আনিসুল, সাধন ও মামুনসহ ৮ জন ফের রিমান্ডে

জাতীয় | ফোরপিলার্সবিডি.কম
প্রকাশিত:
আনিসুল, সাধন ও মামুনসহ ৮ জন ফের রিমান্ডে

রাজধানীর বিভিন্ন থানায় করা হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুন ও অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান জিয়াকে আবারও রিমান্ড দিয়েছেন আদালত।

বুধবার (৩০ অক্টোবর) রাজধানীর সিএমএম কোর্ট তাদের ফের রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন।

এছাড়া আজ বিভিন্ন মেয়াদে আরও কয়েকজনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তারা হলেন- সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, সাবেক এমপি হাজী সেলিম ও ছাত্রলীগ নেতা তানভীর হাসান সৈকত। তাদের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় করা হত্যা মামলায় সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।


এদিকে শাহবাগ থানায় করা মামলা সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ৫ দিন ও বাড্ডা থানায় আরেক হত্যা মামলায় ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
বাড্ডা থানার আরেক হত্যা মামলায় অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান জিয়ার আবারও ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

এছাড়াও যাত্রাবাড়ী থানার হত্যা মামলায় সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খানের ৪ দিনের রিমান্ড, নিউমার্কেট থানার হত্যা মামলায় সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানকে ৫ দিনের এবং ধানমন্ডি থানার মামলায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ৩ দিন ও বংশাল থানার মামলায় তাকে ৪ দিনের রিমান্ড দেন। এবারে মোট ৭ দিন রিমান্ড থাকবেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। এর আগে তিনি প্রায় দেড় মাসের বেশি সময় ধরে রিমান্ডে ছিলেন।

এদিকে আবারও চকবাজার থানার মামলায় আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি হাজী সেলিম ৫ দিন এবং ধানমন্ডি থানার মামলায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

এছাড়াও রাজধানীর চকবাজার থানায় করা হত্যা মামলায় ছাত্রলীগ নেতা তানভীর হাসান সৈকতকে ফের ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

জাতীয় বিভাগের আরও খবর

৭০ বছরেও সংস্কার হয়নি নাটোর পৌরসভার প্রথম মার্কেট

পার্ক দখল করে মার্কেট বানিয়েছে নাটোর পৌরসভা তবে পাকিস্তান আমলে তৈরি মার্কেট সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। দীর্ঘদিন সংস্কার না করার ব্যবহারের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে নাটোরের এন.টি.সি মার্কেট। এই স্থানে বহুতল ভবনের মার্কেট করা যেতো। এতে করে প্রতি মাসে রাজস্ব আয় বাড়তো। বহু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হতো। কিন্তু সেটা না করেনি নাটোর পৌরসভা। কিন্তু পার্ক নষ্ট করে ঠিকই মার্কেট বানানো হয়েছে।

১৯৬৩ সালে সর্ব প্রথম এন.টি.সি মার্কেট নির্মাণ করেছিল নাটোর পৌরসভা। তৎকালীন সময়ে নাটোর পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন হুরম চৌধুরী। ১০টি দোকান রয়েছে সেখানে। প্রতিমাসে ভাড়া ৭ শত টাকা। একটি বড় দোকান রয়েছে সেই দোকান ঘরের ভাড়া মাসে ২ হাজার টাকা। এই মার্কেটের মোট ১১ টি রুম থেকে ভাড়া বাবদ পৌরসভা পায় প্রতিমাসে ৯ হাজার টাকা।  দোকান মালিকরা বলছেন- যে কোন মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে ভবন। প্রাণহানিসহ আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা। আর পৌর কর্তৃপক্ষ বলছেন- অতি দ্রæত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

প্রিয়াংকা টেইলার্স‘এর মালিক প্রদীপ চন্দ্র মানী বারনইকে বলেন, “বর্তমানে মার্কেটটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে। অতি দ্রæত মার্কেটটি ভেঙ্গে নতুন করে নির্মাণ করা প্রয়োজন। অন্যথায় যেকোন মুহূর্তে মার্কেটটি ভেঙ্গে পড়তে পারে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।’’

সেলিম টেইলার্সের মালিক মিঠু প্রামানিক বারনইকে জানান, পাকিস্তান সরকারের সময় নাটোর পৌরসভা এই এন.টি.সি মার্কেট নির্মাণ করেছিল। মার্কেট নির্মাণের পর থেকে কর্তৃপক্ষ কোনরকম সংস্কার করেনি। কয়েক বছর পর পরই শুধু ভাড়া বৃদ্ধি করেছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা, সামান্য বৃষ্টিপাত হলেই মার্কেটটি জলবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করার জন্য বারবার পৌর কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কোনই পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এছাড়া দেওয়ালে নোনা ধরে গেছে, ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। বৃষ্টি হলেই ছাদ দিয়ে পানি পড়ে।

