অস্থির সময়ে স্বস্তির জন্য মেডিটেশন

আমাদের জীবন দিনে দিনে জটিল হচ্ছে। অফিস, পরিবার, রান্না, খাওয়া ছাড়াও আছে হাজার রকমের চিন্তা। সোশ্যাল মিডিয়ার বদৌলতে পৃথিবীর সবকিছু সম্পর্কে সহজে জানা সেই সঙ্গে চিন্তা-ভাবনা, চাওয়া-পাওয়ার ধরন পরিবর্তন হয়েছে। সবকিছু সহজলভ্যতার কারণে প্রত্যাশা-প্রাপ্তি নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা। সময়ের সঙ্গে এসব মনস্তাত্ত্বিক চাপের কারণে ভেতরে তৈরি হয় অস্থিরতা। এই অস্থিরতাকে নিজের ভেতরে পুষে রাখলে ডিপ্রেশনসহ নানা মানসিক রোগের উৎপত্তি হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড হেলথ পাবলিশিং-এর ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১-এর রিপোর্ট অনুসারে, ডিপ্রেশনের কার্যকরী সমাধান হলো মেডিটেশন।

২০২০ সালে চীনে চিকিৎসক ও রোগীর সম্পর্ক নিয়ে একটি গবেষণা হয়। এতে ১০৬ জন চিকিৎসককে দুটি গ্রুপে ভাগ করা হয়। একটি গ্রুপকে আট সপ্তাহব্যাপী মেডিটেশন প্রোগ্রামে যুক্ত করা হয়। আরেকটি গ্রুপ তাদের চিরাচরিত রুটিনেই জীবনযাপন করেন। দেখা গেছে, ধ্যানী চিকিৎসকরা রোগীদের প্রতি সহমর্মী হয়ে উঠেছেন। রোগীর সাথে কথোপকথনে তারা আগের চেয়ে মনোযোগী।

যুক্তরাষ্ট্রের রচেস্টার স্কুল অব মেডিসিন এন্ড ডেন্টিস্ট্রির প্যালিয়েটিভ কেয়ার বিশেষজ্ঞ, লেখক ও কমিউনিকেশন এন্ড মাইন্ডফুল প্র্যাকটিস ইন মেডিসিনের শিক্ষক রোনাল্ড এম. এপস্টেইন বলেন, "চিকিৎসক এবং চিকিৎসাপেশায় নিয়োজিতদের মধ্যে যারা মেডিটেশন করেন, তারা রোগীদের সাথে কথা বলায় অধিক মনোযোগী। পেশাগত ত্রুটি শুধরে নিতে আন্তরিক এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণেও তৎপর। পেশাগত চাপ তাদের ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে না।"

বিশ্ব জুড়ে এখন প্রায় ৫০ কোটি মানুষ নিয়মিত ধ্যান বা মেডিটেশন করেন। শারীরিক মানসিক সামাজিক ও আত্মিক অর্থাৎ সুস্থ থাকতে মেডিটেশন বা ধ্যানের কার্যকারিতা এখন চিকিৎসাবিজ্ঞানে প্রমাণিত।

পুরো বিশ্বের মত আমাদের দেশেও দিনদিন মেডিটেশনের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। পরিপূর্ণ সুস্থতার জন্য বিদ্যমান চিকিৎসার পাশাপাশি মেডিটেশন যে প্রয়োজন, সেই পরামর্শ এখন চিকিৎসকরা দিচ্ছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সম্প্রতি যোগ-মেডিটেশনকে স্বাস্থ্যসেবার পরিপূরক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে। 

নিজের অস্থিরতাকে সংযম করতে হবে নিজের শান্তির জন্য। কাজের চাপ, ব্যস্ততায় অস্থিরতা কিছু সময়ের জন্য ভুলে থাকা গেলে ও একেবারে নির্মূল হয়ে যায় না। মানসিক অস্থিরতা দূর করার জন্য মেডিটেশন খুব কাজ দেয়। মেডিটেশন করলে বিভিন্ন সুবিধা লাভ করা সম্ভব।

ধ্যান বসে বা শুয়ে—যেকোনো অবস্থাতেই করা যায়। যেকোনো সময়, খাওয়ার আগে বা পরে, সকালে, বিকেলে বা রাতে এবং যতক্ষণ ইচ্ছা করা যায়। ধ্যানের ক্ষেত্রে কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম বা বিধিনিষেধ নেই। তাই যখনই সুযোগ পাওয়া যায়, মেডিটেশন বা ধ্যান করে নেওয়া যায়। প্রতিদিন ৫ মিনিটের ধ্যানও দিতে পারে একটি নিয়ন্ত্রিত সুশৃঙ্খল জীবন আর সেই সঙ্গে অনাবিল প্রশান্তি।

ধ্যানের সময় ও স্থান

মেডিটেশন শুরুর আগে প্রথমেই এ কথা আসতে পারে যে কতক্ষণ এই মেডিটেশন করলে, তার সুফল পাওয়া যেতে পারে। জবাব হলো, প্রথম দিকে স্থির করে নিতে হবে কতটা সময় ধরে মেডিটেশন করা উচিত। ৫ থেকে ১০ মিনিট বা ১ ঘণ্টাও এটি করা যেতে পারে। আর এর জন্য বেছে নিতে হবে শব্দহীন ও নিরিবিলি একটি জায়গা।

আরামদায়ক হোক ধ্যানের সময়টুকু

মেডিটেশন করার ক্ষেত্রে কোথায় বসে তা করা উচিত, তা নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন থাকতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এ ক্ষেত্রে প্রাধান্য দিতে হবে দেহের স্বস্তিকে। ধ্যান করতে বসে বা শুয়ে যদি আরাম বোধ না হয় তাহলে ধ্যানে মনোযোগ আসবে না। খেয়াল রাখতে হবে, হাত, পায়ের অবস্থান ও বসার ভঙ্গি যেন আরামদায়ক হয়।

