ঘিবলি ট্রেন্ড কেন এত জনপ্রিয়?

আইসিটি | ফোরপিলার্সবিডি.কম
প্রকাশিত:
ঘিবলি ট্রেন্ড কেন এত জনপ্রিয়?

ইন্টারনেটে নতুন উন্মাদনা ঘিবলি-তে নিজেদের ছবি রূপান্তরিত করছেন অভিনেতা এবং ক্রীড়া তারকা থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ পর্যন্ত। এই প্রবণতা সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে, এতটাই জনপ্রিয় হয়েছে যে এমনকি ওপেনএআই-এর সিইও স্যাম অল্টম্যানও ব্যবহারকারীদের ধীরে চলার জন্য রসিকতার সাথে অনুরোধ করেছেন, কারণ তার দলেরও তো ঘুমের প্রয়োজন! রাতারাতি ঘিবলি’র ট্রেন্ড হয়ে ওঠার পেছনে রয়েছে কিছু মনস্তাত্বিক কারণ।

শৈশবের স্মৃতি যেন সব সময়ই আমাদের কাছে এক সুখানুভূতির উৎস। জাপানি স্টুডিও ঘিবলির জনপ্রিয় চলচ্চিত্র— মাই নেবার টোটোরো, স্পিরিটেড অ্যাওয়ে, কি-কির ডেলিভারি সার্ভিস— বহু মানুষের শৈশবের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। এই চলচ্চিত্রগুলো কেবল বিনোদন নয়, বরং এক রকম আবেগঘন অনুভূতি, যা মানুষকে ফিরিয়ে নেয় নির্ভার শৈশবে। তাই যখন কেউ নিজের জীবনের মুহূর্তগুলোকে ঘিবলি-শৈলীতে উপস্থাপন করেন, তখন তা যেন এক মিষ্টি স্মৃতির জানালা খুলে দেয়।

এস্কেপিজম বা বাস্তবতা থেকে সাময়িক মুক্তি পাওয়া মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। ব্যস্ত নগরজীবন, দায়িত্বের ভার আর প্রযুক্তিনির্ভর যান্ত্রিক জীবন থেকে সামান্য অবসর চায় সবাই। স্টুডিও ঘিবলির চলচ্চিত্রগুলোতে প্রকৃতির স্নিগ্ধতা, জাদুকরী কল্পনা আর সহজ-সরল জীবনের যে রূপায়ণ দেখা যায়, তা আমাদের মনে প্রশান্তির অনুভূতি এনে দেয়। ঘিবলি ট্রেন্ড সেই স্বপ্নময় দুনিয়াকে বাস্তব জীবনে নিয়ে আসার এক প্রচেষ্টা।

চোখের আরামদায়ক রঙ, সূক্ষ্ম আলো-ছায়ার বিন্যাস, আর কল্পনার সঙ্গে বাস্তবের এক অপূর্ব সংমিশ্রণ— ঘিবলি-শৈলীর মূল বৈশিষ্ট্য। মানুষের মন এমন নান্দনিক উপস্থাপনায় সহজেই আকৃষ্ট হয়। নরম রঙের আলো, প্রকৃতির স্নিগ্ধতা, আর গল্পের মতো সাজানো দৃশ্য আমাদের মস্তিষ্কে এক ধরনের প্রশান্তি সৃষ্টি করে। তাই সামাজিক মাধ্যমে যখন কেউ নিজের জীবনের সাধারণ মুহূর্তগুলোকেও এই শৈলীতে রূপান্তরিত করে, তখন তা দর্শকদের হৃদয়ে অনুরণন তোলে।

যেকোনো সামাজিক মাধ্যমের প্রবণতা তখনই জনপ্রিয় হয়, যখন মানুষ তা অনুকরণ করতে শুরু করে। ঘিবলি ট্রেন্ডের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই ঘটেছে। মানুষ যখন দেখে যে, সাধারণ কোনো দৃশ্যকেও ঘিবলি-শৈলীর মাধ্যমে মোহনীয় করে তোলা যায়, তখন তারাও একই কাজ করতে চায়। ফলে একের পর এক ভিডিও তৈরি হতে থাকে, যা মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে।