লেডিস কর্নার‘এর মালিক মিলন কুমার সাহা বারনইকে জানান, মার্কেটের নানা সমস্যা নিয়ে লিখিতভাবে মৌখিকভাবে পৌর কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ জানানো হয়েছে। অভিযোগের পরে পৌরসভার লোকজন এসে মার্কেটেটি মাপামাপি করে চলে যায়। পরবর্তীতে আর কোন কার্যক্রম দেখা যায় না। এভাবেই চলছে যুগের পর যুগ। বৃষ্টি হলেই ছাদ দিয়ে পানি পড়ে নিজেরাই মেরামত করি। পানি নিষ্কাশনের পথ না থাকায় সামান্য বৃষ্টিপাত হলেই দোকান ঘরের ভিতরে পানিতে ভরে যায়।

ফেমাস লেডিস টেইলার্সের মালিক মো. ইমরান হোসেন রাজু বারনইকে জানান, নাটোর পৌরসভার সর্বপ্রথম নির্মিত নিচাবাজারের এই এন.টি.সি মার্কেটের বয়স প্রায় ৬১ বছর। এই মার্কেটে সর্বমোট দোকানঘর রয়েছে ১১ টি। দোকান গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বঙ দোকান আমার, বর্তমানে মাসিক ভাঙা দিতে হয় ভ্যাট ট্যাক্স সহ প্রায় ২ হাজার টাকা। পাঁচ বছর আগেও এই রুমের ভাঙা ছিল মাত্র ১ হাজার টাকা। সাবেক মেয়র উমা চৌধুরী জলির সময়ে হঠাৎ করেই ভাড়া দ্বিগুণ করে দেওয়া হয়। নানা সমস্যায় জর্জরিত এই মার্কেটটি সংস্কার বা মার্কেট উন্নয়নে কোন প্রদক্ষেপ কোনদিনই কোন মেয়রের সময় গ্রহণ করা হয়নি।

নাটোরের প্রবীণ ব্যবসায়ী ও চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর পরিচালক মশিউর রহমান দুদু বারনইকে জানান, "নাটোর টাউন পার্ক সংক্ষেপে এন.টি.সি মার্কেট। ১৯৬৩ সালের আগে এই জায়গার নামকরণ ছিল বোম পুলিশ। এখানে পৌরসভার ময়লা আবর্জনা ফেলে দেওয়া হতো। বর্তমানে মার্কেটটি জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে, ব্যহত হচ্ছে ব্যবসা। এমত অবস্থায় মার্কেটটি ভেঙ্গে নতুন করে বহুতল ভবন নির্মাণ করলে ব্যবসায়ীরা যেমন আশঙ্কা থেকে মুক্তিভাবে, বৃদ্ধি পাবে ব্যবসায়ী। তৈরি হবে কর্মসংস্থান। তাই কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি, মার্কেটের পেছনের পরিত্যক্ত জায়গা সহ বহুতল মার্কেট নির্মাণ করে, কর্মসংস্থান তৈরি করবে এমনটাই প্রত্যাশা করি।

নাটোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও নাটোর পৌরসভার প্রশাসক মো. মাছুদুর রহমান বারনইকে বলেন, "নাটোর পৌরসভার নির্মিত প্রথম নির্মিত এন টি.সি.মার্কেট সম্পর্কে আমি অবগত ছিলাম না। মার্কেটটি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে অতি দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

মার্কেট তৈরির কাজ পেলেন বড় ভাই, ছোট ভাই বরাদ্দ পেলেন ৯টি দোকান

নাটোরের বাহাদুর শাহ্ পার্ক নষ্ট করে মার্কেট বানালো পৌরসভা। সেই মার্কটের নির্মাণ কাজ পেলেন ছোট ভাই। আর মার্কেটের ২১ দোকানের মধ্যে ৯টি বরাদ্দ পেলেন ছোট ভাই। অন্য দোকানগুলো গোপনে ঘনিষ্ঠদের মধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়। একটি ছোট মার্কেট নির্মাণ ও বরাদ্দ নিয়ে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ যে নয়ছয় করেছে তাহলে বড় বড় কাজে কী হতে পারে? এমন প্রশ্ন তুলেছেন পৌরবাসীরা। এতোদিন সবাই মুখ বুজে সহ্য করলেও রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর কথা বলছেন অনেকে। প্রতিটি অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।