আর্কাইভস আর্কাইভস ১

ধ্যান যেভাবে করবেন

শ্বাস গ্রহণ ও ছাড়ার সময় নিশাস-প্রশ্বাসের মুভমেন্ট অনুসরণ করতে হবে। শ্বাস ভেতরে যাওয়া এবং বের হওয়ার প্রক্রিয়ার ওপর নজর দিতে হবে। মেডিটেশেনের সময় মানসিক স্থিতি এমন হবে, যাতে মন অন্য কোনো ভাবনায় বুঁদ না হয়ে পড়ে। শরীর, সাম্প্রতিক অবস্থা, সবকিছু ছাড়িয়ে যেতে দিতে হবে নিজের মনকে। মনকে স্থির করতে হবে যেকোনো একটি নির্দিষ্ট বিন্দু বা বিষয়ের ওপর।

ধ্যান শেষ হলে করণীয়

মেডিটেশন শেষ হলে তাড়াহুড়ো করে উঠে পড়া সমীচীন নয়। ধীরে ধীরে একটি অবস্থা থেকে মনকে সরিয়ে নিতে হবে। তারপর দেহ ও মনকে সজাগ করুন। তারপর ধীরে ধীরে মেডিটেশন ছেড়ে ওঠা উচিত।

নিয়মিত ধ্যানের উপকারিতা

    মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে ধ্যান।
    দেহ ও মনের সুস্থতার জন্য যেমন ধ্যান প্রয়োজনীয়, তেমনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ও কর্মক্ষেত্রে উন্নতি করতে ধ্যানের জুড়ি নেই।
    জীবন সুন্দর করতে ও সময়কে উপভোগ করতেও সাহায্য করে ধ্যান। ধ্যানের অভ্যাস গড়ে তুললে যেকোনো অবস্থানে সুখী হওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়। দেহ ও মনের সৌন্দর্যও বৃদ্ধি করে ধ্যান।

এ ছাড়া প্যানিক অ্যাটাক, মানসিক ভীতি কম করা ও আত্মবিশ্বাস বাড়াতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মেডিটেশন। তবে আমাদের দেশে অপ্রচলিত বলে কোথা থেকে মেডিটেশন শুরু করবে, কীভাবে চালিয়ে যাবে এসব বিষয়ে ধারণা কম। মেডিটেশন করার জন্য বর্তমানে বিভিন্ন অ্যাপ প্রচলিত আছে। যেমন- ওরা, ব্রিদিং প্লাস, টেন পার্সেন্ট হ্যাপিয়ার, মাইন্ডফুলনেস উইথ পেটিট ব্যামব্যু, মাইন্ডফুলনেস অ্যাপ, স্মাইলিং মাইন্ড, ওমভানা। এগুলো সঠিক পদ্ধতিতে মেডিটেশন করতে সাহায্য করে।

সস্তায় ফ্লাইটের টিকিট চান? পাঁচ টিপস

কিছু সাধারণ কৌশল জানা থাকলে খুব সহজেই ভ্রমণের খরচ অর্ধেকে নামিয়ে আনা যায়; বিশেষকরে ফ্লাইটের টিকিটের দাম।

যেমন ধরুন, দিন নির্বাচন, কত সময় আগে টিকিট কেনা উচিত, কিংবা কোথায় কোথায় অফার মূল্যে টিকিট মেলে– এমন সব বিষয়।

১. মঙ্গলবার ও বুধবারের টিকিট

সাধারণত সপ্তাহের মঙ্গল ও বুধবারের টিকিটের দাম অন্যান্য দিনের চেয়ে একটু সস্তা থাকে। এর পেছনে দুটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, বেশিরভাগ এয়ারলাইন্স মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার পর তাদের টিকিটের মূল্য আপডেট করে। আবার পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেই শনি ও রোববার সাপ্তাহিক ছুটি। তাই ছুটির দিনের সর্বোচ্চ ব্যবহারের জন্য শুক্র, শনি অথবা রোব বারের টিকিটই বেশি খোঁজেন। আর এজন্য সপ্তাহের মাঝামাঝি সময়টিতে টিকিটের দাম তুলনামূলক কম হয়।

২. আগে থেকে বুকড করা

ভ্রমণের তারিখের অন্তত ২১ দিন আগে টিকিট কেনা উচিত। এয়ারলাইনস সাধারণত প্রথম কয়েকজন যাত্রীকে সবচেয়ে সস্তায় টিকিট দেয়। তবে খুব আগে বুক করলে দাম বেশিও পড়ে যেতে পারে।

৩. সেরা অফার খুঁজুন

আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ক্ষেত্রে ১১-১২ সপ্তাহ আগে টিকিটের সেরা অফার পাওয়া যায়। এই সময়ে নিয়মিত টিকিটের দামের উপর নজর রাখুন। তবে তার আগে অবশ্যই ব্রাউজার মুড পরিবর্তন করে ‘ইনকগনিটো’ ব্যবহার করুন।

৪. বিমানবন্দর বাছাই

বড় এয়ারপোর্টের পরিবর্তে কাছাকাছি ছোট এয়ারপোর্টে নামার চেষ্টা করুন। যেমন লন্ডনে যাওয়ার ক্ষেত্রে হিথ্রোর পরিবর্তে ম্যানচেস্টার বিমানবন্দরে নামলে খরচ খানিকটা কম পড়ার সম্ভাবনা থাকে।

৫. ব্রাউজারের ‘কুকিজ’

ফ্লাইট টিকিট খোঁজার সময় আপনার ব্রাউজারের ‘কুকিজ’ পরিষ্কার করে ফেলুন। কারণ, না হলে এয়ারলাইন্সের বুকিং সিস্টেম আগের অনুসন্ধান মনে রেখে দাম বাড়িয়ে দিতে পারে।

সস্তায় টিকিট খুঁজতে যে সাইটগুলো দেখতে পারেন:

স্কাইস্ক্যানার
চিপ ফ্লাইট
মমন্ড
কায়াক
গুগল ফ্লাইট

মনযোগের কেন্দ্রে গ্রিনল্যান্ড, কী আছে বরফের আড়ালে?

গ্রিনল্যান্ড খনিজ সম্পদের জন্য আন্তর্জাতিক মনোযোগের কেন্দ্রে থাকলেও আসলে কী আছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই দ্বীপের বরফের গভীরে? শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে দ্বীপটির ভূস্তরের গভীরে মূল্যবান খনিজ থাকার সম্ভাবনা মানুষকে আকৃষ্ট করলেও এই সম্পদ পাওয়া কতটা সহজ বা জলবায়ুর পরিবর্তনে কী প্রভাব ফেলবে?