কখনও ভেবেছেন এই প্রবণতাকে জনপ্রিয় করে তোলার পেছনে কার বড় ভূমিকা ছিল? সিয়াটলের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার গ্রান্ট স্ল্যাটন, অজান্তেই এই ‘ঘিবলি-রূপান্তরিত’ ক্রেজকে জ্বালানি জুগিয়েছিলেন। টাইমস অব ইন্ডিয়া তাদের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করেছে।

গত সপ্তাহে, ওপেনএআই নতুন ইমেজ-জেনারেটিং টুল চালু করে এবং স্ল্যাটন এটি নিয়ে পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি এক্স (পূর্বে টুইটার) এ সমুদ্র সৈকতে তার পরিবার এবং কুকুরের স্টুডিও ঘিবলি-শৈলীর এআই দিয়ে তৈরি ছবি শেয়ার করেন। তার ক্যাপশন ছিল- “আপনার স্ত্রীর কাছে আপনাদের ছবি স্টুডিও ঘিবলি অ্যানিমের মতো বানিয়ে পাঠানোর বিষয়টা এখন খুব ‘আলফা’ (নতুন প্রজন্মের ট্রেন্ড বা জনপ্রিয়তা বোঝাতে)।”

ব্যবহারকারীদের মধ্যে সাড়া ফেলে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পোস্টটি ৪২ হাজার লাইক এবং প্রায় ২ কোটি ৭০ লাখ ভিউ পায়। আর এর ফলেই ঘিবলি-অনুপ্রাণিত ছবি সম্পাদনার ঢেউ তৈরি হয়।

যদিও স্ল্যাটন এই টুল ব্যবহারকারী প্রথম ব্যক্তি ছিলেন না, তবে তার ভাইরাল পোস্টটি এই প্রবণতাকে সবচেয়ে বড় ধাক্কা দেয়, যা বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে।

আইসিটি বিভাগের আরও খবর

মাইনক্রাফ্ট গেমে শিশুরা আসক্ত কেন?

মাইনক্রাফ্ট সর্বকালের অন্যতম জনপ্রিয় ভিডিও গেম। ২০০৯ সালে প্রথম বাজারে আসার পর, ২০২৩ সালের মধ্যে এর ৩০০ মিলিয়নেরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে। এটি এবং রোব্লক্স এবং টেরারিয়ার মতো গেমগুলি শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্ক পর্যন্ত সব বয়সের গেমাররা উপভোগ করে।

এই গেমটি ঘণ্টার পর ঘণ্টা শিশুদের মনোযোগ ধরে রাখতে সক্ষম, এখনকার স্বল্পস্থায়ী মনোযোগের যুগে এটি একটি অসাধারণ কৃতিত্ব। অবশ্য কিছু অভিভাবকের শঙ্কা রয়েছে যে মাইনক্রাফ্টের প্রতি তাদের সন্তানদের আগ্রহ প্রায় আসক্তির পর্যায়ে চলে যেতে পারে। কারণ তারা তাদের কম্পিউটার স্ক্রিন থেকে দূরে সরাতে হিমশিম খান।

মাইনক্রাফ্টের জনপ্রিয়তা এতটাই বেশি যে, জ্যাক ব্ল্যাক এবং জেসন মোমোয়া অভিনীত ‘আ মাইনক্রাফ্ট মুভি’ নামে একটি বহুল প্রতীক্ষিত হলিউড চলচ্চিত্র ২০২৫ সালের এপ্রিলে মুক্তি পেতে চলেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, মাইনক্রাফ্ট এবং এর মতো গেমগুলির সাফল্যের পিছনে গভীর মনস্তাত্ত্বিক- এমনকি বিবর্তনীয় কারণও থাকতে পারে। এই গেমগুলি আমাদের সকলের মধ্যে একটি সহজাত প্রবৃত্তিকে কাজে লাগায়- যা আমাদের সমগ্র প্রজাতির সাফল্যের ভিত্তি। আর সেটি হলো- নির্মাণের আকাঙ্ক্ষা।