নাটোর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল মালেক বরনইকে বলেন, “বাহাদুর শাহ পার্ক মার্কেট নির্মাণের কাজ পায় এম এন ট্রেড প্রতিষ্ঠান। নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৯২ লক্ষ টাকা। ভ্যাট এবং ট্যাক্স বাবদ বাদ যায় ১০ লক্ষ টাকা। এম এন ট্রেড কাজটি বিক্রি করে দেয় অনিমা জুয়েলার্সের মালিক নিরেন্দ্রনাথ কর্মকারের কাছে।’ তিনিই মার্কেটটি নির্মাণ করেন।

মার্কেট নির্মাণ থেকে শুরু করে বরাদ্দ দেওয়ার পর্যন্ত কোন স্বচ্ছতাই ছিল না। এই সমস্ত দোকান ঘর দরপত্র আহ্বান না করে গোপনে মেয়রের ঘনিষ্টদের মধ্যে দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়। উমা চৌধুরী জলি নিজেই স্বজনের নামে দোকান ঘর বরাদ্দ নিয়ে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করেছেন। এছাড়াও প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা বেশিরভাগ দোকান বরাদ্দ নিয়েছিল। 

নাটোর পৌরসভার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. মির্জা সালাহ্ উদ্দিন বারনইকে জানান, “নাটোর পৌরসভার পিলখানায় অবস্থিত বাহাদুর শাহ পার্ক মার্কেটে মোট দোকান ঘর রয়েছে ২১ টি। এর মধ্যে নিপেন্দ্রনাথ কর্মকারের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৯টি দোকান। নিপেন্দ্রনাথ কর্মকার হলেন মার্কেট নির্মাণকারী ঠিকাদার নিরেন্দ্রনাথ কর্মকারের বড় ভাই। 

এছাড়া মধু পোদ্দারের নামে ৪টি, স্বপন কুমারের নামে ১টি, কবি রানী দাসের নামে ১টি, সঞ্জীব কুমারের নামে ১টি, বিনয় কুমারের নামে ৩টি, আব্দুল আল মামুনের নামে ১টি এবং আব্দুস সালামের নামে একটি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। বর্তমানে বিনয় কুমারের নামে যে দোকানটি রয়েছে সেটির বরাদ্দ পেয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মালেক শেখ। পরবর্তীতে ওই দোকানটি বিনয় কুমারের কাছে বিক্রি করে দেন মালেক শেখ।

নাটোর পৌরসভার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. মির্জা সালাহ্ উদ্দিন জানান, এসব দোকান বরাদ্দ বাবদ সর্বনিম্নে ২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা, আর সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা জামানত রয়েছে। মোট জামানতের পরিমাণ ১ কোটি ৩৬ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা।

বাহাদুর শাহ পার্কের নতুন নির্মিত তিন তলা মার্কেটের প্রায় মাঝখানে রয়েছে সিঁড়ি। সিঁড়ির পূর্বপাশে রয়েছে নয়টি দোকান ঘর এবং পশ্চিম পাশে রয়েছে মোট ১২টি দোকান। রাস্তা সংলগ্ন মার্কেটে পশ্চিম পাশের নিচ থেকে তিন তলা পর্যন্ত এই ৯টি দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয় অনিমা জুয়েলার্স এর মালিক নিপেন্দ্রনাথ কর্মকারের নামে। 

রাস্তা সংলগ্ন মার্কেটের প্রথম দোকানটি গুরুদেব জুয়েলার্স। এই দোকান মালিক বলরাম সরকার বারনইকে জানান, "অনিমা জুয়েলার্স এর কাছ থেকে দোকানটি ভাড়া নেওয়া হয়েছে এ দোকানের মাসিক ভাড়া ১৫ হাজার টাকা। দ্বিতীয় দোকান সরকার জুয়েলার্স এই দোকানের ভাড়া মাসে ২০ হাজার টাকা।" 

সততা জুয়েলার্সের মালিক হাসান শেখ বারনইকে জানান, “অনিমা জুয়েলার্স এর নিকট থেকে দোকান ঘরটি ভাঙা নেওয়া হয়েছে জামানত হিসেবে কোন অর্থ জমা দেওয়া নেই তবে দোকান ঘরের ভাঙা দিতে হয় প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা।’’

সিঁড়ির ঘরের পশ্চিম পাশের প্রথম দোকানটি একটি কারখানা। এর মালিক সুজন কুমার সরকার বারনইকে বলেন, “মধু পোদ্দার এর নিকট হতে দোকানটি ভাড়া নিয়েছি। প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয়।’’