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এ দ্বীপের আকর্ষণ অস্বীকার করার উপায় নেই। হাজার বছর আগে প্রথম বসতি স্থাপনকারী এরিক দ্য রেড বা হালের পর্যটক সবাইকে মুগ্ধ করছে এই দ্বীপ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এর এক বিচ্ছিন্ন তীরে এসে পৌঁছানো মিত্র বাহিনীও আকর্ষণ অনুভবব করেছিলে দ্বীপের মনোমুগ্ধকর দৃশ্যে।

সেই গ্রিনল্যান্ড আবারও বিশ্বজুড়ে মনোযোগের কেন্দ্রে চলে এসেছে, বিশেষকরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের চোখ পড়ার পর।

হ্যাঁ, এটি সত্যি, শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে বিশদ অনুসন্ধানে গ্রিনল্যান্ডে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ খনিজ সম্পদ থাকার প্রমাণ মিলেছে। যার মধ্যে রয়েছে সবুজ শক্তি প্রযুক্তিতে (গ্রিন এনার্জি টেকনোলজি) ব্যবহৃত বিরল মাটির উপাদান এবং গুরুত্বপূর্ণ খনিজ; সেইসঙ্গে জীবাশ্ম জ্বালানির মজুদ রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এ সম্পদের ভাণ্ডার নিয়ে সীমাহীন উত্তেজনা তৈরি হলেও  এসব খনিজ ও জীবাশ্ম জ্বালানি খুঁজে বের করে উত্তোলন এবং পরিবহন প্রক্রিয়া শুধু কঠিনই নয়, রীতিমত চ্যালেঞ্জও বটে।

কবে থেকে দ্বীপটির ওপর নজর?

কথা হলো, ডনাল্ড ট্রাম্প প্রথম কোনো প্রেসিডেন্ট নন, যিনি দ্বীপটির দিকে প্রথমবারের মতো হাত বড়িয়েছেন! ডেনমার্কের অধীনস্থ স্বায়ত্ত্বশাসিত গ্রিনল্যান্ড এর আগেও যুক্তরাষ্ট্র অধিগ্রহণ করেছিল।

ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, ১৮৬৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম সিয়ওয়ার্ড গ্রিনল্যান্ড এবং আইসল্যান্ড নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার দাবি উত্থাপন করেছিলেন।

এরপর ১৯১০ সালে ডেনমার্কে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মরিস ফ্রান্সিস ইগান্স ডাচ অ্যান্টিলিস এবং ফিলিপাইনের মিন্ডানা দ্বীপের পরিবর্তে গ্রিনল্যান্ডকে পাওয়ার খায়েশ দেখিয়েছিলেন।

প্রায় তিন যুগ পর ১৯৪৬ সালে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস বার্নেস ১০০ মিলিয়ন স্বর্ণ মুদ্রায় দ্বীপটি কিনে নেওয়ার প্রস্তাব দেন।

নিকট অতীতে ডনাল্ড ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে দ্বীপটি কেনার আগ্রহ দেখালেও ডেনিশ প্রধানমন্ত্রী মেটে ফেডরিকসেন ‘অযৌক্তিক’ আখ্যা দিয়ে তা নাকচ করে দেন।

গ্রিনল্যান্ড কত বড়, বয়স কত?

বেশিরভাগ মানচিত্রে গ্রিনল্যান্ডকে বিশাল দেখা গেলেও বাস্তবে গ্রিনল্যান্ডের আয়তন প্রায় ২০ লাখ বর্গকিলোমিটার  বা ৭ লাখ ৭০ বর্গমাইল; যা প্রায় কঙ্গোর সমান।

পৃথিবীর সর্বত্রই ভূতত্ত্বে দীর্ঘ সময়ের দাগ এবং স্বাক্ষর রয়েছে। আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত এবং শীতল আগ্নেয় শিলা, বিশাল মহাদেশীয় সংঘর্ষ এবং টাফি-সদৃশ ফাটল নতুন মহাসাগরের জন্ম। আর এ সমস্ত ভূতাত্ত্বিক কর্মকাণ্ডের প্রমাণ মেলে প্রাচীন শিলা পর্যালোচনায়।

ব্রিটিশ জিওলজিক্যাল সার্ভের প্রধান ভূতত্ত্ববিদ ক্যাথরিন বলেন,“গ্রিনল্যান্ডের ইতিহাস পৃথিবীর যেকোনো কিছুর ইতিহাসের মতোই প্রাচীন।”

তিনি বলেন, এক সময় গ্রিনল্যান্ড একটি বৃহত্তর মহাদেশের অংশ ছিল, যার মধ্যে আজকের উত্তর ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার কিছু অংশ অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রায় ৫০ কোটি বছর আগে গ্রিনল্যান্ড একটি সুপারকন্টিনেন্টের অংশ ছিল, যা ছিল ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার মধ্যভাগ জুড়ে।

বিবর্তনের মধ্য দিয়ে প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ মিলিয়ন বছর আগে সুপারকন্টিনেন্টটি আলাদা হতে শুরু করে। সেখানে একটি ফাটল তৈরি হয় যা থেকে আজকের দিনের উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের জন্ম।

বিজ্ঞানীদের অনুমান, গ্রিনল্যান্ডে খনির সম্পদ ছাড়াও তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসও রয়েছে। গত শতকের ৭০ এর দশক থেকে গ্রিনল্যান্ডের উপকূলে, তেল এবং গ্যাস কোম্পানিগুলি তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করলেও সফলতার মুখ দেখেনি কেউ। তারপর্র গ্রিনল্যান্ডের মহাদেশীয় শেল্ফ ভূত্ত্ব আর্কটিকের অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানি সাইটগুলোর সাথে মিলে যায়।

মূল্যবান খনিজ আছে?