শিশুরা সবসময়ই কিছু না কিছু তৈরি করতে পছন্দ করে- স্যান্ডক্যাসল, দুর্গ, ট্রিহাউস- এর কয়েকটি উদাহরণ মাত্র। কাঠের ব্লক, ক্লেডো এবং লেগোও ভাল উদাহরণ। মাইনক্রাফ্ট সম্ভবত ডিজিটাল জগতে এই ধরনের খেলার একটি সাম্প্রতিক সংস্করণ। অনেক শিশুর কাছেই এই বিভিন্ন ধরনের বস্তু তৈরির বিষয়টি আকর্ষণীয় কেন?

যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের বোস্টন কলেজের শিশু শিক্ষার পদ্ধতি নিয়ে গবেষণারত মনোবিজ্ঞানী পিটার গ্রে বলেন, ‘সকল স্তন্যপায়ী প্রাণীই তাদের শৈশবে খেলাধুলা করে। উদাহরণস্বরূপ, শিকারি প্রাণীরা বিভিন্ন প্রাণী বা বস্তু ধরার খেলা খেলে। লাফানো এবং পালানোর অনুশীলন করে।

এ বছরই জনপ্রিয় এই গেমটির থিম নিয়ে একটি সিনেমা মুক্তি পাবে।

গ্রে বলেন, “তাদের বেঁচে থাকার এবং শেষ পর্যন্ত সঙ্গীর সাথে মিলিত হওয়ার ক্ষমতার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতাগুলো তারা খেলার মাধ্যমে আয়ত্ত করে”

মানুষ অন্যান্য প্রাণীদের থেকে আলাদা, কারণ আমাদের বেঁচে থাকার অনেকটাই নির্ভর করে বস্তু তৈরির ক্ষমতার ওপর- কাদা দিয়ে তৈরি কুঁড়েঘর থেকে শুরু করে শিকার এবং সংগ্রহের সরঞ্জাম পর্যন্ত। “এটা আশ্চর্যজনক নয় যে প্রাকৃতিক নির্বাচন শিশুদের জিনিস তৈরির খেলায় শক্তিশালী প্রেরণা দিয়েছে,” বলেন গ্রে।

শিশুরা কথা বলা ও কল্পনাশক্তি ব্যবহার করে খেলাধুলা করে, অথবা এমন সব খেলা তৈরি করে যেখানে নিয়মকানুন থাকে এবং একে অপরের সাথে মেলামেশা করার সুযোগ থাকে। এগুলো তাদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি হিসেবে কাজ করে। তাদের হৃদয়ে থাকে – সবই যেন প্রাপ্তবয়স্ক জীবনের প্রস্তুতির অংশ।

গ্রে বলেন, খেলার সময় শিশুরা কী তৈরি করতে পছন্দ করে এবং কীভাবে তৈরি করে, তা সাধারণত তারা যে সংস্কৃতিতে বাস করে তার প্রতিফলন। তিনি বলেন, “আজ শিশুরা কম্পিউটারে খেলতে সত্যিই আকৃষ্ট হচ্ছে দেখে আমাদের মোটেই অবাক হওয়া উচিত নয় – এবং এটি আমাদের উদ্বিগ্নও করা উচিত নয়। আমি বলবো, শিশুরা তাদের হাড়ে, তাদের সহজাত প্রবৃত্তিতে জানে যে এই দক্ষতাগুলো তাদের বিকাশ করা দরকার।”

নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানী জুলিয়ান টোগেলিয়াস তার নিজের ছেলের মধ্যেও বিভিন্ন জিনিস তৈরির সহজাত প্রবণতা লক্ষ্য করেছেন, যদিও তার বয়স এখনও তিন বছর হয়নি। টোগেলিয়াস ব্যাখ্যা করেন, নার্সারিতে তার ছেলে খেলনা ট্রেন এবং ট্রাক চালানোর জন্য সুড়ঙ্গ তৈরি করতে শুরু করে। যখন তার ছেলে একটু বড় হবে, তখন কম্পিউটারও তার কাছে প্রিয় বস্তু হয়ে দাঁড়াতে পারে। টোগেলিয়াস বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, স্যান্ডবক্স গেমগুলো (যেমন মাইনক্রাফ্ট, যেখানে খেলোয়াড়দের কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছাড়াই তাদের সৃজনশীলতা অন্বেষণ করার স্বাধীনতা দেওয়া হয়) কম্পিউটারে কাজ করা এবং বিভিন্ন কিছু করা সহজ করে তোলে।

