবিধানে ‘স্থানীয় সরকার’ বলতে কোনো শব্দই নেই। বাংলাদেশের সংবিধানে স্থানীয় সরকার ধারণাকে ‘স্থানীয় শাসন’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সংবিধানের চতুর্থ ভাগের তৃতীয় পরিচ্ছদে স্থানীয় শাসন শিরোনামে ৫৯ (১) ধারায় বলা হয়েছে ‘আইনানুযায়ী নির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানসমূহের উপর প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক প্রশাসনিক এককাংশের স্থানীয় শাসনের ভার প্রদান করা’।

এখন কথা হচ্ছে প্রত্যেক প্রশাসনিক এককাংশ বলতে আমরা কি বুঝি। পাণ্ডিত্যপূর্ণ আলোচনায় না গিয়ে সরলভাবে যদি বলতে হয় আমাদের বিদ্যমান বিভাগীয় পর্যায়, জেলা পর্যায়, উপজেলা পর্যায়, ইউনিয়ন পর্যায় একেকটি প্রশাসনিক ইউনিট। একেকটি প্রশাসনিক একাংশ। বিদ্যমান ব্যবস্থায় এই প্রশাসনিক ইউনিটগুলোতে কি সংবিধান অনুযায়ী ‘নির্বাচিত ব্যক্তিদের’ কোনো কর্তৃত্ব তো দূরের কথা উপস্থিতি জানানোর সুযোগ রয়েছে।

আমাদের রাষ্ট্রের বিদ্যমান ব্যবস্থা অনুযায়ী স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ।

প্রতিটি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জন্য রয়েছে পৃথক আইন। এই আইনগুলো প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমনভাবে পরিচালিত করছে যা প্রশাসনিক একাংশ তো দূরের কথা জনপ্রতিনিধিত্বশীলও হতে পারছে না। অন্তর্বর্তী অবস্থা বা সাময়িক বিচ্যুতি বাদ দিলে আমাদের দেশ চলে সংসদীয় ব্যবস্থায়। অথচ আমাদের স্থানীয় সরকারগুলো অনেককাংশে রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থার মতো।

আইনে সিটি করপোরেশনের মেয়রকে এতো একক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে নির্বাচিত কাউন্সিলরদের সেখানে ভূমিকা রাখার সুযোগ খুবই কম। একই অবস্থা পৌরসভা গুলোর ক্ষেত্রেও। দুটি প্রতিষ্ঠানেই  আছেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা যিনি জাতীয় সরকারের একজন কর্মকর্তা।  বিধি বা প্রজ্ঞাপন দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অনেকটা তাদের তদারকিতেই রাখার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের অবস্থাতো আরো করুণ।  জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের ক্ষমতার কাছে নির্বাচিত সদস্যরা প্রায় অস্তিত্বহীন। এখানেও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার ক্ষমতা কোনো কোনো ক্ষেত্রে নির্বাচিত চেয়ারম্যানের চেয়েও বেশি।

উপজেলা পরিষদ সবচেয়ে অকার্যকর একটি প্রতিষ্ঠান। অথচ সবচেয়ে বেশি আইনি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে উপজেলা পরিষদকে। উপজেলা পরিষদ দেশের একমাত্র স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান যাদের কাছে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ হস্তান্তরিত করা হয়েছে। যেমন উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত কৃষি বিভাগ , শিক্ষা বিভাগ , স্বাস্থ্য বিভাগ , মৎস্য বিভাগ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগসহ মোট ১৭ টি দপ্তর উপজেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তরিত। অথচ কার্যক্ষেত্রে হস্তান্তরিত বিভাগগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত বিধি বা প্রজ্ঞাপন দ্বারা পরিষদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। যেখানে আইনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে উপজেলা পরিষদকে সাচিবিক সহায়তা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সেখানে প্রকৃতপক্ষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা উপজেলা পরিষদ তথা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করেছেন। এখানে স্ব শাসিত স্থানীয় সরকারের পরিবর্তে দ্বৈত শাসনের ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করে রাখা হয়েছে।

আমাদের সবচেয়ে প্রাচীন ও গতিশীল স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ। অথচ এই প্রতিষ্ঠানকে কৌশলে আইন বহির্ভূতভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে। এখানেও নির্বাচিত চেয়ারম্যানের অনুগ্রহের কাছে বন্দী থাকতে হয় নির্বাচিত ইউ পি সদস্য, সদস্যাদের। সাম্প্রতিককালে ইউনিয়ন পরিষদ সচিব কে প্রশাসনিক কর্মকর্তা নাম দেওয়া হয়েছে। এখানেও আমলাতন্ত্রের অশুভ হস্তক্ষেপের ক্ষেত্র ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। গ্রামের সাধারণ মানুষের বিভিন্ন ভাতাসহ নানা নাগরিক সুবিধা প্রদানেও রাজনৈতিক বিবেচনা প্রাধান্য পাওয়ায় স্বকীয়তা ও মর্যাদা হারাচ্ছে জনগণের সবচেয়ে কাছের এই প্রতিষ্ঠানটি। এতে করে সমাজে তৈরি হচ্ছে মধ্যসত্ত্বভোগী একটি লুটেরা গোষ্ঠী। যার দায় সংশ্লিষ্টরা এড়াতে পারেন না।