দ্বীপটির বেশিরভাগ অংশ ধীরে ধীরে প্রবাহিত বরফে ঢাকা। হিমবাহগুলো সাগরের দিকে এগিয়ে চলছে। মাত্র ২০ শতাংশ অঞ্চল বরফমুক্ত, যেখানে খাড়া পর্বত, সমুদ্র এবং মাঝে মাঝে শহর রয়েছে। রয়েছে নজর কাড়া রঙিন বাড়িঘর।

ডেনমার্ক ও গ্রিনল্যান্ডের ভূতাত্ত্বিক জরিপের (জিইইউএস) জ্যেষ্ঠ গবেষক থমাস ফাইন্ড ককফেল্ট বলেন, ১২০/১৩০ বছর আগে গ্রিনল্যান্ডে বিশেষ করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অনুসন্ধান আলোচনার বিষয় ছিল। সেখানে বিভিন্ন খনিজের সন্ধান পাওয়া যায় এবং খনি আহরণও শুরু হয়েছিল।

১৮৫০ সালে গ্রিনল্যান্ডের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে ক্রায়োলাইট খনিজটি পাওয়া যায়। বেকিং সোডা তৈরিতে ব্যবহার হতে দেখে স্থানীয়রা ক্রায়োলাইট খনন শুরু করে।

এছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ক্রায়োলাইট সরবরাহ আসে এখান থেকেই।

গ্রিনল্যান্ডে ভূতাত্ত্বিক মানচিত্র তৈরি হয় প্রকৃতপক্ষে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, জানান ককফেল্ট।

ডেনমার্কের আলবর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের টেকসই উন্নয়ন এবং পরিকল্পনা বিষয়ক প্রধান আন্নে মেরিল্ড বলেন, “অন্য অঞ্চলের খনিগুলো শূন্য হয়ে যাওয়ায় মেরু অঞ্চলের খনি আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে।”

অবশ্য গ্রিনল্যান্ডে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও তা উত্তোলন লাভজনক কিনা তা অস্পষ্ট।

নেভাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের রালফ জে রবার্টস রিসার্চ অ্যান্ড ইকোনমিক জিওলজি সেন্টারের পরিচালক সাইমন জোয়াইট বলেন, খনিজ অনুসন্ধান খনির সাথে সম্পর্কিত যে কোনো উদ্যোগের মধ্যে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং এবং ঝুঁকিপূর্ণ।

“১০০টি অনুসন্ধান প্রকল্পের মধ্যে হয়তো একটি সফল খনি হয়ে উঠতে পারে।”

তিনি বলেন, “অনুসন্ধান থেকে উৎপাদন শুরু পর্যন্ত প্রায় ১০ বছর সময় নেয়। তা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে স্থান, অবকাঠামো কী, এবং আপনি যে অনুমোদন এবং অন্যান্য প্রক্রিয়া অনুসরণ করবেন তার ওপর।”

গ্রিনল্যান্ডে শহরের বাইরে কোনো রাস্তা বা রেলপথ নেই। গাড়ি দিয়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়া যায় না; নৌকা বা বিমান ব্যবহার করতে হয়।

প্রতিষ্ঠিত অবকাঠামোর অভাব খনিজ আহরণনের জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।

এছাড়া কোনো খনিতে যদি রেডিওঅ্যাকটিভ পদার্থ থাকে সেক্ষেত্রে ২০২১ সালে গ্রিনল্যান্ড পাস হওয়া এক আইন অনুযায়ী তা খননের ওপর সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

খনিজ উত্তোলনের প্রভাব

এদিকে খনিজ উত্তোলনের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছি গ্রিনল্যান্ডের বর্তমান সংসদ। গ্রিনল্যান্ডে তিনটি পুরানো খনি পরিবেশগত ক্ষতি করেছে, বিশেষ করে দ্বীপের চারপাশের পানির ওপর।

দ্বীপের বাসিন্দা মেরিল্ড বলেন, কিছু বর্জ্য শিলায় ভারী ধাতুর পরিমাণ প্রয়োজনের অতিরিক্ত পাওয়া গেছে, যা বিজ্ঞানীরা খনির আশেপাশে মাকড়সা, মস, মাছ এবং শামুকের মতো জীবজন্তুর মধ্যে পরীক্ষা চালিয়ে প্রমাণ পেয়েছেন।

গ্রিনল্যান্ডের তাপমাত্রা এবং নিম্ন লবণাক্ততার কারণে পরিবেশগত পুনরুদ্ধার অত্যন্ত ধীর হয়। ৫০ বছর পরেও ওই প্রভাব দেখা যায় বলে জানান তিনি।

মেরিল্ড বলেন, “পানি ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা আসলে গ্রিনল্যান্ডবাসীর খাদ্য সরবরাহ এবং মৎসশিকার ও শিকার ভিত্তিক জীবনযাপকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।”

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মেরু অঞ্চলের তাপমাত্রা পৃথিবীর বাকি অংশের তুলনায় প্রায় চারগুণ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্রিনল্যান্ডের তুষারাবরণ প্রতি ঘণ্টায় ৩০ মিলিয়ন টন বরফ হারাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মেরিল্ড বলেন, গ্রিনল্যান্ডবাসীরা খনি কার্যকলাপের বিরুদ্ধে নয়, তবে তাদের কিছু উদ্বেগ রয়েছে। তা হলো ভূমি সম্পর্কিত।

তিনি জানান, সরকার বাসিন্দাদের জন্য ভূমি মালিকানা ও প্রশাসন পরিচালনা করে। এই অর্থ, সবারই ভূমি রয়েছে এবং কারোই নেই।

গ্রিনল্যান্ড কি পরবর্তী ওয়াইল্ড ওয়েস্টে পরিণত হতে চলেছে এমন প্রশ্নের জবাবে ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডরিকসেন বলেন, সেটা গ্রিনল্যান্ডের মানুষের ওপরই নির্ভর করছে।

তবে তাদের দ্বীপের প্রতি আন্তর্জাতিক আগ্রহ শিগগির কমার সম্ভাবনা নেই বলেও মনে করেন তিনি।

ইসরায়েলি কারাগারে কেন এত ফিলিস্তিনি শিশু?

গাজায় হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওয়তায় ইসরায়েলে বন্দি ২৩ ফিলিস্তিনি শিশুকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে; যার মাধ্যমে ইসরায়েলের সামরিক আদালতে শিশুদের বিচারের বিষয়টি সামনে চলে এসেছে।

গত ১৯ জানুয়ারি কার্যকর হওয়া ওই যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর দুই দফায় অন্তত ২৯০ জন ফিলিস্তিনি কারাবন্দিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল।

ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীর ভিত্তিক আদামির প্রিজনার সাপোর্ট এবং হিউম্যান রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যানুসারে, সাম্প্রতিক এই বন্দি বিনিময়ের আগে ইসরায়েলের কারাগারে ৩২০ ফিলিস্তিনি শিশু বন্দি ছিল।

শিশু বন্দি সম্পর্কে কী জানা গেল?