তিনি বলেন, “মাইনক্রাফ্টের জগতে সরাসরি এবং সহজভাবে কিছু তৈরি করা যায় । কোড লেখার চেয়ে এটি অনেক সহজ।”

অন্য কথায়, আগেকার দিনে কম্পিউটার শিশুদের নির্মাণের স্বাভাবিক ইচ্ছাকে বাধা দিত। কিন্তু এখনকার এই গেমগুলো সেই ইচ্ছাকে পূরণ করে।

শুধু যে জিনিস তৈরি করা যায়, তা-ই নয়, আরও অনেক কারণে মাইনক্রাফ্ট গেমটি আকর্ষণীয়। গেমের স্যান্ডবক্স মোডে খেলোয়াড়রা নিজেদের ইচ্ছেমতো জিনিস তৈরি করতে পারে। তবে, এখানে সার্ভাইভাল মোডও আছে, যেখানে শত্রুদের সাথে লড়াই করতে হয়। মিনোট্টি বলেন, এছাড়া এই গেমটি খেলার মাধ্যমে সামাজিক সম্পর্কও তৈরি হয়।

যখন তার বাচ্চারা তাদের বন্ধু বা চাচাতো-মামাতো ভাইদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করতে পারে না, তখন তারা অনলাইনে দেখা করতে পারে: “এটি একটি ভার্চুয়াল আড্ডার জায়গা হয়ে ওঠে।”

মাইনক্রাফ্টকে একটি ভার্চুয়াল খেলার মাঠ হিসেবে ভাবা যেতে পারে, যেখানে শিশুরা তাদের নিজস্ব স্থান খুঁজে নিতে পারে। কারণ এই গেমে বিভিন্ন ধরনের কার্যকলাপ এবং খেলার শৈলী বাছাই করার সুযোগ তাদের রয়েছে।

টোগেলিয়াস গবেষণা করেছেন- কীভাবে মাইনক্রাফ্টে গেমারদের আচরণ তাদের ব্যক্তিত্বের দিকগুলো প্রকাশ করে।

তিনি মনে করেন, মাইনক্রাফ্ট গেমে খেলোয়াড়দের নিজেদের মতো করে খেলার স্বাধীনতা দেওয়া হয়। ফলে, আর্কেড ক্লাসিক ‘অ্যাস্টেরয়েডস’ গেমের চেয়ে এই গেমে খেলোয়াড়রা নিজেদের ব্যক্তিত্ব ভালোভাবে প্রকাশ করতে পারে। ‘অ্যাস্টেরয়েডস’ গেমে খেলোয়াড়দের মহাকাশ থেকে আসা পাথরগুলোতে গুলি করতে হয়, যেখানে নিজেদের মতো করে কিছু করার সুযোগ খুব কম।

টোগেলিয়াস তার গবেষণার জন্য প্রাপ্তবয়স্কদের একটি প্রশ্নপত্র পূরণ করতে বলেন। এই প্রশ্নপত্র থেকে তাদের ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে কিছু ধারণা পাওয়া যায়। এরপর, তিনি প্রশ্নপত্রের উত্তরের সঙ্গে মাইনক্রাফ্ট খেলার ধরন তুলনা করেন। গবেষণায় দেখা যায়, মাইনক্রাফ্টে খেলার ধরনের ওপর উত্তরদাতাদের ব্যক্তিত্বের কিছু বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে মিল রয়েছে।

