পাখির জাত, খাওয়ার ধরন দেখে ভাগ্যগণনা! ‘অরনিথোম্যান্সি’র চর্চা চলত প্রাচীন ভারতেও

বিজ্ঞান | ফোরপিলার্সবিডি.কম
প্রকাশিত:
পাখির জাত, খাওয়ার ধরন দেখে ভাগ্যগণনা! ‘অরনিথোম্যান্সি’র চর্চা চলত প্রাচীন ভারতেও

বাংলায় ছা়পাখানা তৈরির পর থেকেই প্রায় একটি বই ফুটপাথে শোভা পেতে শুরু করে। সেটির নাম ‘কাক চরিত্র’। সেই বইতে কাকের গতিবিধি ও আচরণ বিশ্লেষণ করে মানুষের ভাগ্যনির্ণয়ের পদ্ধতি বর্ণিত রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে কাককে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন অভিষ্ট সিদ্ধির উপায়।

বাংলায় ছা়পাখানা তৈরির পর থেকেই প্রায় একটি বই ফুটপাথে শোভা পেতে শুরু করে। সেটির নাম ‘কাক চরিত্র’। সেই বইতে কাকের গতিবিধি ও আচরণ বিশ্লেষণ করে মানুষের ভাগ্যনির্ণয়ের পদ্ধতি বর্ণিত রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে কাককে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন অভিষ্ট সিদ্ধির উপায়।

‘কাক চরিত্র’ বইটি এতটাই আজগুবি যে, তার অধিকাংশ ক্রেতাই নিছক মজা পাওয়ার জন্য বইটি সংগ্রহ করেন। কিন্তু, আজ থেকে কয়েক হাজার বছর আগে ব্যাপারটা মোটেই ‘মজার’ ছিল না। কাক বা আরও বেশ কিছু পাখির আচরণ, ডাকাডাকি ও গতিবিধি বিশ্লেষণ করে মানুষের ভাগ্য নির্ধারণের বিদ্যা বিভিন্ন সভ্যতাতেই প্রচলিত ছিল। সেই বিদ্যা কোথাও ‘অরনিথোম্যান্সি’, আবার কোথাও বা ‘অগারি’ নামে পরিচিত ছিল।

 ‘কাক চরিত্র’ বইটি এতটাই আজগুবি যে, তার অধিকাংশ ক্রেতাই নিছক মজা পাওয়ার জন্য বইটি সংগ্রহ করেন। কিন্তু, আজ থেকে কয়েক হাজার বছর আগে ব্যাপারটা মোটেই ‘মজার’ ছিল না। কাক বা আরও বেশ কিছু পাখির আচরণ, ডাকাডাকি ও গতিবিধি বিশ্লেষণ করে মানুষের ভাগ্য নির্ধারণের বিদ্যা বিভিন্ন সভ্যতাতেই প্রচলিত ছিল। সেই বিদ্যা কোথাও ‘অরনিথোম্যান্সি’, আবার কোথাও বা ‘অগারি’ নামে পরিচিত ছিল।

প্রাচীন গ্রিসে মহাকবি হোমার বা হেসিয়ডের রচনায় অরনিথোম্যান্সির উল্লেখ রয়েছে। হোমার রচিত মহাকাব্য ‘ওডেসি’-তে একটি ঈগলকে আকাশের ডান দিকে তিন বার এক মৃত ঘুঘু-সহ উড়ন্ত অবস্থায় দেখা গেলে, তার ব্যাখ্যা ওডেসিয়াসকে জানাতে এক জন অগার (যাঁরা অগারি চর্চা করতেন)-কে নিয়ে আসা হয়। সেই ব্যক্তি জানান, ঈগলের এ হেন উড়ান থেকে জানা যাচ্ছে, ওডেসিয়াসের স্ত্রীর পাণিপ্রার্থীদের মৃত্যু ঘটেছে। প্রসঙ্গত, ট্রয়ের যুদ্ধে যোগদান করতে ওডেসিয়াস রাজ্য ছেড়েছিলেন। যুদ্ধশেষে বাকি সব রাজারা ফিরে এলেও ওডেসিয়াসের ফিরতে ১০ বছর সময় লেগে গিয়েছিল। এই সময়ে তাঁর স্ত্রী পেনেলোপিকে বহু যুবক বিয়ে করার জন্য উঠেপড়ে লাগেন।

প্রাচীন গ্রিসে মহাকবি হোমার বা হেসিয়ডের রচনায় অরনিথোম্যান্সির উল্লেখ রয়েছে। হোমার রচিত মহাকাব্য ‘ওডেসি’-তে একটি ঈগলকে আকাশের ডান দিকে তিন বার এক মৃত ঘুঘু-সহ উড়ন্ত অবস্থায় দেখা গেলে, তার ব্যাখ্যা ওডেসিয়াসকে জানাতে এক জন অগার (যাঁরা অগারি চর্চা করতেন)-কে নিয়ে আসা হয়। সেই ব্যক্তি জানান, ঈগলের এ হেন উড়ান থেকে জানা যাচ্ছে, ওডেসিয়াসের স্ত্রীর পাণিপ্রার্থীদের মৃত্যু ঘটেছে। প্রসঙ্গত, ট্রয়ের যুদ্ধে যোগদান করতে ওডেসিয়াস রাজ্য ছেড়েছিলেন। যুদ্ধশেষে বাকি সব রাজারা ফিরে এলেও ওডেসিয়াসের ফিরতে ১০ বছর সময় লেগে গিয়েছিল। এই সময়ে তাঁর স্ত্রী পেনেলোপিকে বহু যুবক বিয়ে করার জন্য উঠেপড়ে লাগেন।

