এ বছর বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় টাইফুন রাগাসা বুধবার দক্ষিণ চীনে আঘাত হানে। এর আগে এটি তাইওয়ানে ১৫ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে এবং ভয়াবহ ঝড়ো হাওয়া ও প্রবল বর্ষণে হংকং বিপর্যস্ত হয়।
তাইওয়ান ও হংকংয়ে প্রভাব
তাইওয়ানের পূর্বাঞ্চলীয় হুয়ালিয়েন কাউন্টিতে এক বাঁধ-হ্রদ উপচে পড়ে পানির ঢল নেমে এলে ১৭ জন নিখোঁজ হয় বলে বুধবার ফায়ার সার্ভিস জানায়। সোমবার থেকে রাগাসার বাইরের অংশ দ্বীপটিকে ভিজিয়ে রেখেছে।
পর্যটনকেন্দ্র গুয়াংফুর বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সাধারণত দ্রুত লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হলেও এবার কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট সতর্কতা দেয়নি।
তাইওয়ানে প্রবল বর্ষণের সময় হংকংয়ে সমুদ্রতীরে বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়ে, যা রাস্তা ও ঘরবাড়ি প্লাবিত করে।
চীনে আঘাত
চীনের মেরিন কর্তৃপক্ষ এ বছর প্রথমবারের মতো সর্বোচ্চ লাল সতর্কতা জারি করে, গুয়াংডং প্রদেশে ২.৮ মিটার পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা জানায়।
রাগাসা পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে গত সপ্তাহে সৃষ্টি হয় এবং উষ্ণ সমুদ্র ও অনুকূল আবহাওয়ার কারণে দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করে সোমবার ক্যাটাগরি–৫ সুপার টাইফুনে রূপ নেয়, যার বাতাসের গতি ঘণ্টায় ২৬০ কিমি ছাড়ায়। বর্তমানে এটি দুর্বল হয়ে ক্যাটাগরি–৩ এ নেমে এসেছে, তবুও গাছ উপড়ে ফেলা, বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে ফেলা, জানালা চূর্ণ করা ও ভবন ক্ষতিগ্রস্ত করার মতো শক্তি রয়ে গেছে।
চিম লি, ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের জ্যেষ্ঠ জ্বালানি ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ বলেন, “পার্ল রিভার ডেল্টা টাইফুনের জন্য সবচেয়ে প্রস্তুত অঞ্চলগুলোর একটি। তাই বড় ধরনের বিপর্যয় আশা করা হচ্ছে না।”
তবে বুধবার হংকংয়ে জিজিন গোল্ড ইন্টারন্যাশনাল ৩.২ বিলিয়ন ডলারের আইপিও স্থগিত করে।
এরপর রাগাসা হংকংয়ের প্রায় ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণ দিয়ে অতিক্রম করে চীনের দক্ষিণ উপকূলে আঘাত হানে। ঝড়ের পথে থাকা গুয়াংঝু, শেনঝেন, ফোশান ও দোংগুয়ানের মতো শহরে প্রায় ৫ কোটি মানুষ বসবাস করে।
ব্যাপক সরিয়ে নেওয়া ও ত্রাণ
চীনা রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানায়, জরুরি ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার গুয়াংডংয়ে হাজার হাজার তাঁবু, ভাঁজ খাট, জরুরি আলোকসামগ্রীসহ উদ্ধার সামগ্রী পাঠায়। ইতিমধ্যে ৭ লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
কিছু দোকানপাট ও রেস্তোরাঁ বড় ভাড়া করা ট্রাক সামনে পার্ক করে ঝড়ের ক্ষতি ঠেকানোর চেষ্টা করে।
শেনঝেনের এক বাসিন্দা লিয়াং বলেন, “আমরা ওপরের তলায় থাকি, তাই ঝুঁকি কম মনে হয়েছে। বাচ্চাদের নিয়ে বের হয়েছি ঝড়-বৃষ্টি উপভোগ করতে।”
শেনঝেন বে ব্রিজের নিচে ঝড় দেখার জন্য জড়ো হওয়া ভিড়কে পুলিশ সরিয়ে দেয়।
চীনের মেরিন কর্তৃপক্ষ সতর্ক করেছে, শেনঝেনে বিশেষ করে নিচু এলাকায় প্লাবনের ঝুঁকি রয়েছে এবং বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ঝড়ের সতর্কতা জারি থাকতে পারে।
হংকং ও ম্যাকাও পরিস্থিতি
মঙ্গলবার হংকংয়ের সমুদ্রতীরে ঝড় দেখতে গিয়ে এক নারী ও তার পাঁচ বছর বয়সী ছেলে সমুদ্রে ভেসে যায়। বর্তমানে তারা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রয়েছে।
বুধবার সকালে শহরের টাইফুন সতর্কতা ১০ থেকে কমিয়ে ৮ করা হলেও শহর কার্যত অচলাবস্থায় থাকে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছে এবং সরকার খোলা ৫০টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে ৭৯১ জন আশ্রয় নেয়।
ম্যাকাওয়ে ক্যাসিনোগুলোকে কার্যক্রম বন্ধ করতে হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওতে দেখা গেছে, ঝড়ো হাওয়া ও উড়ন্ত বস্তু থেকে রক্ষা পেতে ক্যাসিনো রিসোর্টগুলোর দরজা সিল করে দেওয়া হয়েছে।