যদিও টোগেলিয়াস শিশুদের নিয়ে গবেষণা করেননি, তার ধারণা, বড়দের মতো শিশুদের ব্যক্তিত্বও গেমে প্রকাশ পায়। তার গবেষণায় তিনি দেখেছেন, মাইনক্রাফ্ট খেলোয়াড়রা সাধারণ মানুষের চেয়ে বেশি কৌতূহলী এবং তাদের মধ্যে প্রতিশোধ নেওয়ার প্রবণতা কম। অর্থাৎ, তারা নতুন জিনিস জানতে চায় এবং অন্যের ক্ষতি করার চেয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণে বেশি আগ্রহী

টেক্সাস টেক ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানী বেইলি ব্রাশিয়ার্স, যিনি মাইনক্রাফ্টকে মনস্তাত্ত্বিক গবেষণার কাজে কীভাবে ব্যবহার করা যায়, তা নিয়ে একটি গবেষণা পত্র প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, স্যান্ডবক্স গেমগুলোর (যেমন: মাইনক্রাফট) বিস্তৃত সুযোগের কারণে এটি অনেকের কাছেই জনপ্রিয়। ব্রাশিয়ার্স গেমটির পাঁচটি প্রধান দিক চিহ্নিত করেছেন:

১. সামাজিক দিক ( যেমন: অন্যদের নিয়ে একসাথে খেলা)

২. নিজের দক্ষতা প্রমাণের সুযোগ ( যেমন: যুদ্ধ বা অনুসন্ধান)

৩. প্রকৌশল ( যেমন: বিভিন্ন জিনিস তৈরি করা)

৪. সৃজনশীলতা ( যেমন: নতুন কিছু বানানো)

৫. টিকে থাকার চেষ্টা ( যেমন: বিপদ থেকে বাঁচা)

ব্রাশিয়ার্স বলেন, “সাধারণত একটি গেমে এই দিকগুলোর মধ্যে এক বা দুটি থাকে। যেমন, ফোর্টনাইট গেমটি মূলত সামাজিক খেলা এবং টিকে থাকার চেষ্টার উপর ভিত্তি করে তৈরি।”

শিশুরা মাইনক্রাফ্টে অনেক বেশি সময় কাটায়, যা তাদের অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম অভিভাবকদের উদ্বেগের কারণ। মেলিসা হোগেনবুমের একটি লেখায় স্ক্রিন টাইমের ভালো-মন্দ দিকগুলো আলোচনা করা হয়েছে।

মিনোট্টি বলেন, তার বাচ্চারা শুধু মাইনক্রাফ্ট খেলে না, তারা বাইরে বাস্কেটবলও খেলে। তবে, তিনি তাদের অতিরিক্ত ভিডিও গেম খেলা থেকে বিরত রাখেন এবং তাদের অনলাইন বন্ধুত্বের অনুরোধগুলো যাচাই করেন। তিনি বলেন, “আমরা তাদের ইন্টারনেটে অবাধে ছেড়ে দিই না।”

যুক্তরাজ্যের শিশুদের দাতব্য সংস্থা এনএসপিসিপি মাইনক্রাফ্ট খেলার সময় শিশুদের নিরাপত্তার জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছে। মাইনক্রাফ্টে শিশুদের ওপর নির্যাতন ও অপব্যবহারের মতো ঘটনা ঘটেছে। রোব্লক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের গেম প্ল্যাটফর্ম থেকে দূরে রাখতে বলেছেন। যদি তারা ক্ষতিকর কিছু দেখার ভয়ে থাকেন।

মিনোট্টি মনে করেন তার বাচ্চারা নিরাপদে মাইনক্রাফ্ট খেলতে পারে। কারণ তিনি তাদের ওপর নজর রাখেন। তিনি বলেন, এটি একটি ডিজিটাল খেলার মাঠের মতো। মাইনক্রাফ্টের মাধ্যমে মানুষ নতুন উপায়ে যোগাযোগ করতে পারে। কোভিড-১৯ এর সময় অধ্যাপকরা মাইনক্রাফ্টের মাধ্যমে অনলাইনে পড়িয়েছেন। আয়ারল্যান্ডের শিক্ষকরা মাইনক্রাফ্ট এডুকেশনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছেন।