নিউ আয়েশা জুয়েলার্স‘এর স্বত্বাধিকারী মো. লিটন খাঁ বারনইকে জানান, “সাগর জুয়েলার্স এর মালিকের নিকট থেকে এই দোকান ঘরটি ভাড়া নেওয়া হয়েছে জামানতবিহীন। প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা ভাড়া। এছাড়াও এই মার্কেটের নিচ তলার পপুলার ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস, পার্বতী জুয়েলার্স, বি কে জুয়েলার্স‘এর দোকানগুলোর ভাড়া প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা করে দিতে হয়।’’

মার্কেটের দ্বিতীয় তলার পশ্চিম পাশে একটি কারখানার মালিক ও বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি নাটোর জেলা শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ভবেশ চন্দ্র চক্রবর্তী ভক্তের সাথে কথা হয়। তিনি বারনইকে বলেন, “আমার এই কারখানার দোকানটি সাবেক মেয়র উমা চৌধুরী জলির মেয়ের নামে। প্রতি মাসে ৮ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয়। তবে ভাড়া টাকাটা জমা দিতে হয়, বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি নাটোর জেলা শাখার সাবেক সভাপতি ও অনিমা জুয়েলার্স এর স্বত্বাধিকারী নীরেন্দ্রনাথ কর্মকার দুলালের কাছে। আমি ছাড়া দ্বিতীয় তলায় সিঁড়ির পূর্ব পাশে আরো তিনটি দোকান ঘর রয়েছে। যাদের ভাড়া ৮ হাজার টাকা করেই।’’

সিঁড়ি ঘরের পূর্ব পাশের তৃতীয় তলায় স্বর্ণ ও চাঁদি গালানোর একটি কারখানা। কথা হয় কারখানা মালিক প্রবীণ ঘোষ এর সাথে, তিনি বারনইকে জানান, “এই দোকান ঘরের মালিক বিনয়। প্রতিমাসে ভাড়া বাবদ দিতে হয় ৫ হাজার টাকা। সিঁড়ি ঘরের পূর্ব পাশের তৃতীয় তলায় মোট ৪টি দোকান। প্রতিটা দোকানেই ৫ হাজার টাকা করে ভাড়া দিতে হয়।’’

এছাড়া দ্বিতীয় তলার পশ্চিম পাশে ৩টি শোরুম বন্ধ দেখা যায় এবং তৃতীয় তালার তিনটি কক্ষ বন্ধ পাওয়া যায়। এই ৬টি দোকানের মালিক অনিমা জুয়েলার্স এর সত্ত¡াধিকারী নীরেন্দ্রনাথ কর্মকার দুলাল বারনইকে বলেন, “পার্টনারশিপে হলমার্কের একটি শোরুম করার জন্য দোকান ঘর গুলো রাখা হয়েছে। বর্তমান দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে পরিকল্পনাটা স্থগিত করা হয়েছে। যদি কোন পার্টনার না পাই তবে নিজেই করব। আর মার্কেটের দ্বিতীয় তলার সিঁড়ি ঘরের পশ্চিমে যে দোকান ঘর রয়েছে সেটার মালিক সাবেক মেয়র উমা চৌধুরী জলির মেয়ে। দোকানের ভাড়া আমার কাছে থেকেই তিনি নিয়ে যান।” তবে তার সঠিক ঠিকানা তিনি বলতে পারেন নি।

শুধুমাত্র নীচতলা থেকেই ভাঙা উত্তোলন হয় ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা। এছাঙায় দ্বিতীয় তলার ৪টি দোকান ঘর থেকে ভাঙা উত্তোলন হয় প্রতিমাসে ৩২ হাজার টাকা। তৃতীয় তলার ৪টি দোকান ঘর থেকে ভাঙা উত্তোলন হয় প্রতিমাসে ২০ হাজার টাকা। ৬টি রুম বন্ধ থাকা সত্তে¡ও পুরো মার্কেট থেকে বর্তমানে প্রতি মাসে ভাঙা উত্তোলন হয় ১ লক্ষ ৮২ হাজার টাকা। আর পৌরসভার রাজস্ব আয় প্রতি মাসে ৩৭ হাজার ৪ শত টাকা।