গ্রিক ট্র্যাজেডির জনক ইস্কাইলাস তাঁর ‘প্রমিথিউস’ নাটকে জানিয়েছিলেন যে, কিংবদন্তির বীর প্রমিথিউস (যিনি মানুষের জন্য দেবতাদের কাছ থেকে আগুন চুরি করে এনেছিলেন) নাকি অরনিথোম্যান্সির প্রবর্তক। প্রমিথিউসই নাকি নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন, কোন পাখিগুলি ‘শুভ’ আর কোনগুলি ‘অশুভ’ সঙ্কেত বহন করে।

গ্রিক ট্র্যাজেডির জনক ইস্কাইলাস তাঁর ‘প্রমিথিউস’ নাটকে জানিয়েছিলেন যে, কিংবদন্তির বীর প্রমিথিউস (যিনি মানুষের জন্য দেবতাদের কাছ থেকে আগুন চুরি করে এনেছিলেন) নাকি অরনিথোম্যান্সির প্রবর্তক। প্রমিথিউসই নাকি নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন, কোন পাখিগুলি ‘শুভ’ আর কোনগুলি ‘অশুভ’ সঙ্কেত বহন করে।

অরনিথোম্যান্সি দু’রকম হতে পারে। এক, কোনও অগার স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে পাখিদের আচরণ দেখে ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারেন। দুই, কেউ পেশাদার অগারের কাছে গিয়ে তাঁর দেখা বা তাঁর স্বপ্নে দেখা কোনও পাখির আচরণের ব্যাখ্যা জেনে নিতে পারেন।

অরনিথোম্যান্সি দু’রকম হতে পারে। এক, কোনও অগার স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে পাখিদের আচরণ দেখে ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারেন। দুই, কেউ পেশাদার অগারের কাছে গিয়ে তাঁর দেখা বা তাঁর স্বপ্নে দেখা কোনও পাখির আচরণের ব্যাখ্যা জেনে নিতে পারেন।

গ্রিক অরনিথোম্যান্সির সঙ্গে রোমান অগারির কিছু পার্থক্য ছিল। রোমান অগাররা সাধারণত পাখির উড়ান দেখে ভবিষ্যদ্বাণী করতেন। প্রাচীন রোমে অগাররা পুরোহিতের মর্যাদাপ্রাপ্ত ছিলেন। রোমান অগারদের দাবি ছিল, তাঁরা পাখিদের আচরণ দেখে ঈশ্বরের অভিপ্রায় বুঝতে পারেন।

গ্রিক অরনিথোম্যান্সির সঙ্গে রোমান অগারির কিছু পার্থক্য ছিল। রোমান অগাররা সাধারণত পাখির উড়ান দেখে ভবিষ্যদ্বাণী করতেন। প্রাচীন রোমে অগাররা পুরোহিতের মর্যাদাপ্রাপ্ত ছিলেন। রোমান অগারদের দাবি ছিল, তাঁরা পাখিদের আচরণ দেখে ঈশ্বরের অভিপ্রায় বুঝতে পারেন।

রোমান অগাররা পাখির উড়ানের দিক, তাদের জাত, সংখ্যা, এমনকি তাদের খাওয়ার ধরন ও খাবারের পরিমাণ দেখেও নাকি ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারতেন। ব্যক্তিমানুষের ভাগ্যগণনার পাশাপাশি, তাঁরা ব্যবসা-বাণিজ্য, যুদ্ধ এবং ধর্ম বিষয়েও ভবিষ্যদ্বাণী করতেন।

রোমান অগাররা পাখির উড়ানের দিক, তাদের জাত, সংখ্যা, এমনকি তাদের খাওয়ার ধরন ও খাবারের পরিমাণ দেখেও নাকি ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারতেন। ব্যক্তিমানুষের ভাগ্যগণনার পাশাপাশি, তাঁরা ব্যবসা-বাণিজ্য, যুদ্ধ এবং ধর্ম বিষয়েও ভবিষ্যদ্বাণী করতেন।

প্রাচীনকালে ইহুদিদের মধ্যেও যে অরনিথোলজির চর্চা প্রচলিত ছিল, তার প্রমাণ রয়েছে বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে। ইহুদি কিংবদন্তি অনুযায়ী, রাজা সলোমন ছিলেন বহুবিদ্যা বিশারদ। সর্বোপরি বিভিন্ন রকমের জাদুবিদ্যায় তাঁর বিপুল দক্ষতা ছিল। এই জাদুগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল পাখিদের আচরণ বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যৎ নির্ধারণের ক্ষমতা। হিব্রু বাইবেলের বিবরণ ও বিশ্লেষণ থেকে জানা যায়, সলোমন প্রাচ্য ও প্রাচীন মিশরের যাবতীয় জ্ঞান আয়ত্ত করেছিলেন। তার মধ্যে পাখিদের ভাষা অন্যতম।

প্রাচীনকালে ইহুদিদের মধ্যেও যে অরনিথোলজির চর্চা প্রচলিত ছিল, তার প্রমাণ রয়েছে বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে। ইহুদি কিংবদন্তি অনুযায়ী, রাজা সলোমন ছিলেন বহুবিদ্যা বিশারদ। সর্বোপরি বিভিন্ন রকমের জাদুবিদ্যায় তাঁর বিপুল দক্ষতা ছিল। এই জাদুগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল পাখিদের আচরণ বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যৎ নির্ধারণের ক্ষমতা। হিব্রু বাইবেলের বিবরণ ও বিশ্লেষণ থেকে জানা যায়, সলোমন প্রাচ্য ও প্রাচীন মিশরের যাবতীয় জ্ঞান আয়ত্ত করেছিলেন। তার মধ্যে পাখিদের ভাষা অন্যতম।

