পার্ক দখল করে মার্কেট বানিয়েছে নাটোর পৌরসভা তবে পাকিস্তান আমলে তৈরি মার্কেট সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। দীর্ঘদিন সংস্কার না করার ব্যবহারের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে নাটোরের এন.টি.সি মার্কেট। এই স্থানে বহুতল ভবনের মার্কেট করা যেতো। এতে করে প্রতি মাসে রাজস্ব আয় বাড়তো। বহু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হতো। কিন্তু সেটা না করেনি নাটোর পৌরসভা। কিন্তু পার্ক নষ্ট করে ঠিকই মার্কেট বানানো হয়েছে।
১৯৬৩ সালে সর্ব প্রথম এন.টি.সি মার্কেট নির্মাণ করেছিল নাটোর পৌরসভা। তৎকালীন সময়ে নাটোর পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন হুরম চৌধুরী। ১০টি দোকান রয়েছে সেখানে। প্রতিমাসে ভাড়া ৭ শত টাকা। একটি বড় দোকান রয়েছে সেই দোকান ঘরের ভাড়া মাসে ২ হাজার টাকা। এই মার্কেটের মোট ১১ টি রুম থেকে ভাড়া বাবদ পৌরসভা পায় প্রতিমাসে ৯ হাজার টাকা। দোকান মালিকরা বলছেন- যে কোন মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে ভবন। প্রাণহানিসহ আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা। আর পৌর কর্তৃপক্ষ বলছেন- অতি দ্রæত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রিয়াংকা টেইলার্স‘এর মালিক প্রদীপ চন্দ্র মানী বারনইকে বলেন, “বর্তমানে মার্কেটটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে। অতি দ্রæত মার্কেটটি ভেঙ্গে নতুন করে নির্মাণ করা প্রয়োজন। অন্যথায় যেকোন মুহূর্তে মার্কেটটি ভেঙ্গে পড়তে পারে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।’’
সেলিম টেইলার্সের মালিক মিঠু প্রামানিক বারনইকে জানান, পাকিস্তান সরকারের সময় নাটোর পৌরসভা এই এন.টি.সি মার্কেট নির্মাণ করেছিল। মার্কেট নির্মাণের পর থেকে কর্তৃপক্ষ কোনরকম সংস্কার করেনি। কয়েক বছর পর পরই শুধু ভাড়া বৃদ্ধি করেছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা, সামান্য বৃষ্টিপাত হলেই মার্কেটটি জলবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করার জন্য বারবার পৌর কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কোনই পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এছাড়া দেওয়ালে নোনা ধরে গেছে, ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। বৃষ্টি হলেই ছাদ দিয়ে পানি পড়ে।
লেডিস কর্নার‘এর মালিক মিলন কুমার সাহা বারনইকে জানান, মার্কেটের নানা সমস্যা নিয়ে লিখিতভাবে মৌখিকভাবে পৌর কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ জানানো হয়েছে। অভিযোগের পরে পৌরসভার লোকজন এসে মার্কেটেটি মাপামাপি করে চলে যায়। পরবর্তীতে আর কোন কার্যক্রম দেখা যায় না। এভাবেই চলছে যুগের পর যুগ। বৃষ্টি হলেই ছাদ দিয়ে পানি পড়ে নিজেরাই মেরামত করি। পানি নিষ্কাশনের পথ না থাকায় সামান্য বৃষ্টিপাত হলেই দোকান ঘরের ভিতরে পানিতে ভরে যায়।
ফেমাস লেডিস টেইলার্সের মালিক মো. ইমরান হোসেন রাজু বারনইকে জানান, নাটোর পৌরসভার সর্বপ্রথম নির্মিত নিচাবাজারের এই এন.টি.সি মার্কেটের বয়স প্রায় ৬১ বছর। এই মার্কেটে সর্বমোট দোকানঘর রয়েছে ১১ টি। দোকান গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বঙ দোকান আমার, বর্তমানে মাসিক ভাঙা দিতে হয় ভ্যাট ট্যাক্স সহ প্রায় ২ হাজার টাকা। পাঁচ বছর আগেও এই রুমের ভাঙা ছিল মাত্র ১ হাজার টাকা। সাবেক মেয়র উমা চৌধুরী জলির সময়ে হঠাৎ করেই ভাড়া দ্বিগুণ করে দেওয়া হয়। নানা সমস্যায় জর্জরিত এই মার্কেটটি সংস্কার বা মার্কেট উন্নয়নে কোন প্রদক্ষেপ কোনদিনই কোন মেয়রের সময় গ্রহণ করা হয়নি।
নাটোরের প্রবীণ ব্যবসায়ী ও চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর পরিচালক মশিউর রহমান দুদু বারনইকে জানান, "নাটোর টাউন পার্ক সংক্ষেপে এন.টি.সি মার্কেট। ১৯৬৩ সালের আগে এই জায়গার নামকরণ ছিল বোম পুলিশ। এখানে পৌরসভার ময়লা আবর্জনা ফেলে দেওয়া হতো। বর্তমানে মার্কেটটি জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে, ব্যহত হচ্ছে ব্যবসা। এমত অবস্থায় মার্কেটটি ভেঙ্গে নতুন করে বহুতল ভবন নির্মাণ করলে ব্যবসায়ীরা যেমন আশঙ্কা থেকে মুক্তিভাবে, বৃদ্ধি পাবে ব্যবসায়ী। তৈরি হবে কর্মসংস্থান। তাই কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি, মার্কেটের পেছনের পরিত্যক্ত জায়গা সহ বহুতল মার্কেট নির্মাণ করে, কর্মসংস্থান তৈরি করবে এমনটাই প্রত্যাশা করি।
নাটোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও নাটোর পৌরসভার প্রশাসক মো. মাছুদুর রহমান বারনইকে বলেন, "নাটোর পৌরসভার নির্মিত প্রথম নির্মিত এন টি.সি.মার্কেট সম্পর্কে আমি অবগত ছিলাম না। মার্কেটটি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে অতি দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”