আমাদের রাজনৈতিক দল বলেন বা নীতি নির্ধারণী মহল বলেন সকলেই স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করার কথা বলেন। এরা তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করে কথা বললেও প্রায়োগিক অবস্থা বিবেচনায়ই নেন না। আইনে অনেক ক্ষমতা থাকার পরও কেন বিধি বা প্রজ্ঞাপন দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অকার্যকর করে রাখা হয় অনেকে সে খবরও জানেন না। 

দাতাগোষ্ঠীর সহায়তায় স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করার জন্য বিভিন্ন প্রকল্প মন্ত্রণালয় গ্রহণ করে। কিন্তু এগুলো প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকরে বা জনকল্যাণে কতটুকু ভূমিকা রাখে তার সঠিক মূল্যায়ন করা হয় না। পাইলট প্রকল্পের নামে দেশের বিভিন্ন জায়গায় কিছু প্রতিষ্ঠানকে কার্যকর ও সক্রিয় দেখানোর চেষ্টা থাকলেও দেশের বেশিরভাগ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো মুখ থুবড়ে পড়ে আছে।

সংবিধান ও আইনের কাঠামোতে জাতীয় সংসদ সদস্যদের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠাগুলোতে সংশ্লিষ্টতা না থাকার কথা থাকলেও, বাস্তবিক অর্থে স্থানীয় সংসদ সদস্যরাই হয়ে উঠেন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকর্তা। প্রকল্প গ্রহণ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের বিভিন্ন সহায়তা প্রাপ্তির তালিকাও এমপিদের অনুমতি নিয়ে করতে হয়। এটাই হয়ে গেছে অলিখিত রেওয়াজ। আর এখানে এমপির কর্তৃত্ব পাকাপোক্ত করতে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন সরকারি কর্মকর্তারা।

রাজনৈতিক দলের প্রতীক দিয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচন পদ্ধতি চালু করে স্থানীয় সরকারগুলোকে দলীয়করণ করা হয়েছে। যেখানে সাধারণ মানুষের সেবাপ্রাপ্তির চেয়ে দলীয় কর্মীদের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিতের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে করে নষ্ট হয়েছে স্থানীয় সম্প্রীতির বন্ধন।

দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর দেশে অন্তর্বতীকালীন সরকার দায়িত্ব পালন করছে। বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের মতো স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনও করা হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক স্থানীয় সরকারে দায়িত্ব পালনকারী কোনো জনপ্রতিনিধিকে সংস্কার কমিশনে রাখা হয়নি। সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ হিসেবে অত্যন্ত যোগ্য লোক। কিন্তু সদস্যদের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে কাজ করা স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধিদের এখানে কাজে লাগানো যেতে পারতো। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা হিসেবে যিনি দায়িত্ব পালন করছেন স্থানীয় সরকার সম্পর্কে তার কতটুকু ধারণা রয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলারও অবকাশ রয়েছে।

রাজনৈতিক কারণে  বা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিরাগভাজন হয়ে বিভিন্ন সময় স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের বরখাস্ত করা হয়। অথচ স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের অপরাধের যাছাই ও শাস্তি প্রদান শোভনীয় হয়। এতে করে জনগণের কাছেও সরকার সম্পর্কে ভুল বার্তা যায় না। অথচ আমাদের আমলাতন্ত্র এগুলোর চর্চা বা বিচার বিশ্লেষণ না করে কর্তার ইচ্ছায় কর্ম করে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রতি অন্যায় ও অনেকাংশে অপরাধমূলক আচরণ করছেন।

বর্তমানে তো দেশে স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি বলতে কিছু নেই। সর্বত্র প্রশাসক ও সমন্বয়কদের কর্তৃত্ব ও খবরদারী। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছাড়া দায়বদ্ধ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান পরিচালনা সম্ভবপর নয়। আমাদের নীতি নির্ধারকদের বাস্তবতা বুঝতে হবে। সত্যিই যদি দেশে কার্যকর স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হয়। তাহলে বিদ্যমান সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে কার্যকর সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা সংসদীয় ব্যবস্থার আদলে চলবে, না রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থার আদলে চলবে তা আগে নির্ধারণ করতে হবে।