ইহুদি ধর্মগ্রন্থ ‘তালমুদ’-এ বর্ণিত একটি কাহিনি অনুসারে, সলোমন তাঁর বিখ্যাত মন্দিরটি নির্মাণের সময় শামির নামে এক পোকাকে পাথর কাটার কাজে লাগিয়েছিলেন। শামিরের মালিক ছিল ‘হুপো’ নামের এক পাখি। সলোমন দানবরাজ অ্যাশমোডাইকে প্রভাবিত করে হুপোর অবস্থান জানতে চান। দানবেরা নাকি পাখিদের সঙ্গে কথোপকথনের বিদ্যা জানত। সলোমনকে তারা এই বিষয়ে সাহায্য করে।

ইহুদি ধর্মগ্রন্থ ‘তালমুদ’-এ বর্ণিত একটি কাহিনি অনুসারে, সলোমন তাঁর বিখ্যাত মন্দিরটি নির্মাণের সময় শামির নামে এক পোকাকে পাথর কাটার কাজে লাগিয়েছিলেন। শামিরের মালিক ছিল ‘হুপো’ নামের এক পাখি। সলোমন দানবরাজ অ্যাশমোডাইকে প্রভাবিত করে হুপোর অবস্থান জানতে চান। দানবেরা নাকি পাখিদের সঙ্গে কথোপকথনের বিদ্যা জানত। সলোমনকে তারা এই বিষয়ে সাহায্য করে।

সলোমনের এই কাহিনিটি থেকে অনুমান করা যায়, ‘দানব’রাই অরনিথোম্যান্সির প্রাচীনতম চর্চাকারী। সলোমনের নামে চলিত দু’খানি গ্রন্থ— ‘গ্রেটার কি অফ সলোমন’ এবং ‘লেসার কি অফ সলোমন’ দানব-সহ বিভিন্ন অতিপ্রাকৃত প্রাণীর বর্ণনা দেয়। সেই সঙ্গে এদের উপর প্রভুত্ব বিস্তার করে অতিলৌকিক শক্তির অধিকারী হওয়ার পদ্ধতিও বর্ণনা করে। এই সব শক্তির মধ্যে পশু-পাখির ভাষা বোঝার ক্ষমতা অন্যতম। ভারতের জনপ্রিয় কিংবদন্তি ‘বত্রিশ পুত্তলিকা’ এবং ‘বেতাল পঞ্চবিংশতি’তে রাজা বিক্রমাদিত্যেরও এই ক্ষমতা ছিল বলা হয়েছে।

সলোমনের এই কাহিনিটি থেকে অনুমান করা যায়, ‘দানব’রাই অরনিথোম্যান্সির প্রাচীনতম চর্চাকারী। সলোমনের নামে চলিত দু’খানি গ্রন্থ— ‘গ্রেটার কি অফ সলোমন’ এবং ‘লেসার কি অফ সলোমন’ দানব-সহ বিভিন্ন অতিপ্রাকৃত প্রাণীর বর্ণনা দেয়। সেই সঙ্গে এদের উপর প্রভুত্ব বিস্তার করে অতিলৌকিক শক্তির অধিকারী হওয়ার পদ্ধতিও বর্ণনা করে। এই সব শক্তির মধ্যে পশু-পাখির ভাষা বোঝার ক্ষমতা অন্যতম। ভারতের জনপ্রিয় কিংবদন্তি ‘বত্রিশ পুত্তলিকা’ এবং ‘বেতাল পঞ্চবিংশতি’তে রাজা বিক্রমাদিত্যেরও এই ক্ষমতা ছিল বলা হয়েছে।

রাজা সলোমন ও রানি শেবার কিংবদন্তি থেকে জানা যায়, তাঁদের মধ্যে দৌত্য করেছিল ‘হুদহুদ’ নামের একটি পাখি। প্রসঙ্গত, হুদহুদ আসলে হুপোরই আর এক নাম।

রাজা সলোমন ও রানি শেবার কিংবদন্তি থেকে জানা যায়, তাঁদের মধ্যে দৌত্য করেছিল ‘হুদহুদ’ নামের একটি পাখি। প্রসঙ্গত, হুদহুদ আসলে হুপোরই আর এক নাম।

প্রাচীন এই সব কাহিনি-কিংবদন্তি ছাড়াও আনাতোলিয়ার হিটাইটরা ত্রয়োদশ বা চতুর্দশ শতকে অরনিথোম্যান্সির চর্চা করত বলে জানা যায়।

প্রাচীন এই সব কাহিনি-কিংবদন্তি ছাড়াও আনাতোলিয়ার হিটাইটরা ত্রয়োদশ বা চতুর্দশ শতকে অরনিথোম্যান্সির চর্চা করত বলে জানা যায়।

মধ্যযুগে ইউরোপে অ্যালকেমিস্ট ও ডার্ক ম্যাজিক চর্চাকারীদের অনেকেই পাখির আচরণ নিয়ে বিবিধ গবেষণা করেছিলেন বলে জানা যায়। তাঁদের কেউ কেউ অরনিথোম্যান্সিতে পারঙ্গম ছিলেন বলেও কথিত আছে।

মধ্যযুগে ইউরোপে অ্যালকেমিস্ট ও ডার্ক ম্যাজিক চর্চাকারীদের অনেকেই পাখির আচরণ নিয়ে বিবিধ গবেষণা করেছিলেন বলে জানা যায়। তাঁদের কেউ কেউ অরনিথোম্যান্সিতে পারঙ্গম ছিলেন বলেও কথিত আছে।

হ্যারি পটারের কহিনিতেও রয়েছে অরনিথোম্যানসির উল্লেখ। হ্যারিদের জাদু-ইস্কুল হগওয়ার্টসে সেভেন্থ ইয়ারে ডিভিনেশন শিক্ষিকা প্রফেসর ট্রিলনি অরনিথোম্যান্সির ক্লাস নেন বলে উল্লিখিত রয়েছে।

হ্যারি পটারের কহিনিতেও রয়েছে অরনিথোম্যানসির উল্লেখ। হ্যারিদের জাদু-ইস্কুল হগওয়ার্টসে সেভেন্থ ইয়ারে ডিভিনেশন শিক্ষিকা প্রফেসর ট্রিলনি অরনিথোম্যান্সির ক্লাস নেন বলে উল্লিখিত রয়েছে।