মার্কেটের পেটে পার্ক

বাহাদুর শাহ্ পার্ক নষ্ট করে নাটোর পৌরসভার মার্কেট

নাটোর লালবাজার এলাকায় বাহদুর শাহ্ পার্কে দোলনাসহ বেশ কিছু খেলার সামগ্রী নির্মাণ করে দিয়েছিলেন প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ও সংসদ সদস্য শংকর গোবিন্দ চৌধুরী। যাতে এলাকার শিশুরা খেলাধূলা করতে পারে; বড়রা খোলা জায়গায় নিঃশ্বাস নিতে পারেন। অথচ তাঁর মেয়ে উমা চৌধুরী জলি নাটোর পৌরসভার মেয়র হয়ে সেই পার্কটি বন্ধ করে দেন। সেখানে নির্মাণ করেছিলেন মার্কেট। নাটোরবাসীর প্রতিবাদও কানে তুলেননি উমা চৌধুরী জলি। তার যুক্তি ছিল নাটোর পৌরসভার রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে, তাই মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। অথচ এই মার্কেট থেকে নাটোর পৌরসভায় প্রতি মাসে রাজস্ব আসে মাত্র ৩৭ হাজার ৪শ’ টাকা। নাটোর পৌরসভার রাজস্ব আয় খুব একটা না বাড়লেও সাবেক মেয়রের ঘনিষ্ঠরা গোপনে দোকানগুলো নিজ নামে নিয়েছেন। 

নাটোর পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ চৌকিরপাড় মহল্লার বাসিন্দা খোকন সাহা বরনইকে বলেন, “বাহাদুর শাহ পার্কের ভেতরে আমরা ছোটবেলায শীতের সময়, সকাল বিকাল ব্যাডমিন্টন খেলতাম। ঘুড়ি উড়াতাম, সুড়সুড়ি খেতাম। অথচ সেই খোলা জায়গায় মার্কেট বানানো হয়েছে। বর্তমানে শহরের ভিতরে প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য খোলা একটু জায়গাও নেই।’’

পিলখানা মহল্লার বাসিন্দা সুভাষ কর্মকার বারনইকে বলেন, “মহল্লা বাসীরা একাধিকবার আন্দোলন করে মার্কেট নির্মাণের কাজ স্থগিত করলেও তা পরবর্তীতে প্রভাবশালীদের কৌশলে মার্কেট নির্মাণ করে। বাহাদুর শাহ পার্কের জায়গায়, মার্কেট নির্মাণ করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের তেমন কোন উপকারে আসেনি। উপকৃত হয়েছে কয়েকজন বড় ব্যবসায়ীর।’’

নাটোর পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের পিলখানা মহল্লার বাসিন্দা মো. আনিসুর রহমান বারনইকে বলেন, “আশির দশকের নাটোর পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন প্রয়াত বাবু শঙ্কর গোবিন্দ চৌধুরী। সেই সময় তিনি বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে দোকান ঘর নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন। রড, সিমেন্ট, ইট ফেলে কাজও শুরু হয়েছিল। তখন মার্কেট নির্মাণ কাজে আমরা বাধা দেই। এই মহল্লার প্রায় শতাধিক মানুষের স্বাক্ষরিত একটি স্মারক প্রশাসন বরাবর লিখিত দেওয়া হয়। পৌরসভার চেয়ারম্যানকে দোকান তৈরি না করার জন্য অনুরোধ করলে তিনি কথা রাখেন।”

তিনি আরও বলেন, “সেই সময় জনপ্রতিনিধিদেরকে কোন কথা বললে তারা রাখতেন কারণ ভোটে নির্বাচিত হতে হতো। শংকর গোবিন্দ চৌধুরী পার্কের ভিতর দোলনাসহ কিছু খেলার সামগ্রী নির্মাণ করে দিয়েছিলেন।”

আনিসুর রহমান আরও বলেন, “পরবর্তীতে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নাটোর পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। তার সময়ে একপাশে মার্কেট নির্মাণের কাজ শুরু হলে মহল্লাবাসীরা বাধা দেয়। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে জোরপূর্ব এক পাশে মার্কেট নির্মাণ করেন। তবুও কোনরকম বাহাদুর শাহ পার্কের অস্তিত্ব একপাশে টিকে ছিল। কিন্তু উমা চৌধুরী জলি মেয়র নির্বাচিত হয়ে এখানে পুনরায় মার্কেট নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বাস্তবায়ন করেন।”

২০১৭ সালের ১৬ অক্টোবর মার্কেট নির্মাণ সংক্রান্তে টেন্ডার আহ্বান করা হয়। ২ নভেম্বর ছিল দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। ঠিকাদার নির্ধারণ হয়ে  ২০১৯ সালের ৬ জানুয়ারির মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু ২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর মার্কেট নির্মাণ বন্ধে জনস্বার্থে নাটোরের তিন বিশিষ্টজন নালিশি মামলা করেন। তাঁরা হলেন নাটোর জেলা নজরুল মঞ্চের সভাপতি গোলাম কামরান, সাবেক জাতীয় সাঁতার চ্যাম্পিয়ন ও মিস্টার বাংলাদেশ আমেল খান চৌধুরী, সুজনের যুগ্ম সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম। বাহাদুর শাহ পার্ক বন্ধ করে মার্কেট নির্মাণ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন নাটোর সদর সিনিয়র সহকারী জজ আসাফ উদ দৌলা।