একেক প্রতিষ্ঠানের জন্য একেক আইন না করে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার জন্য কেন্দ্রীভূত একক আইনও করা যেতে পারে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য স্থানীয় সরকার সিভিল সার্ভিস নামে পৃথক ব্যবস্থা করা যেতে পারে। যারা শুধু স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠাগুলোতেই কাজ করবেন। এতে করে প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষার পাশাপাশি স্থানীয় সরকারে সেবা দেওয়ার জন্য অভিজ্ঞ, আইনজ্ঞ কর্মকর্তা নিয়োজন নিশ্চিত হবে।

অধ্যাদেশের বলে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠাগুলোকে সাময়িক প্রাণসঞ্চার না করে নির্বাচিত জাতীয় সংসদে চুলচেরা বিশ্লেষন করে স্থানীয় সরকার কমিশন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। স্থানীয় সরকার কমিশনের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের অসদাচরণ ও আইন বর্হিভূত কার্যক্রমের কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রাখা প্রয়োজন।

আমাদের সমস্যা, আমরা যে যেখানে বসি। আমরা মনে করি আমিই সেরা। সচিবালয়ের কর্তারা আইন বা বিধি করে দেন। কিন্তু এইসব বিধি দেশের সকল অঞ্চলে সমানভাবে প্রযোজ্য কিনা বা বাস্তবায়নযোগ্য কিনা সেই ভাবনা তারা মাথায় রাখেন না। দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে তৃণমূল থেকে। অথচ আমাদের এখানে কেন্দ্রে পরিকল্পনা গ্রহণ করে প্রান্তে বাস্তবায়নের জন্য পাঠানো হয়। এতে করে যেখানে যা প্রয়োজন নয় সেখানে সে রকম প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়। আর প্রয়োজনীয় প্রকল্প থেকে অগ্রাধিকার যোগ্য এলাকা বাদ পড়ে। এসব ধারণা থেকে বের হয়ে তৃণমূলের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সাধারণের ভাষা সরকারের ভাবনায় নেওয়া উচিত।

স্থানীয় সরকার মানে জনগণের কাছের সরকার। প্রকৃত অর্থে জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছাতে হলে স্বশাসিত, কার্যকর,গতিশীল স্থানীয় সরকারের বিকল্প নেই। এজন্য প্রয়োজনে স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের জন্য বিভিন্ন মানদণ্ড নির্ধারণ করা যেতে পারে। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই আইন প্রণেতারা যেন স্থানীয় সরকারের কার্যক্রমে বাঁধা হয়ে না দাঁড়ান তা নিশ্চিত করতে হবে। 

একসময় স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান সমূহে স্থানীয়ভাবে গ্রহণযোগ্য বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ অংশ নিতেন। মানুষ স্থানীয় আবেগ ও স্থানীয় প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় নিয়ে তার প্রতিনিধি নির্বাচিত করতেন। এখন মনোনয়ন বাণিজ্য, কালোটাকা ও পেশিশক্তির দাপটে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ মানুষজন নির্বাচনের চিন্তাও মাথায় আনেন না।

যেখানে দেশে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য বিশ হাজার টাকা মনোনয়ন ফি নির্ধারন করা। সেখানে একজন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের জন্য এক লক্ষ টাকা মনোনয়ন ফি নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন। এরকম শত শত অসঙ্গতি, আইন বর্হিভূত কার্যক্রমের ব্যবস্থা রয়েছে আমাদের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো অকার্যকর রাখতে।  একটি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম আরেকটি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের  কার্যক্রমের সঙ্গে অনেক সময় সাংঘর্ষিক হয়ে দাঁড়ায়। একই প্রকল্প একাধিক প্রতিষ্ঠান গ্রহণ করে। এতে যেমন দুর্ণীতি হয় তেমনি  সম্পদেরও অপচয় হয়। এসবও কর্তাব্যক্তিদের ভাবনায় রাখা জরুরি।

সবশেষে বলবো স্থানীয় সরকারকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার জন্য আয়ের উৎস সৃষ্টির পথ জাতীয় সরকারকেই করে দিতে হবে। মাঠ পর্যায় থেকে বিভিন্ন খাতের অর্জিত রাজস্ব আয় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বিধি নির্ধারিত পদ্ধতিতে সরবরাহ করতে পারলে, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাবলম্ভী হবে। তখন নিজেরাও  নিজেদের আয় বৃদ্ধিতে উৎসাহী হবে। এর উপযুক্ততা, বাস্তবতা এবং বাস্তবায়নযোগ্য খাতও রয়েছে। শুধু প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সদিচ্ছা, আন্তরিকতা, কর্মদক্ষতা ও জবাবদিহিতা। সর্বোপরি যোগ্য ও উপযুক্ত কর্ম পরিষদ নির্বাচিত করে নিয়ে আসার পরিবেশ নিশ্চিতের মানসিকতা।

মুক্তাদীর আহমদ মুক্তা,  সাবেক স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক কর্মী।