এশিয়ার বিভিন্ন সংস্কৃতিতে অরনিথোম্যান্সির অস্তিত্বের কথা জানা যায়। ভারতীয় সংস্কৃতিতে এর উল্লেখযোগ্য উদাহরণ অবশ্যই ‘কাক চরিত্র’। তবে, এর বাইরেও জনজাতিদের মধ্যে এই বিদ্যার চল রয়েছে, যা মৌখিক পরম্পরায় টিকে রয়েছে।

এশিয়ার বিভিন্ন সংস্কৃতিতে অরনিথোম্যান্সির অস্তিত্বের কথা জানা যায়। ভারতীয় সংস্কৃতিতে এর উল্লেখযোগ্য উদাহরণ অবশ্যই ‘কাক চরিত্র’। তবে, এর বাইরেও জনজাতিদের মধ্যে এই বিদ্যার চল রয়েছে, যা মৌখিক পরম্পরায় টিকে রয়েছে।

অরনিথোম্যান্সিতে সব থেকে বেশি আলোচিত হয় কাক আর পেঁচারা। ইউরোপে ম্যাগপাই নিয়েও বিস্তর সংস্কার রয়েছে। তবে রাত্রিচর পাখিদের ঘিরে অশুভ সঙ্কেতের কথা বার বার ইউরোপীয় সাহিত্যে বা লোকবিশ্বাসে ঘুরেফিরে আসে।

অরনিথোম্যান্সিতে সব থেকে বেশি আলোচিত হয় কাক আর পেঁচারা। ইউরোপে ম্যাগপাই নিয়েও বিস্তর সংস্কার রয়েছে। তবে রাত্রিচর পাখিদের ঘিরে অশুভ সঙ্কেতের কথা বার বার ইউরোপীয় সাহিত্যে বা লোকবিশ্বাসে ঘুরেফিরে আসে।

কেন মানুষ পাখিদের আচরণে ভবিষ্যৎ দেখতে চেয়েছিল— এই প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, পাখি যে হেতু আকাশচারী জীব, মানুষ তাকে স্বর্গের নিকটবর্তী প্রাণী বলে মনে করে। বহু সংস্কৃতিতে পাখি ‘ঈশ্বরের দূত’ও। খ্রিস্ট ধর্মে ঘুঘুপাখিকে ‘পবিত্র আত্মা’র প্রতীক বলে বর্ণনা করা হয়। এই সব কারণেই পাখিদের আচরণে ভবিতব্যকে দেখতে চেয়েছিল মানুষ। আর তা থেকেই জন্ম হয় অরনিথোম্যান্সির মতো বিদ্যাচর্চার।

 কেন মানুষ পাখিদের আচরণে ভবিষ্যৎ দেখতে চেয়েছিল— এই প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, পাখি যে হেতু আকাশচারী জীব, মানুষ তাকে স্বর্গের নিকটবর্তী প্রাণী বলে মনে করে। বহু সংস্কৃতিতে পাখি ‘ঈশ্বরের দূত’ও। খ্রিস্ট ধর্মে ঘুঘুপাখিকে ‘পবিত্র আত্মা’র প্রতীক বলে বর্ণনা করা হয়। এই সব কারণেই পাখিদের আচরণে ভবিতব্যকে দেখতে চেয়েছিল মানুষ। আর তা থেকেই জন্ম হয় অরনিথোম্যান্সির মতো বিদ্যাচর্চার।

কাক বা পেঁচার মধ্যে মানুষ যুগে যুগে রহস্যময়তার সন্ধান পেয়েছে। কাকের আচরণ যে অনেক সময়েই বিদঘুটে, তা অনস্বীকার্য। এডগার অ্যালান পো-র কবিতা থেকে গ্রিম ভাইদের রূপকথায়, এমনকি শেক্সপিয়রের ‘ম্যাকবেথ’ ও ‘হ্যামলেট’ নাটকে কাক বা দাঁড়কাক রীতিমতো ইঙ্গিতময় ভূমিকায় উপস্থিত।

কাক বা পেঁচার মধ্যে মানুষ যুগে যুগে রহস্যময়তার সন্ধান পেয়েছে। কাকের আচরণ যে অনেক সময়েই বিদঘুটে, তা অনস্বীকার্য। এডগার অ্যালান পো-র কবিতা থেকে গ্রিম ভাইদের রূপকথায়, এমনকি শেক্সপিয়রের ‘ম্যাকবেথ’ ও ‘হ্যামলেট’ নাটকে কাক বা দাঁড়কাক রীতিমতো ইঙ্গিতময় ভূমিকায় উপস্থিত।

ভারতে প্রচলিত ‘কাক চরিত্র’ যত আজগুবি বই-ই হোক না কেন, এর মধ্যে নিহিত রয়েছে আদিম জাদুবিশ্বাস। এই বইতে বর্ণিত ক্রিয়াকলাপকে উদ্ভট বলে মনে হলেও এগুলি যে ‘কালো জাদু’ হিসাবে এক সময়ে চর্চিত হত, তা বোঝা যায়। শেষমেশ একটা প্রশ্ন থেকেই যায় যে, মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির সংযুক্তি যে সময় নিবিড় ছিল, তখনই এ ধরনের বিদ্যার জন্ম হয়েছিল। আজকের প্রকৃতি-বিচ্ছিন্ন মানুষের কাছে সেই বিদ্যা নেহাতই আজগুবি।