এরপর মার্কেট নির্মাণ বন্ধের নির্দেশ দেয় আদালত। বন্ধ হয়ে যায় বাহাদুর শাহ পার্কে মার্কেট নির্মাণ কাজ। আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালত আবেদন করে নাটোর পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। এরপর মার্কেট নির্মাণ বন্ধের আদেশ স্থগিত করে উচ্চ আদালত। এরপর দ্রæত গতিতে মার্কেট নির্মাণ করা হয়। 

২০১৯ সালের ১৭ মে বাহাদুর শাহ পার্ক মার্কেট নির্মাণের উদ্বোধন করেন তখনকার সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল ও পৌরমেয়র উমা চৌধুরী জলি। সেসময় পৌর মেয়র উমা চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “পৌরসভার রাজস্ব আয় বাড়ানোর উদ্দেশ্যে তৎকালীন পৌর পরিষদ মার্কেটটি নির্মাণ কাজ শুরু করে। বাহাদুর শাহ্ লেখা নামেই আধুনিক ও ডিজিটাল সাইন বোর্ড তৈরি করা হচ্ছে। যাতে বাহাদুর শাহ্ মার্কেট লেখা থাকবে। সাইনবোর্ডটি হবে নয়নাভিরাম।”

যে রাজস্ব আয়ের জন্য ঐহিত্যবাহী পার্ক নষ্ট করে মার্কেট করা হয় সেই মার্কেট থেকে প্রতি মাসে নাটোর পৌরসভার আয় হয় মাত্র ৩৭ হাজার ৪শ’ টাকা। নাটোর পৌরসভার সহকারী কর আদায়কারী জহুরুল ইসলাম বারনইকে বলেন, “বাহাদুর শাহ পার্ক মার্কেট থেকে প্রতি মাসে রাজস্ব আয় আসে মোট ৩৭ হাজার ৪শত টাকা।’’

নাটোর-২ আসনের সাবেক সংসদ ও উপমন্ত্রী এবং বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য সদস্য এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, ‘বাহাদুর শাহ পার্কে এক সময় আমরা দিঘির ধারে গিয়ে ছাত্র জীবনে বসে থাকতাম। এখন বর্তমানে সেই পার্ক নষ্ট করে মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে, বিষয়টি আমি জানি। এ ধরনের মানুষকে কেন মেয়র বানানো হয়?’

নাটোর পৌরসভার পিলখানা এলাকায় লালদীঘির তীরে ১৯৫৭ সালে বাংলার নবাব বাহাদুর শাহ জাফরের নামে পার্কটি নির্মাণ করা হয়। তখন থেকে পার্কটি খেলাধুলা, হাঁটা-চলা, সাহিত্যচর্চাসহ নানা কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। পরে পৌর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় পার্কের পরিবেশ নষ্ট হতে শুরু করে। এর প্রতিকার না করে কর্তৃপক্ষ ১৯৮৭ সালে পার্কটি বন্ধ করে মার্কেট নির্মাণের চেষ্টা করা হলে আদালতের নির্দেশে তখন তা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর নাটোর পৌরসভার বর্তমান মেয়র উমা চৌধুরী জলি পুনরায় গোপন টেন্ডারের মাধ্যমে পার্কটি বন্ধ করে মার্কেট তৈরি করান।

নাটোর মাদ্রাসা কাঁচা বাজারে ১৪টি দোকান: ১২ কাউন্সিলরের পকেটে দেড় কোটি টাকা

এযেন অর্থ লুটের নতুন কৌশল, সম্মিলিতভাবে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ লুটপাট। নাটোর পৌরসভার সদ্য সাবেক ১২ কাউন্সিল এবং একজন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি একজোট হয়ে নিজেদের পকেটে ভরেছে প্রায় দেড় কোটি টাকা। পৌরসভার সদ্য সাবেক মেয়রের মৌখিক নির্দেশে মাদ্রাসা কাঁচা বাজারে ১৪টি দোকান বরাদ্দের নামে এই অর্থ লুটপাট হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এই অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা।