২০১৬ সালে ইসরায়েল নতুন একটি আইন পাস করে। যার আওতায় ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের অপরাধী সাব্যস্ত করে প্রাপ্ত বয়স্কদের মতো বিচার ও দণ্ড দেওয়া যাবে। আগে যা ১৪ বছর বয়সী শিশুদের জন্য প্রযোজ্য ছিল। তবে নতুন আইন অনুযায়ী দণ্ড দেওয়া গেলেও তা ১৪ বছর পূর্ণ হওয়ার পর থেকে কার্যকর হবে।

ইসরায়েলের আইনসভা ক্নেসেট ২০১৬ সালের ২ অগাস্ট আইনটি প্রণয়ন করে। আইন প্রণয়নের সময় আইনসভার বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ‘হত্যা, হত্যা চেষ্টা এবং হত্যায় জড়িতরে মতো গুরুতর অপরাধে জড়িত শিশুদের বন্দি করার’ অনুমতি দেয়া হলো। এমনকি তার বয়স ১৪ বছরের নিচে হলেও।

অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেম থেকে ২০১৫ সালে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে আহমেদ মানাসরা নামে ১৩ বছর বয়সী এক কিশোরকে গ্রেপ্তারের পর নতুন এ আইনটি পাস করা হয়। নতুন আইন পাসের পর তাকে ১২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় এবং তা তার চৌদ্দতম জন্মদিনের দিন বাস্তবায়িত করা হয়। পরে আপিল করা হলে তার দণ্ড কমিয়ে নয় বছর করা হয়।

বেসরকারি সংস্থা সেইভ দ্য চিলড্রেনের হিসাব অনুযায়ী গত ২০ বছরের ১০ হাজার শিশুকে ইসরায়েলি সামরিক কারাগারে রাখা হয়।

শিশুদের গ্রেপ্তারের কারণের মধ্যে পাথর নিক্ষেপসহ অনুমতি ছাড়াও ১০ জন একসঙ্গে জমায়েত হলেও তা প্রযোজ্য।

কোন আইনে শিশুদের আটক?

ইসরায়েল বিতর্কিতভাবে ফিলিস্তিনি বন্দিদের বেসামরিক আদালতে বিচার না করে সামরিক আদালতে বিচার করে থাকে। যদিও আন্তর্জাতিক আইন ইসরায়েলকে তার অধিকৃত অঞ্চলে সামরিক আদালত পরিচালনার অনুমতি দেয়।

দখলকৃত পশ্চিমতীর ও পূর্ব জেরুজালেমে দুই ধরনের বিচার ব্যবস্থা চালিয়ে থাকে ইসরায়েল। সেখানে বসতি স্থাপনকারী ইসরায়েলিদের সাধারণ এবং ফিলিস্তিনিদের সামরিক আদালতে বিচার করা হয়ে থাকে। যার ফলে অনেক ফিলিস্তিনি যথাযথ বিচার প্রক্রিয়া ছাড়াই কারাবন্দি হয়।

২০২৩ সালের নভেমআবরে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিন পরিচালক ওমর শাকির লিখেছিলেন, “রাতে অভিযান চালিয়ে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ ফিলিস্তিনি শিশুদের গ্রেপ্তার করে, অভিভাবকের উপস্থিতি ছাড়াই তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং ১২ বছর বা তার কম বয়সীদের বিচারকের সামনে উপস্থান করা ছাড়াই দীর্ঘ সময় আটকে রাখে।”

ইসরায়েলি সিভিল রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের ২০১৭ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দখলকৃত পশ্চিম তীরের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ ফিলিস্তিনি শিশু বিচার প্রক্রিয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত আটক থাকে; আর ইসরায়েলি শিশুদের হার ২০ শতাংশেরও কম।

ইসরায়েলে বন্দি শিশুদের ২০২০ সালে থেকে প্রতি দুই সপ্তাহ অন্তর একবার ১০ মিনিট করে পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে দেয়।

মুক্তিপ্রাপ্তদের কত জন শিশু?

অস্ত্রবিরতি চুক্তির আওতায় শনিবার ইসরায়েল দুইশ’ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে, যার মধ্যে ১২০ জন যাবজ্জীবন সাজা প্রাপ্ত ছিল। এছাড়া দুই শিশু রয়েছে যাদের বয়স ১৫ বছর। আর সবচেয়ে বয়স্ক মুহাম্মদ আল-তৌস ৬৯ বছর বয়সী। ১৯৮৫ সালে ইসরায়েলের সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধে গ্রেপ্তারের পর ৩৯ বছর কারাবন্দি ছিলেন তিনি।

দীর্ঘ ১৫ মাসের রক্তাক্ত আগ্রাসনের পর যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুসারে শনিবার দ্বিতীয় দফা হিসেবে এদের মুক্তি দেওয়া হয়। প্রথম দফায় তিন ইসরায়েলি বন্দির বিনিময়ে ৯০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেয় ইসরায়েল। যার মধ্যে ৬৯ জন নারী ও ২১ শিশু ছিল।

এদের মধ্যে মাত্র আটজন ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলের হামলার আগে আটক হয়েছিল। এ হামলায় ১১শ’ নিহত হয় এবং ২৫০ জনকে ধরে নিয়ে আসে তারা। এরপরই গাজায় সর্বাত্মক হামলা চালায় ইসরায়েল।

ফিলিস্তিনি এসব বন্দির মধ্যে অনেকে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে ইসরায়েলি কারাগারে রয়েছেন।

ফিলিস্তিন ন্যাশনাল লিবারেশন মুভমেন্ট (ফাতাহ) এর সহপ্রতিষ্ঠাতা মারওয়ান বারঘৌতি ২২ বছর ধরে ইসরালেলি কারাগারে বন্দি রয়েছেন। দখলের আগে পশ্চিম তীর নিয়ন্ত্রণে ছিল ফাতাহর।

দোহা ইনস্টিটিউট ফর গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের সহযোগী অধ্যাপক তামার ক্বারমাউত  আল জাজিরাকে বলেন, ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি পরিবারগুলির জন্য ‘অনেক বড় উপশম’ হলেও তা ঘটছে “ইসরায়েলি দখলের ভয়াবহ বাস্তবতার মধ্যে”।

তিনি বলেন, আলোচনার মাধ্যমে সংঘর্ষ শেষ করে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং দখল শেষ করার মতো বড় একটি চুক্তিতে এসব বন্দিদের মুক্তি পাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু কঠোর বাস্তবতা হলো দখল অব্যাহত আছে।

কত ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি কারাগারে?