ভারতে প্রচলিত ‘কাক চরিত্র’ যত আজগুবি বই-ই হোক না কেন, এর মধ্যে নিহিত রয়েছে আদিম জাদুবিশ্বাস। এই বইতে বর্ণিত ক্রিয়াকলাপকে উদ্ভট বলে মনে হলেও এগুলি যে ‘কালো জাদু’ হিসাবে এক সময়ে চর্চিত হত, তা বোঝা যায়। শেষমেশ একটা প্রশ্ন থেকেই যায় যে, মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির সংযুক্তি যে সময় নিবিড় ছিল, তখনই এ ধরনের বিদ্যার জন্ম হয়েছিল। আজকের প্রকৃতি-বিচ্ছিন্ন মানুষের কাছে সেই বিদ্যা নেহাতই আজগুবি।

সব ছবি: পিক্স্যাবে ও সংগৃহীত।

বিজ্ঞান বিভাগের আরও খবর

পৃথিবীতে মানুষ কিভাবে ও কেন এসেছে? বিজ্ঞান ও বিবর্তন

মানুষ পৃথিবীতে কেন এসেছে? এই প্রশ্নটি মানুষের প্রাচীনতম কৌতূহলের মধ্যে একটি। ধর্ম, দর্শন এবং বিজ্ঞান—সবই এই প্রশ্নের ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান বিশেষভাবে বিবর্তন তত্ত্ব (Evolution Theory) এবং জীববিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে এটির উত্তর দেয়।

এই আর্টিকেলে আমরা জানব—

  • মানুষ কিভাবে এসেছে

  • বিবর্তন তত্ত্ব অনুযায়ী মানুষের উত্পত্তি

  • অন্যান্য বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা

  • মানুষের ইতিহাস এবং পরিবেশের সঙ্গে সম্পর্ক


১. বিবর্তন তত্ত্ব এবং মানুষের উত্পত্তি

চার্লস ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব অনুসারে, পৃথিবীর সমস্ত জীব একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে বিবর্তিত হয়েছে।

মানুষের বিবর্তন

  • মানুষ এবং বন্য বানর একই পূর্বপুরুষ থেকে এসেছে।

  • প্রায় ৬–৭ মিলিয়ন বছর আগে আমাদের পূর্বপুরুষ বনাঞ্চলে বসবাস করত।

  • মানবজাতি ধীরে ধীরে দুই পায়ে হাঁটার ক্ষমতা, বড় মস্তিষ্ক, এবং সামাজিক জীবন গড়ে তুলতে শুরু করে।

হোমিনিডসের ধাপ

  • সৌপিথেকাস (Sahelanthropus): প্রায় ৬–৭ মিলিয়ন বছর আগে।

  • অস্ট্রালোপিথেকাস (Australopithecus): ৪–২ মিলিয়ন বছর আগে, দুই পায়ে হাঁটার দক্ষতা।

  • হোমো হ্যাবিলিস (Homo habilis): প্রায় ২.৪–১.৪ মিলিয়ন বছর আগে, সরঞ্জাম ব্যবহার শুরু।

  • হোমো ইরেক্টাস (Homo erectus): প্রায় ১.৯ মিলিয়ন–১ লাখ বছর আগে, আগুন ব্যবহার।

  • হোমো স্যাপিয়েন্স (Homo sapiens): প্রায় ৩–৪ লাখ বছর আগে, বুদ্ধিমত্তা ও ভাষার বিকাশ।

বিজ্ঞানীরা জিনোম বিশ্লেষণ ও প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানের মাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন যে, মানুষ একটি ধারাবাহিক বিবর্তনের ফলাফল।


২. মানুষ কেন এসেছে? – বিজ্ঞানিক ব্যাখ্যা

বিজ্ঞানীদের মতে, মানুষের পৃথিবীতে আগমন একেবারেই দৃশ্যমান প্রক্রিয়ার ফল। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলো হলো:

  1. পরিবেশের পরিবর্তন

    • প্রায় ৭ মিলিয়ন বছর আগে, আফ্রিকার বনাঞ্চল অনেকাংশে ঘাসের জমিতে রূপান্তরিত হয়।

    • দুই পায়ে হাঁটার ক্ষমতা বনাঞ্চলের বদলে মেলানো ভূমিতে সুবিধাজনক হয়ে ওঠে।

  2. খাদ্য ও বুদ্ধিমত্তা

    • ফল, বাদাম, শিকার—এইসব খাদ্যের জন্য কৌশলী পরিকল্পনা ও হাতের দক্ষতা দরকার ছিল।

    • বড় মস্তিষ্ক এবং জটিল চিন্তাভাবনার ক্ষমতা মানুষের অভিযোজনকে ত্বরান্বিত করে।

  3. সামাজিক জীবন

    • গোষ্ঠীভিত্তিক জীবন, ভাষা ও সহযোগিতার মাধ্যমে মানুষ নিরাপদে জীবনযাপন শিখেছে।

    • সামাজিক যোগাযোগ মানুষের বেঁচে থাকা এবং উন্নতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


৩. অন্যান্য বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা

জীবন ও মহাবিশ্বের প্রেক্ষাপট

  • পৃথিবীতে প্রাণ কখনও “অ্যাক্সিডেন্ট” হিসেবে এসেছে, বা প্যান্স্পার্মিয়া থিওরি অনুযায়ী মহাবিশ্ব থেকে প্রাণের ধারা এসেছে।

  • তবে এই মতবাদ সরাসরি মানুষের আগমন ব্যাখ্যা করতে পারে না; এটি কেবল জীবনের সূচনা বোঝায়।

জিনগত বৈচিত্র্য

  • মানুষের জিনোমে দেখা যায়, প্রায় ১–২% ন্যেয়ানডারথাল ও ডেনিসোভান প্রজাতির জিন সংমিশ্রিত হয়েছে।

  • এটি দেখায়, মানবজাতির বিবর্তন শুধুমাত্র এক প্রজাতির নয়, একাধিক প্রজাতির মিশ্রণের ফল।