নাটোর পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের মাদ্রাসা কাঁচা বাজারে, সরকারি জমিতে দোকান নির্মাণ করে ব্যসায়ীদের কাছে ভাড়া দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন সদ্য সাবেক পৌর মেয়র উমা চৌধুরী জলি। মাদ্রাসা বাজারের পাশে পানির ট্যাংকির পূর্বে, উত্তর পটুয়াপাড়া পরিত্যক্ত বাসস্ট্যান্ডের জায়গায়, টেন্ডার ছাড়াই গত বছর ১ তলা বিশিষ্ট ১৪ টি দোকান ঘর নির্মাণ করা হয়। পৌর কর্তৃপক্ষের মৌখিক নির্দেশে নাটোর পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মো. জাহিদুর রহমান জাহিদের তত্ত্বাবধানে বাজারের পাশে ১০ ফুট লম্বা ১২ ফিট চওড়া ১২টি এবং ৮ ফিট লম্বা ও ১০ ফিট চওড়া দুইটি সর্বমোট ১৪টি দোকান ঘর তৈরি করা হয়। ১২ কাউন্সিল ছাড়াও এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ৪ নং পৌর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বেসরকারি এক ক্লিনিকের মালিক আব্দুল আউয়াল রাজা। কাউন্সিলর না হয়েও রাজার নামে ফাঁকা জায়গা মৌখিকভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়।

মাদ্রাসা কাঁচা বাজারে ১৪টি দোকানের মধ্যে ১১টি বরাদ্দ পান ১১ জন কাউন্সিলর। আর ২ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মো. জাহিদুর রহমান জাহিদ দুটি দোকান এবং ৪ নং পৌর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল আউয়াল রাজা একটি দোকান বরাদ্দ পান। তড়িঘড়ি করে দোকান নির্মাণের পর বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছে পজিশন বিক্রি করে দেয়া হয়।

পৌরসভার হিসাব শাখা বলছে, জায়গা বরাদ্দ বাবদ পৌরসভায় ১২ টি দোকানের জন্য ৬১ হাজার ৫ শত টাকা এবং ২টি দোকানের জন্য ৪৮ হাজার টাকা পৌরসভায় জমা হয়েছে। এছাড়া প্রতিটির দোকান ঘরে প্রতি মাসে ভাড়া বাবদ ৬ শত টাকা করে রাজস্ব আয় হয় পৌরসভার। অর্থাৎ একটি দোকান বাবদ পৌর কর্তৃপক্ষ পেয়েছে ৪৮ থেকে ৬১ হাজার টাকা পর্যন্ত। কিন্তু এসব দোকানের ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতিটির দোকান নেয়ার জন্য তারা ১৫ থেকে ১৭ লাখ টাকা করে দিয়েছেন। 

পৌরসভার হিসাব অনুযায়ী, জায়গা বরাদ্দ বাবদ পৌরসভার কোষাগারে জমা হয়েছে ৭ লক্ষ ৩৮ হাজার টাকা। একটি দোকানের জায়গা ১০ লক্ষ থেকে ১৭ লাখ টাকা বিক্রি হয়েছে। গড়ে ১০ লাখ টাকা ধরা হলেও ১৪টি দোকান থেকে এক কোটি ৪০ লাখ টাকা লুটপাট করা হয়েছে।

মাদ্রাসা বাজারের স্থানীয় দোকানদার ভুট্টু সাহা কে বলেন, “মাদ্রাসা বাজারের পাশে গত বছর ১৪ টি দোকান ঘর নির্মাণ করা হয়। এক একটি দোকান ঘর বিক্রি করা হয়েছে ১৫ থেকে ২০ লক্ষ টাকা। কিন্তু পৌরসভায় কাগজে-কলমে পজিশন বিক্রির মূল্য সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে। এই মার্কেট নির্মাণ করে লুট করা হয়েছে কোটি টাকা।’’ 

বারনইকে দেওয়া দোকান মালিক রাজু‘র বক্তব্যে জানা যায়, নাটোর পৌরসভা থেকে পজিশন ক্রয় করা তৃতীয় পক্ষ তিনি। প্রথম পক্ষ পৌরসভা। দ্বিতীয় পক্ষ ৪ নং পৌর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সততা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের স্বত্বাধিকারী আব্দুল আউয়াল রাজা। দোকান মালিক রাজু বলেন, “রাজা ভাইয়ের নিকট থেকে ১৭ লক্ষ টাকা দিয়ে পজিশন ক্রয় করেছি। এই দোকানের ভাড়া পৌরসভায় দিতে হয় প্রতি মাসে ৬ শত টাকা।" 

দোকান মালিক মানিক সাহা বলেন, “নাটোর পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহিদুর রহমান জাহিদের মাধ্যমে পৌরসভায় ১০ লাখ টাকা দিয়ে পজিশন কিনেছি। ভাড়া বাবদ প্রতি মাসে ৬ শত টাকা পৌরসভায় দিতে হয়। এই মার্কেটের সব দোকান নাটোর পৌরসভার কাউন্সিলরদের নামে হয়েছে বলে শুনেছি আর সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহিদুর রহমান জাহিদ। মানিক সাহা ১০ লক্ষ টাকা দিলেও পৌরসভা পেয়েছে ৬২ হাজার টাকা। এ বিষয়ে কিছুই বলতে পারেননি মানিক সাহা। 