আদামিররে রোববারের তথ্য অনুসারে ইসরায়েলের কারাগারে ১০ হাজার চারশ’ ফিলিস্তিনি রয়েছে, যারা গাজা ও পশ্চিম তীরের। ফিলিস্তিনের দখলকৃত অঞ্চলের প্রতি পাঁচজনে একজন কোনো না কোনো সময় গ্রেপ্তার হয়ে বিচারের সম্মুখীন হয়েছে। তবে শুধু পুরুষদের মধ্যে এ সংখ্যা দ্বিগুণ; প্রতি পাঁচজনে দুইজন।

ইসরায়েলের ১৯টি কারাগার রয়েছে। এর মধ্যে একটি দখলকৃত পশ্চিমতীরে যেখানে ফিলিস্তিনি বন্দিদের রাখা হয়। গত অক্টোবর থেকে ইসরায়েল সেখানে স্বতন্ত্র মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রবেশ বন্ধ করে দেয়। ফলে ভেতরে কত বন্দি এবং তারা কী অবস্থায় রয়েছে তা জানা কঠিন হয়ে যায়।

গাজায় আগ্রাসন শুরু হওয়ার আগে ও পরে বন্দি হওয়া ফিলিস্তিনিরা জানিয়েছেন, কারাগারে তারা মারধর, নির্যাতন এবং অবমাননার শিকার হয়েছেন।

বিনা অভিযোগে আটক কত?

আদামির তথ্যানুসারে ইসরায়েল প্রশাসনিক আটকাদেশের অধীনে ৩ হাজার ৩৭৬ জন ফিলিস্তিনি বন্দি আছে। প্রশাসনিক আটকাদেশ হচ্ছে এমন একটি ব্যবস্থা যার মাধ্যমে কাউকে বিনা বিচার বা বিনা অভিযোগে কারাবন্দি করে রাখা যায়।

প্রশাসনিক আটকাদেশে আটকদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। এদের বিরুদ্ধে ‘গোপন প্রমাণ’ থাকার দাবি করে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ, যা তাদের আইনজীবীদেরও দেখার অনুমতি নেই। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই তারা এমনটি করে আসছে।

 ৪১ শিশু ও ১২ নারী প্রশাসনিক আটককৃতদের মধ্যে রয়েছে বলে আদামির জানিয়েছে।

এরপর কী?

যুদ্ধবিরতির প্রথম দফার ছয় সপ্তাহের মধ্যে সাধারণ ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ২৬ জন অন্যান্য বন্দিকে মুক্তি দেয়া হবে। পরবর্তী বন্দি বিনিময় আগামা শনিবার হওয়ার কথা রয়েছে।

অনেকের প্রত্যাশা পরবর্তী ধাপ ২৩ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত এবং হাজার হাজার মানুষের প্রাণ নেওয়া গাজা যুদ্ধের অবসান ঘটাবে। এ পর্যাযের আলোচনা আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

আল জাজিরা অবলম্বনে

Advertisement

ঘিবলি ট্রেন্ড কেন এত জনপ্রিয়?

ইন্টারনেটে নতুন উন্মাদনা ঘিবলি-তে নিজেদের ছবি রূপান্তরিত করছেন অভিনেতা এবং ক্রীড়া তারকা থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ পর্যন্ত। এই প্রবণতা সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে, এতটাই জনপ্রিয় হয়েছে যে এমনকি ওপেনএআই-এর সিইও স্যাম অল্টম্যানও ব্যবহারকারীদের ধীরে চলার জন্য রসিকতার সাথে অনুরোধ করেছেন, কারণ তার দলেরও তো ঘুমের প্রয়োজন! রাতারাতি ঘিবলি’র ট্রেন্ড হয়ে ওঠার পেছনে রয়েছে কিছু মনস্তাত্বিক কারণ।

শৈশবের স্মৃতি যেন সব সময়ই আমাদের কাছে এক সুখানুভূতির উৎস। জাপানি স্টুডিও ঘিবলির জনপ্রিয় চলচ্চিত্র— মাই নেবার টোটোরো, স্পিরিটেড অ্যাওয়ে, কি-কির ডেলিভারি সার্ভিস— বহু মানুষের শৈশবের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। এই চলচ্চিত্রগুলো কেবল বিনোদন নয়, বরং এক রকম আবেগঘন অনুভূতি, যা মানুষকে ফিরিয়ে নেয় নির্ভার শৈশবে। তাই যখন কেউ নিজের জীবনের মুহূর্তগুলোকে ঘিবলি-শৈলীতে উপস্থাপন করেন, তখন তা যেন এক মিষ্টি স্মৃতির জানালা খুলে দেয়।

এস্কেপিজম বা বাস্তবতা থেকে সাময়িক মুক্তি পাওয়া মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। ব্যস্ত নগরজীবন, দায়িত্বের ভার আর প্রযুক্তিনির্ভর যান্ত্রিক জীবন থেকে সামান্য অবসর চায় সবাই। স্টুডিও ঘিবলির চলচ্চিত্রগুলোতে প্রকৃতির স্নিগ্ধতা, জাদুকরী কল্পনা আর সহজ-সরল জীবনের যে রূপায়ণ দেখা যায়, তা আমাদের মনে প্রশান্তির অনুভূতি এনে দেয়। ঘিবলি ট্রেন্ড সেই স্বপ্নময় দুনিয়াকে বাস্তব জীবনে নিয়ে আসার এক প্রচেষ্টা।