৪. মানুষের ইতিহাস ও অভিযোজন

মানুষ কেবল শারীরিকভাবে নয়, মানসিকভাবে ও সাংস্কৃতিকভাবে বিবর্তিত হয়েছে।

  • শিকার ও কৃষি: প্রায় ১০,০০০ বছর আগে মানুষ কৃষি শুরু করে।

  • ভাষা ও শিল্প: মানুষের জ্ঞানের বিস্তার এবং সভ্যতার সূচনা।

  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: বর্তমানের মানুষের ক্ষমতা প্রায়শই পূর্বপুরুষদের তুলনায় অসম্ভব বিস্তৃত।

মানব সভ্যতার এই ধাপগুলি দেখায় যে, মানুষ শুধুমাত্র বেঁচে থাকার জন্য নয়, পরিবেশ ও সামাজিক জটিলতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে এসেছে।


 

পৃথিবীতে মানুষ এসেছে একাধিক কারণের মিলনের মাধ্যমে—বিবর্তন, পরিবেশগত পরিবর্তন, খাদ্য ও বুদ্ধিমত্তা, সামাজিক জীবন এবং জিনগত বৈচিত্র্য
বিজ্ঞান আমাদের শেখায় যে, মানুষের আগমন কোন এক রহস্যময় পরিকল্পনা নয়, বরং প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার ফল। আমরা সেই প্রক্রিয়ার একটি চলমান অংশ।

বালু থেকে যেভাবে RAM বানানো হয়?

আমরা প্রতিদিনই স্মার্টফোন, ল্যাপটপ বা ডেস্কটপে RAM-এর ব্যবহার করি।
কিন্তু আপনি কি জানেন, এই RAM বা Random Access Memory আসলে তৈরি হয় বালু থেকে?
হ্যাঁ, আপনি ঠিকই পড়েছেন — সমুদ্রের উপকূলের ধুলোমাটি বা সাদা বালু একদিন হয়ে ওঠে আপনার কম্পিউটারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ!

চলুন, জেনে নিই কীভাবে বালুর মত সাধারণ একটি পদার্থ রূপ নেয় অত্যাধুনিক র‌্যাম চিপে।

 

???? ধাপ ১: বালু মানেই সিলিকা (Silicon Dioxide)

সাধারণ বালুর অন্যতম উপাদান হলো সিলিকা (SiO₂), যা মূলত সিলিকনঅক্সিজেনের যৌগ। পৃথিবীতে প্রচুর পরিমাণে এই উপাদান পাওয়া যায়। প্রযুক্তির জন্য যেটা দরকার তা হলো বিশুদ্ধ সিলিকন (Pure Silicon)

???? মনে রাখুন: RAM তৈরি হয় সিলিকন চিপ দিয়ে, আর এই সিলিকন আসে বালু থেকেই।

???? ধাপ ২: সিলিকা থেকে সিলিকন আলাদা করা

প্রথমে উচ্চতাপ প্রয়োগ করে বালু থেকে অক্সিজেন সরিয়ে বিশুদ্ধ সিলিকন তৈরি করা হয়। সাধারণত এই প্রক্রিয়ায় কার্বন ব্যবহার করে সিলিকা গলিয়ে ফেলা হয়। 

SiO₂ + C → Si + CO₂ এই সিলিকন খুবই খাঁটি ও শক্তিশালী, যা পরবর্তীতে সেমিকন্ডাক্টর হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

???? ধাপ ৩: সিলিকন ওয়েফার (Silicon Wafer) তৈরি

  • বিশুদ্ধ সিলিকন গলিয়ে বড় একক স্ফটিক ব্লক (Ingot) বানানো হয়।

  • এরপর এটি পাতলা পাতলা ডিস্ক আকারে কাটা হয় — যাকে বলে সিলিকন ওয়েফার

এই ওয়েফারই হলো সব আধুনিক চিপ তৈরির মূল প্ল্যাটফর্ম। একে মসৃণ ও পরিষ্কার করা হয় যাতে সার্কিট বসানো যায়।

???? ধাপ ৪: মাইক্রোচিপ ডিজাইন ও ট্রানজিস্টর বসানো

RAM তৈরি করতে হলে সিলিকন ওয়েফারের উপর লাখ লাখ ট্রানজিস্টর ও ক্যাপাসিটর বসানো হয়।

এই ধাপে যা করা হয়:

  1. Photolithography নামের প্রযুক্তিতে মাইক্রো লেভেলে ডিজাইন বসানো হয়।

  2. ট্রানজিস্টর গঠন করা হয় যা তথ্য ধারণ ও প্রবাহের জন্য প্রয়োজনীয়।

  3. বহু ধাপে ধাতব স্তর, ডোপিং ও রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় একটি পূর্ণাঙ্গ RAM চিপ তৈরি করা হয়।

???? ধাপ ৫: টেস্টিং ও প্যাকেজিং

  • প্রতিটি চিপ বিভিন্ন ধরণের তাপ, গতি, তথ্য ধারণক্ষমতা ইত্যাদির উপর পরীক্ষা করা হয়।

  • সফল হলে চিপটি প্লাস্টিক বা মেটালের কেসিং দিয়ে ঘিরে RAM মডিউলে রূপান্তর করা হয়।

???? ধাপ ৬: আপনার কম্পিউটারে RAM হিসেবে ব্যবহার

এখন এই RAM মডিউল:

  • আপনার কম্পিউটারে ঢোকে

  • প্রসেসরের পাশে বসে

  • তথ্য ধরে রাখে ও দ্রুত অ্যাক্সেস দেয়

  • সফটওয়্যার চালাতে সাহায্য করে

যা শুরু হয়েছিল বালু দিয়ে, সেটাই এখন আপনি ব্যবহার করছেন গেম খেলতে, ভিডিও এডিট করতে কিংবা এই লেখাটি পড়তে।

???? RAM-এর এই যাত্রা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?