শিক্ষার্থীদের গ্যেলিক ভাষা শেখার জন্য মাইনক্রাফ্টে একটি গেম তৈরি করা হয়েছিল। সেখানে রেস্টুরেন্ট ও খাবার তৈরি করে ভাষা শেখানো হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, মাইনক্রাফ্ট শিক্ষার্থীদের স্কুলের কাজে আগ্রহ বাড়ায়। মাইনক্রাফ্ট খেললে খেলোয়াড়রা গভীরভাবে মনোযোগী হয়। এটি তাদের মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে।

তবে, মাইনক্রাফ্ট সবার কাছে সমান জনপ্রিয় নয়। অস্ট্রেলিয়ায় একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা বেশি মাইনক্রাফ্ট খেলে। লেখকরা বলেন, ছেলে ও মেয়ে উভয়ের জন্য গেমগুলো আকর্ষণীয় হওয়া উচিত। কারণ, গেমগুলো শিশুদের ডিজিটাল দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে।

মিনোট্টি তার মেয়েদের কম্পিউটার দক্ষতা নিয়ে চিন্তিত নন। মাইনক্রাফ্ট তাদের পছন্দের খেলা। তাদের লেগো দিয়ে খেলার জায়গা নেই। তাই তারা মাইনক্রাফ্টে খেলে। তিনি বলেন, মাইনক্রাফ্টে তারা তাদের কল্পনার সব লেগো ব্লক ব্যবহার করতে পারে।

ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতির পর ফিরতে শুরু করেছে টিকটক

ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনেই নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করার চেষ্টা করবেন- ডনাল্ড ট্রাম্পের এমন আশ্বাসের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরিষেবা পুনরায় চালুর ঘোষণা দিয়েছে টিকটক।

ফেডারেল নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রে নিজেদের সেবা গুটিয়ে নেয় টিকটক।

ট্রাম্প রোববার টিকটকের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে বলেন, জনপ্রিয় ভিডিও-শেয়ারিং এই প্ল্যাটফর্মটি স্থায়ী মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসার আগে, টিকটকের চীন-ভিত্তিক মূল কোম্পানিকে ক্রেতা খুঁজে পেতে আরও সময় দেওয়ার জন্য তিনি আদেশ জারির পরিকল্পনা করছেন।

নিজের ট্রুথ সোশ্যাল অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন ট্রাম্প।

ফেডারেল নিষেধাজ্ঞার কারণে ইতোমধ্যে গুগল এবং অ্যাপল তাদের ডিজিটাল স্টোর থেকে অ্যাপটি সরিয়ে দিয়েছে।

ট্রাম্প বলেন, তার আদেশ আইনের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার আগে সময়কাল বাড়িয়ে দেবে।

টিকটক পরিচালনাকারী কোম্পানি বাইটড্যান্স এক্স হ্যান্ডলে এক পোস্টে বলেছে, ট্রাম্পের আশ্বাসের পর ১৭ কোটি আমেরিকানের জন্য টিকটকের পরিষেবা ফিরিয়ে দিতে তারা কাজ করছেন।

অনেক ব্যবহারকারী ইতোমধ্যে অ্যাপটি আবার কাজ করছে বলে জানিয়েছন।

যে আইনের আওতায় টিকটক যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ করা হয়েছে সেখানে এটিও বলা আছে যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট চাইলে কার্যকর বিক্রয়ের প্রক্রিয়া সম্পন্নের জন্য অতিরিক্ত ৯০ দিনের মেয়াদ বাড়াতে পারবেন। যদিও বিনিয়োগকারীরা আগেই জানিয়েছিল, তারা অ্যাপটি বিক্রি করবে না।