দোকান মালিক দুলাল হোসেন বলেন “দোকানঘরটি ১ বছর আগে পৌরসভা থেকে ১৮ লক্ষ টাকা দিয়ে ক্রয় করা হয়েছে। আর প্রতি মাসে ভাড়া দিতে হয় ৬ শত টাকা। আমি দোকানটি এক ব্যবসায়ীর কাছে মাসে ৬ হাজার টাকায় ভাড়া দিয়েছি।" 

দোকান মালিক হনু সাহা বলেন, “৩ বছর আগে পৌরসভার কাছ থেকে পজিশন ক্রয় করেছিলাম। যাতে ভ্যাট ট্যাক্স দিয়ে ৬২ হাজার টাকা খরচ পড়েছিল, আর চা নাস্তা করার জন্য পৌরসভায় কিছু দিতে হয়েছে। নিজ খরচে দোকান ঘর নির্মাণ করি এক বছর আগে। তিন বছর থেকেই পৌরসভায় প্রতি মাসে ৬ শত টাকা জায়গার ভাড়া দিচ্ছি।" যদি ৬২ হাজার টাকায় দোকান ক্রয় করা হয়ে থাকে, তাহলে বাকি টাকা কোথায় গেল? চা নাস্তা করার জন্য কত টাকা দেওয়া হয়েছিল? এমন প্রশ্নের কোন সঠিক উত্তর দিতে পারিনি কোন দোকান মালিকরা। 

নাটোর পৌরসভার হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা মো. মির্জা সালাহ উদ্দিনবারনইকে জানান, “মাদ্রাসা বাজারের পাশে ১০ ফিট ১২ ফিট মাপে মোট ১২টি এবং ৮ ফিট ১০ ফিট মাপে ২টি মোট ১৪ টি রুমের জায়গা মৌখিকভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয় নাটোর পৌরসভার ১২ জন কাউন্সিলরদের নামে। এছাড়া আব্দুল আউয়াল রাজা নামে একজনকে জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তারা নিজেরাই দোকানঘর নির্মাণ করে নিয়েছেন। জায়গা বরাদ্দ বাবদ পৌরসভায় ১২ টি জায়গার জন্য ৬১ হাজার ৫ শত টাকা এবং ২টি জায়গার জন্য ৪৮ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। প্রতিটির দোকান ঘরে প্রতি মাসে ভাড়া বাবদ ৬ শত টাকা করে রাজস্ব আয় হয় পৌরসভার।" 

এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে ৪ নং ওয়ার্ড পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল আউয়াল রাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয়, “ওমরা হজ পালনে জন্য সৌদি আরবে গিয়েছেন।"

পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মো. জাহিদুর রহমান জাহিদের তত্ত্বাবধানে ১৪টি দোকান নির্মাণ ও বিক্রি হয়েছে। ব্যবসায়ীদের কাছে কেন লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে পৌরসভায় জমা দেয়া হলোনা এবিষয়ে জানতে বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। একাধিকবার তার বাড়িতে গিয়েও তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। বন্ধু পাওয়া যায় জাহিদের মুঠোফোন।

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) নাটোর শাখার সভাপতি রেজাউল করিম রেজা বলেন, “দোকান মালিকরা যে টাকা দিলেন তার সামান্য জমা হলো পৌরসভায় আর লাখ লাখ টাকা কোনো হিসেব নেই। এটা অনিয়ম এবং দুর্নীতিও বটে। পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের দুর্নীতির কারণে উন্নয়ন উন্নয়ন বঞ্চিত হয়েছে পৌরবাসী। এই অনিয়ম এবং দুর্নীতি কারীদের বিরুদ্ধে, আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়া উচিত বলে, আমি মনে করি।" 

সাবেক পৌর কাউন্সিলদের অর্থ লুটপাটের বিষয়ে নাটোর পৌরসভার পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল হক বলেন, “মাদ্রাসা বাজারে নতুন করে নির্মিত ১৪ টি দোকান ঘর বরাদ্দ, অথবা জায়গা বরাদ্দের বিষয়ে, আমি কিছু জানি না। এ বিষয়টা ভালো জানেন সাবেক মেয়র ও কাউন্সিলররা। তবে যদি কোন অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়ে থাকে তাহলে, তদন্ত সাপেক্ষে অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"