  • এটি আধুনিক বিশ্বের “মগজ” — দ্রুত তথ্য প্রক্রিয়ায় অপরিহার্য।

  • RAM যত বেশি ও দ্রুত, তত ভালো পারফরম্যান্স।

  • ভবিষ্যতের মেমোরি প্রযুক্তি — DDR5, HBM, LPDDR — সবই এই প্রযুক্তির উপর দাঁড়িয়ে।

 

বালু, যেটা আমরা স্রেফ সৈকতে দেখি বা নির্মাণে ব্যবহার করি, সেটি এখন আধুনিক কম্পিউটিং-এর মেরুদণ্ড।
এই যাত্রা — বালু থেকে RAM — শুধু প্রযুক্তির নয়, মানব সভ্যতার কল্পনাকে বাস্তবতায় রূপ দেওয়ার এক অনন্য উদাহরণ।

চাঁদে গাছ লাগানোর গবেষণা চলছে – NASA কি সফল হবে?

মহাকাশে সবুজ বিপ্লবের পথে প্রথম পদক্ষেপ

চাঁদ—যেখানে একফোঁটা বাতাস নেই, নেই পানির ধারা, নেই উর্বর মাটি। এমন এক শীতল, রুক্ষ, মৃত গ্রহে যদি একটিও গাছ জন্মায়, তাহলে সেটা হবে মানব সভ্যতার ইতিহাসে এক যুগান্তকারী সাফল্য। আর সেই অভাবনীয় স্বপ্ন বাস্তব করতে এগিয়ে এসেছে NASA। চাঁদে গাছ লাগানোর গবেষণা এখন আর কল্পবিজ্ঞান নয়, বাস্তবতার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।

চাঁদে উদ্ভিদ গবেষণার পেছনের বৈজ্ঞানিক উদ্দেশ্য

চাঁদে গাছ লাগানো কেন এত জরুরি?

NASA-এর লক্ষ্য শুধু চাঁদে ঘুরে আসা নয়, বরং সেখানে দীর্ঘমেয়াদি মানব বসতি গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু সেখানে বসবাস করতে গেলে লাগবে খাবার, অক্সিজেন, এবং একটি টেকসই পরিবেশ। পৃথিবী থেকে খাবার পাঠানো যেমন ব্যয়বহুল, তেমনই অক্সিজেন সরবরাহও অসম্ভব।
এখানে উদ্ভিদের প্রয়োজনীয়তা আসে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কারণে:

  1. অক্সিজেন উৎপাদন – উদ্ভিদ ফটোসিনথেসিস প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন তৈরি করে।

  2. খাদ্য সরবরাহ – উদ্ভিদ মানুষকে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন সরবরাহ করতে পারে।

  3. মানসিক স্বস্তি – দীর্ঘ সময় মহাকাশে কাটালে মানসিক চাপ বাড়ে, গাছপালা মানুষের মুড উন্নত করে।

NASA-এর পরীক্ষাগার থেকে চাঁদের মাটিতে

২০২২ সালে NASA এবং University of Florida প্রথমবারের মতো চাঁদের আসল মাটি (Apollo 11, 12 ও 17 মিশনের সময় সংগৃহীত) ব্যবহার করে উদ্ভিদ চাষের একটি পরীক্ষা পরিচালনা করে। তারা Arabidopsis thaliana নামে একটি ছোট উদ্ভিদ চাষ করে, যা সাধারণত পৃথিবীতে জেনেটিক গবেষণায় ব্যবহৃত হয়।

পরীক্ষার ফলাফল:

  • গাছ জন্মেছে!

  • তবে বাড়ার গতি ছিল খুব ধীর।

  • পাতাগুলো বিবর্ণ ছিল, যা বলে দেয় উদ্ভিদটি stressed condition-এ ছিল।

  • মাটিতে কিছু টক্সিক উপাদান ও ধাতব যৌগ ছিল, যা শিকড়ের বিকাশে বাধা দিচ্ছিল।

  •  

চাঁদের মাটি কেন চাষের জন্য কঠিন?

NASA গবেষকরা চাঁদের মাটি বিশ্লেষণ করে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছেন:

  1. মাটির গঠন: চাঁদের মাটি খুব সূক্ষ্ম, কাচের গুঁড়োর মতো ধারালো কণা থাকে যা শিকড় ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

  2. জৈব পদার্থের অভাব: চাঁদের মাটিতে কোনো পচনশীল জৈব উপাদান নেই, যা উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করে।

  3. পানির অভাব: চাঁদে তরল পানি নেই। বরফ পাওয়া গেলেও তা গলিয়ে ব্যবহারযোগ্য করতে প্রচুর শক্তি প্রয়োজন।

  4. সূর্যের বিকিরণ: চাঁদে ওজোন স্তর না থাকায় সূর্যের ক্ষতিকর বিকিরণ সরাসরি পড়ে, যা উদ্ভিদ ও জীববস্তু ধ্বংস করতে পারে।

  5. অতি নিম্ন বা উচ্চ তাপমাত্রা: চাঁদের দিনে তাপমাত্রা ১২৭°C এবং রাতে তা -১৭৩°C পর্যন্ত নেমে যায়।

 

সমাধানের পথে বিজ্ঞান

NASA এবং অন্যান্য সংস্থা এই সমস্যাগুলোর সমাধানে নতুন প্রযুক্তি কাজে লাগাচ্ছে:

  • Hydroponics: মাটি ছাড়াই পানির মাধ্যমে উদ্ভিদ চাষ (Already used in ISS).

  • Bio-dome/Greenhouse: চাঁদে কৃত্রিম গম্বুজ তৈরি করে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে চাষ।

  • LED Grow Lights: কৃত্রিম আলো দিয়ে ফটোসিনথেসিসের অনুকূল পরিবেশ তৈরি।

  • Artificial Soil Mix: চাঁদের মাটি ও পৃথিবীর উপাদান মিশিয়ে নতুন "hybrid soil" তৈরির চেষ্টা।

 

ভবিষ্যতের চন্দ্র-মিশনে কী পরিকল্পনা?