ইন্টারনেট বন্ধ: পলকের কথার প্রতিধ্বনি নাহিদের কণ্ঠে

শুধু কণ্ঠ আলাদা-ব্যক্তি আলাদা। কিন্তু ইন্টারনেট বন্ধ নিয়ে দু’জনের কথা খুব মিল। একই চেয়ারে বসা দুই কর্তার কণ্ঠে যেন একই কথার প্রতিধ্বনি। একজন ছিলেন ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রতিমন্ত্রী আর আরেকজন হলেন গণঅভ্যুত্থান সরকারের উপদেষ্টা। তবে দু’জনই ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের। একজন সাবেক আর আরেকজন বর্তমান।

খাগড়াছড়ি, রাঙামাটিতে সহিংসতার ঘটনায় সেখানে ইন্টারনেট বন্ধ ছিল বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে কোথাও সরকারিভাবে ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়নি। সেখানে বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকটি জায়গায় সমস্যা হয়েছিল।

শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালের ফেনীর ছাগলনাইয়ায় বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, সাময়িকভাবে কিছু জায়গায় ইন্টারনেট বন্ধ ছিল, কিন্তু সেটিকে অতিরঞ্জিত করে বলা হচ্ছে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এরকম কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি এবং এমন কোনো ঘটনাও ঘটেনি। পার্বত্য চট্টগ্রাম বা কোনো এলাকায় দীর্ঘ সময় ইন্টারনেট বন্ধ ছিল, এমন প্রমাণও কেউ দেখাতে পারবে না। 

নাহিদ ইসলাম বলেন, ইন্টারনেট বন্ধের বিষয়টি সত্য নয়। এ বিষয়ে সেখানের জেলা প্রশাসকসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গেও আমি কথা বলেছি। এ ধরনের অভিযোগের ক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে সম্পূর্ণ সত্যতা জেনে নেওয়ার অনুরোধ রইল। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মসূচির মধ্যে ইন্টারেনেট বন্ধ থাকলেও গত ৪ আগস্ট তখনকার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছিলেন, দেশের কোথাও ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়নি।

তখনকার প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, আমরা কোথাও ইন্টারনেট বন্ধ করিনি। বন্ধের কোনো নির্দেশও দেইনি। কোথাও কোথাও ইন্টারনেটের সমস্যা হচ্ছে। এটা আমাদের নির্দেশনার কারণে নয়।  ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবল ও ইন্টারনেট পরিচালনার অনেক স্থাপনায় সন্ত্রাসীরা হামলা চালাচ্ছে। অনেক জায়গায় হামলা চলছে। ফাইবার ক্যাবল কেটে দেওয়া হচ্ছে। আজও আমাদের কয়েক জায়গায় আগুন দেওয়া হয়েছে। অনেক এলাকায় কেটে ফেলা হয়েছে। এমন তাণ্ডব চালালে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সরবরাহ করাতো সম্ভব নয়।

গুগলে সার্চ করে টাকা ইনকামের আন্যতম উপায়

গুগলে বা অনলাইন চাকরির সন্ধান করেন, তাহলে আপনি প্রতারকদের ফাঁদে পড়তে পারেন। অনলাইন থেকে অর্থ উপার্জনের অফার আপনাকে রাস্তায় আনতে পারে। আপনি খণ্ডকালীন চাকরিতে অনেক খারাপভাবে জড়িয়ে পড়তে পারেন।

 

এমন অনেক ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে যেখানে মানুষ খণ্ডকালীন চাকরি বা ঘরে বসে অর্থ উপার্জনের কারণে লাখ লাখ টাকা হারিয়েছে। অনলাইনে চাকরি খোঁজা একটি সহজ উপায়, তবে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। আসলে এই অফারগুলি মানুষকে ফাঁদে ফেলার উপায় মাত্র। লোকেরা অবশ্যই একটি ভাল অফার বা বেতন স্কেল দেখার পরে ক্লিক করে এবং প্রতারকদের ফাঁদে আটকা পড়ে যায়।

 

চাকরির পোর্টাল যাচাইকরণ পদ্ধতি 

 

১.পোর্টাল সম্পর্কে অনলাইন অনুসন্ধান করুন এবং এটি সম্পর্কে মানুষের পর্যালোচনা পড়ুন। আপনি অন্য লোকেদের অভিজ্ঞতা পড়ে পোর্টাল সম্পর্কে আরও ভাল ধারণা পেতে পারেন।