NASA-এর Artemis Program, যার মাধ্যমে ২০২৫-২৬ সালের মধ্যে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে মানুষ পাঠানো হবে, সেই মিশনে চাঁদে প্রথম পূর্ণাঙ্গ বায়োডোম স্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে। সেখানে কন্ট্রোল্ড এনভায়রনমেন্টে গাছ লাগানো হবে এবং পর্যবেক্ষণ চলবে—এই গবেষণা ভবিষ্যতের মঙ্গল গ্রহ অভিযানের জন্যও পথপ্রদর্শক হবে।

 

চাঁদে চাষাবাদ – শুধু বিজ্ঞান নয়, রাজনীতি ও অর্থনীতিও জড়িত

এই গবেষণা শুধু বিজ্ঞান নয়, এর সাথে জড়িয়ে আছে ভবিষ্যতের মহাকাশ অর্থনীতি, প্রযুক্তি আধিপত্য, এবং বৈশ্বিক শক্তি প্রতিযোগিতা। চাঁদে খাদ্য উৎপাদন সম্ভব হলে মহাকাশে স্বাধীন কলোনি গঠনের পথ উন্মুক্ত হবে, এবং যারা এই প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণে থাকবে, তারা ভবিষ্যতের "space superpower" হবে।

 

NASA কি সফল হবে?

NASA ধাপে ধাপে এগোচ্ছে।
যদিও এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তবে প্রাথমিক সাফল্য আশাব্যঞ্জক।
চাঁদের মতো রুক্ষ, শুষ্ক মাটিতে একটি সবুজ পাতা জন্মানো মানেই – আমরা আর এক ধাপ এগিয়ে গেলাম নতুন এক পৃথিবী গড়ার পথে।

 

চাঁদে গাছ জন্মানো হয়তো এখনো পুরোপুরি বাস্তব হয়নি, তবে সেটা আর বেশি দূরের স্বপ্নও নয়। মানব ইতিহাসের পরবর্তী অধ্যায়, যেখানে আমরা শুধু পৃথিবীর প্রাণী নই – মহাকাশেরও বাগানপাল, সেই অধ্যায়ের সূচনা হয়তো এখনই শুরু হয়েছে।

ডেটিং অ্যাপ ব্যবহার করেন? আঁতকে ওঠার মতো তথ্য ফাঁস গবেষকের দৌলতে!

স্মার্টফোনের হাতে জীবনের লাগাম। ইন্টারনেট জুড়ে ডেটিং অ্যাপ। আজকাল নতুন মানুষের সঙ্গে খুব সহজেই আলাপ করা যায়, দেখা করা যায়। ভাল লাগা, মন্দ লাগাগুলো জানতে আর দীর্ঘ পথ পেরতে হয় না। এক ক্লিকেই হাতে চলে আসে সব কিছু। 

 

অনলাইন ডেটিং প্ল্যাটফর্মগুলোর এখন রমরমা বাজার। চিরাচরিত পথের বাইরে অন্যভাবে গড়ে উঠছে বন্ধুত্ব, প্রেম, সাহচর্য। ডেটিং অ্যাপের আলাপ বিয়ে পর্যন্ত গড়িয়েছে, এমন ঘটনাও কম নয়। সব মিলিয়ে রোম্যান্টিক সম্পর্কে বিপ্লব এসেছে বললে খুব একটা ভুল হবে না। 

 

প্রশ্ন হল, ডেটিং অ্যাপে কি গোপনীয়তা বজায় থাকে? সম্প্রতি ফায়ারফক্স ইন্টারনেট ব্রাউজার মোজিলার গবেষকরা ইউজারদের গোপনীয়তার উপর ভিত্তি করে ২৫টি ডেটিং অ্যাপে গবেষণা চালানো হয়েছিল।  

 

এর মধ্যে আছে Tinder, Bumble, Hinge, OkCupid-এর মতো জনপ্রিয় অ্যাপও। কিন্তু যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে চমকে যেতে হবে। 

 

এই প্রকল্পে কাজ করা গবেষকদের মধ্যে মিশা রাইকভ বলছেন, “ডেটিং অ্যাপগুলো দাবি করে, আপনি যত বেশি ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করবেন, ততটাই মনের মানুষ পাবেন। এটা আদৌ সত্যি কি না, তা জানার কোনও উপায় নেই। আমরা যা জানি সেটা হল, বেশিরভাগ ডেটিং অ্যাপই ব্যক্তিগত তথ্য গোপন রাখতে পারে না।” 

 

গবেষণায় দেখা গিয়েছে, অধিকাংশ ডেটিং অ্যাপ, প্রায় ৮০ শতাংশই বিজ্ঞাপনের জন্য ইউজারদের ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার বা বিক্রি করে। 

 

 

প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রায় ২৫ শতাংশ অ্যাপ ইউজাররা যা আপলোড করেন, তা থেকে মেটাডেটা সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ছবি, ভিডিও তো বটেই, ইউজার কখন, কোথায় ক্লিক করেছেন, সেই তথ্যও থাকে। 

 

যখন ইউজার অ্যাপ ব্যবহার করছে না, সেই সময়ও ইউজারের অবস্থানের উপর লক্ষ্য রাখে কিছু অ্যাপ। গবেষকরা গোপনীয়তা রক্ষার জন্য ইউজারদের কিছু টিপস দিয়েছেন। তাঁদের পরামর্শ হল, থার্ড পার্টি অ্যাপ থেকে এই ধরনের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা উচিত নয়। 

 

 

টিন্ডার বা বাম্বল প্রোফাইলকে লিঙ্কডইন প্রোফাইলের মতোই দেখতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ‘অ্যাপ পারমিশন’ সীমিত করা। তবেই গোপন কথাটি গোপনে থাকবে। 

 

 

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, Hinge, OkCupid, Tinder এবং BLK সহ বেশ কয়েকটি অ্যাপ ইউজারের অবস্থানও অ্যাক্সেস করতে পারে।