 

২. অনলাইনে অনেক চাকরির পোর্টাল পাওয়া যায়, তাদের মধ্যে কিছু যাচাই করা হয়, আবার কিছু জালিয়াতি। চাকরির পোর্টালটি আসল না নকল তা পরীক্ষা করার জন্য এই বিষয়গুলো মাথায় রাখা খুবই জরুরি।

 

৩.পোর্টালের গোপনীয়তা নীতি পড়ুন। গোপনীয়তা নীতি ব্যাখ্যা করে কিভাবে পোর্টাল আপনার ডেটা ব্যবহার করে। একটি বাস্তব এবং সঠিক পোর্টাল আপনার গোপনীয়তা বজায় রাখে।

 

৪.পোর্টালের ওয়েবসাইটের নকশা এবং বিষয়বস্তু পরীক্ষা করুন। ওয়েবসাইটটি যদি ভালভাবে ডিজাইন করা হয় এবং এতে সঠিক তথ্য থাকে তবে এটি একটি বিশ্বস্ত পোর্টাল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

 

কাজের অফার গুলো মনোযোগ সহকারে পড়ুন

কাজের অফারগুলি সাবধানে পড়লে আপনি জালিয়াতি এড়াতে পারেন। অনলাইনে অনেক চাকরির অফার রয়েছে তবে উপরে উল্লিখিত হিসাবে, তাদের মধ্যে কিছু আসল এবং কিছু নকল। এ জন্য এই বিষয়গুলো মাথায় রাখুন।

 

১.চাকরির অফারে আবেদনের প্রক্রিয়া উল্লেখ আছে কি না।

 

২.চাকরির অফারে কোম্পানির নাম, ঠিকানা এবং যোগাযোগের বিবরণ দেওয়া আছে কি না।

 

৩.চাকরির পদ, দায়িত্ব এবং বেতন সম্পর্কে তথ্য চাকরির অফারে দেওয়া আছে।

 

টাকা দেওয়ার আগে বারবার ভাবুন

১.যেকোনো লিংকে ক্লিক করার আগে সতর্ক থাকুন, অনলাইনে অনেক প্রতারণার লিঙ্ক রয়েছে। এই লিঙ্কগুলি আপনাকে জাল ওয়েবসাইটে নিয়ে যেতে পারে, যেখানে আপনার ডেটা চুরি হতে পারে। অতএব, যেকোনো লিঙ্কে ক্লিক করার আগে সতর্ক থাকুন।

 

২.আপনার ডেটা শেয়ার করার আগে মনে রাখবেন যে অনলাইনে চাকরি খোঁজার সময় আপনাকে আপনার ব্যক্তিগত বিবরণ শেয়ার করতে হবে। নিরাপদে এই তথ্য শেয়ার করুন।

 

৩.চাকরির আবেদন করার আগে কোনো কোম্পানি টাকা চায় না। যদি কোনো কোম্পানি আপনার কাছে আবেদন করার জন্য টাকা চায়, তাহলে এটি একটি প্রতারণা।

 

 

এই পদ্ধতি গুলো একটি কাজ খুঁজে পেতে সাহায্য করবে

 

১.চাকরি দেখার ফাঁদে না পড়ে, সোশ্যাল মিডিয়া এবং গুগলে এর রিভিউ দেখুন।

 

২.আপনার শক্তিশালী জীবনবৃত্তান্ত এবং কভার লেটার তৈরি করুন।

 

৩. শুধুমাত্র আপনার পরিচিত লোকদের কাছ থেকে কাজের উত্স ব্যবহার করুন।

 

৪.যেকোনো লিঙ্কে ক্লিক করার পাশাপাশি কোম্পানির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যান এবং সেখান থেকে আবেদন করুন।

 

সেই কোম্পানিগুলোকে অনুসরণ করুন যেগুলি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী কাজ প্রদান করে এবং প্রতিটি আপডেটের উপর নজর রাখুন। এবং যখনই চাকরি আসবে, আপনি একটি বিজ্ঞপ্তি পাবেন।