চোখের আরামদায়ক রঙ, সূক্ষ্ম আলো-ছায়ার বিন্যাস, আর কল্পনার সঙ্গে বাস্তবের এক অপূর্ব সংমিশ্রণ— ঘিবলি-শৈলীর মূল বৈশিষ্ট্য। মানুষের মন এমন নান্দনিক উপস্থাপনায় সহজেই আকৃষ্ট হয়। নরম রঙের আলো, প্রকৃতির স্নিগ্ধতা, আর গল্পের মতো সাজানো দৃশ্য আমাদের মস্তিষ্কে এক ধরনের প্রশান্তি সৃষ্টি করে। তাই সামাজিক মাধ্যমে যখন কেউ নিজের জীবনের সাধারণ মুহূর্তগুলোকেও এই শৈলীতে রূপান্তরিত করে, তখন তা দর্শকদের হৃদয়ে অনুরণন তোলে।

যেকোনো সামাজিক মাধ্যমের প্রবণতা তখনই জনপ্রিয় হয়, যখন মানুষ তা অনুকরণ করতে শুরু করে। ঘিবলি ট্রেন্ডের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই ঘটেছে। মানুষ যখন দেখে যে, সাধারণ কোনো দৃশ্যকেও ঘিবলি-শৈলীর মাধ্যমে মোহনীয় করে তোলা যায়, তখন তারাও একই কাজ করতে চায়। ফলে একের পর এক ভিডিও তৈরি হতে থাকে, যা মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে।

কখনও ভেবেছেন এই প্রবণতাকে জনপ্রিয় করে তোলার পেছনে কার বড় ভূমিকা ছিল? সিয়াটলের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার গ্রান্ট স্ল্যাটন, অজান্তেই এই ‘ঘিবলি-রূপান্তরিত’ ক্রেজকে জ্বালানি জুগিয়েছিলেন। টাইমস অব ইন্ডিয়া তাদের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করেছে।

গত সপ্তাহে, ওপেনএআই নতুন ইমেজ-জেনারেটিং টুল চালু করে এবং স্ল্যাটন এটি নিয়ে পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি এক্স (পূর্বে টুইটার) এ সমুদ্র সৈকতে তার পরিবার এবং কুকুরের স্টুডিও ঘিবলি-শৈলীর এআই দিয়ে তৈরি ছবি শেয়ার করেন। তার ক্যাপশন ছিল- “আপনার স্ত্রীর কাছে আপনাদের ছবি স্টুডিও ঘিবলি অ্যানিমের মতো বানিয়ে পাঠানোর বিষয়টা এখন খুব ‘আলফা’ (নতুন প্রজন্মের ট্রেন্ড বা জনপ্রিয়তা বোঝাতে)।”

ব্যবহারকারীদের মধ্যে সাড়া ফেলে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পোস্টটি ৪২ হাজার লাইক এবং প্রায় ২ কোটি ৭০ লাখ ভিউ পায়। আর এর ফলেই ঘিবলি-অনুপ্রাণিত ছবি সম্পাদনার ঢেউ তৈরি হয়।

যদিও স্ল্যাটন এই টুল ব্যবহারকারী প্রথম ব্যক্তি ছিলেন না, তবে তার ভাইরাল পোস্টটি এই প্রবণতাকে সবচেয়ে বড় ধাক্কা দেয়, যা বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে।

...

মাইনক্রাফ্ট গেমে শিশুরা আসক্ত কেন?

মাইনক্রাফ্ট সর্বকালের অন্যতম জনপ্রিয় ভিডিও গেম। ২০০৯ সালে প্রথম বাজারে আসার পর, ২০২৩ সালের মধ্যে এর ৩০০ মিলিয়নেরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে। এটি এবং রোব্লক্স এবং টেরারিয়ার মতো গেমগুলি শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্ক পর্যন্ত সব বয়সের গেমাররা উপভোগ করে।

এই গেমটি ঘণ্টার পর ঘণ্টা শিশুদের মনোযোগ ধরে রাখতে সক্ষম, এখনকার স্বল্পস্থায়ী মনোযোগের যুগে এটি একটি অসাধারণ কৃতিত্ব। অবশ্য কিছু অভিভাবকের শঙ্কা রয়েছে যে মাইনক্রাফ্টের প্রতি তাদের সন্তানদের আগ্রহ প্রায় আসক্তির পর্যায়ে চলে যেতে পারে। কারণ তারা তাদের কম্পিউটার স্ক্রিন থেকে দূরে সরাতে হিমশিম খান।

মাইনক্রাফ্টের জনপ্রিয়তা এতটাই বেশি যে, জ্যাক ব্ল্যাক এবং জেসন মোমোয়া অভিনীত ‘আ মাইনক্রাফ্ট মুভি’ নামে একটি বহুল প্রতীক্ষিত হলিউড চলচ্চিত্র ২০২৫ সালের এপ্রিলে মুক্তি পেতে চলেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, মাইনক্রাফ্ট এবং এর মতো গেমগুলির সাফল্যের পিছনে গভীর মনস্তাত্ত্বিক- এমনকি বিবর্তনীয় কারণও থাকতে পারে। এই গেমগুলি আমাদের সকলের মধ্যে একটি সহজাত প্রবৃত্তিকে কাজে লাগায়- যা আমাদের সমগ্র প্রজাতির সাফল্যের ভিত্তি। আর সেটি হলো- নির্মাণের আকাঙ্ক্ষা।

শিশুরা সবসময়ই কিছু না কিছু তৈরি করতে পছন্দ করে- স্যান্ডক্যাসল, দুর্গ, ট্রিহাউস- এর কয়েকটি উদাহরণ মাত্র। কাঠের ব্লক, ক্লেডো এবং লেগোও ভাল উদাহরণ। মাইনক্রাফ্ট সম্ভবত ডিজিটাল জগতে এই ধরনের খেলার একটি সাম্প্রতিক সংস্করণ। অনেক শিশুর কাছেই এই বিভিন্ন ধরনের বস্তু তৈরির বিষয়টি আকর্ষণীয় কেন?

যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের বোস্টন কলেজের শিশু শিক্ষার পদ্ধতি নিয়ে গবেষণারত মনোবিজ্ঞানী পিটার গ্রে বলেন, ‘সকল স্তন্যপায়ী প্রাণীই তাদের শৈশবে খেলাধুলা করে। উদাহরণস্বরূপ, শিকারি প্রাণীরা বিভিন্ন প্রাণী বা বস্তু ধরার খেলা খেলে। লাফানো এবং পালানোর অনুশীলন করে।

এ বছরই জনপ্রিয় এই গেমটির থিম নিয়ে একটি সিনেমা মুক্তি পাবে।

গ্রে বলেন, “তাদের বেঁচে থাকার এবং শেষ পর্যন্ত সঙ্গীর সাথে মিলিত হওয়ার ক্ষমতার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতাগুলো তারা খেলার মাধ্যমে আয়ত্ত করে”

মানুষ অন্যান্য প্রাণীদের থেকে আলাদা, কারণ আমাদের বেঁচে থাকার অনেকটাই নির্ভর করে বস্তু তৈরির ক্ষমতার ওপর- কাদা দিয়ে তৈরি কুঁড়েঘর থেকে শুরু করে শিকার এবং সংগ্রহের সরঞ্জাম পর্যন্ত। “এটা আশ্চর্যজনক নয় যে প্রাকৃতিক নির্বাচন শিশুদের জিনিস তৈরির খেলায় শক্তিশালী প্রেরণা দিয়েছে,” বলেন গ্রে।

শিশুরা কথা বলা ও কল্পনাশক্তি ব্যবহার করে খেলাধুলা করে, অথবা এমন সব খেলা তৈরি করে যেখানে নিয়মকানুন থাকে এবং একে অপরের সাথে মেলামেশা করার সুযোগ থাকে। এগুলো তাদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি হিসেবে কাজ করে। তাদের হৃদয়ে থাকে – সবই যেন প্রাপ্তবয়স্ক জীবনের প্রস্তুতির অংশ।

গ্রে বলেন, খেলার সময় শিশুরা কী তৈরি করতে পছন্দ করে এবং কীভাবে তৈরি করে, তা সাধারণত তারা যে সংস্কৃতিতে বাস করে তার প্রতিফলন। তিনি বলেন, “আজ শিশুরা কম্পিউটারে খেলতে সত্যিই আকৃষ্ট হচ্ছে দেখে আমাদের মোটেই অবাক হওয়া উচিত নয় – এবং এটি আমাদের উদ্বিগ্নও করা উচিত নয়। আমি বলবো, শিশুরা তাদের হাড়ে, তাদের সহজাত প্রবৃত্তিতে জানে যে এই দক্ষতাগুলো তাদের বিকাশ করা দরকার।”

নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানী জুলিয়ান টোগেলিয়াস তার নিজের ছেলের মধ্যেও বিভিন্ন জিনিস তৈরির সহজাত প্রবণতা লক্ষ্য করেছেন, যদিও তার বয়স এখনও তিন বছর হয়নি। টোগেলিয়াস ব্যাখ্যা করেন, নার্সারিতে তার ছেলে খেলনা ট্রেন এবং ট্রাক চালানোর জন্য সুড়ঙ্গ তৈরি করতে শুরু করে। যখন তার ছেলে একটু বড় হবে, তখন কম্পিউটারও তার কাছে প্রিয় বস্তু হয়ে দাঁড়াতে পারে। টোগেলিয়াস বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, স্যান্ডবক্স গেমগুলো (যেমন মাইনক্রাফ্ট, যেখানে খেলোয়াড়দের কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছাড়াই তাদের সৃজনশীলতা অন্বেষণ করার স্বাধীনতা দেওয়া হয়) কম্পিউটারে কাজ করা এবং বিভিন্ন কিছু করা সহজ করে তোলে।

তিনি বলেন, “মাইনক্রাফ্টের জগতে সরাসরি এবং সহজভাবে কিছু তৈরি করা যায় । কোড লেখার চেয়ে এটি অনেক সহজ।”

অন্য কথায়, আগেকার দিনে কম্পিউটার শিশুদের নির্মাণের স্বাভাবিক ইচ্ছাকে বাধা দিত। কিন্তু এখনকার এই গেমগুলো সেই ইচ্ছাকে পূরণ করে।

শুধু যে জিনিস তৈরি করা যায়, তা-ই নয়, আরও অনেক কারণে মাইনক্রাফ্ট গেমটি আকর্ষণীয়। গেমের স্যান্ডবক্স মোডে খেলোয়াড়রা নিজেদের ইচ্ছেমতো জিনিস তৈরি করতে পারে। তবে, এখানে সার্ভাইভাল মোডও আছে, যেখানে শত্রুদের সাথে লড়াই করতে হয়। মিনোট্টি বলেন, এছাড়া এই গেমটি খেলার মাধ্যমে সামাজিক সম্পর্কও তৈরি হয়।

যখন তার বাচ্চারা তাদের বন্ধু বা চাচাতো-মামাতো ভাইদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করতে পারে না, তখন তারা অনলাইনে দেখা করতে পারে: “এটি একটি ভার্চুয়াল আড্ডার জায়গা হয়ে ওঠে।”

মাইনক্রাফ্টকে একটি ভার্চুয়াল খেলার মাঠ হিসেবে ভাবা যেতে পারে, যেখানে শিশুরা তাদের নিজস্ব স্থান খুঁজে নিতে পারে। কারণ এই গেমে বিভিন্ন ধরনের কার্যকলাপ এবং খেলার শৈলী বাছাই করার সুযোগ তাদের রয়েছে।

টোগেলিয়াস গবেষণা করেছেন- কীভাবে মাইনক্রাফ্টে গেমারদের আচরণ তাদের ব্যক্তিত্বের দিকগুলো প্রকাশ করে।

তিনি মনে করেন, মাইনক্রাফ্ট গেমে খেলোয়াড়দের নিজেদের মতো করে খেলার স্বাধীনতা দেওয়া হয়। ফলে, আর্কেড ক্লাসিক ‘অ্যাস্টেরয়েডস’ গেমের চেয়ে এই গেমে খেলোয়াড়রা নিজেদের ব্যক্তিত্ব ভালোভাবে প্রকাশ করতে পারে। ‘অ্যাস্টেরয়েডস’ গেমে খেলোয়াড়দের মহাকাশ থেকে আসা পাথরগুলোতে গুলি করতে হয়, যেখানে নিজেদের মতো করে কিছু করার সুযোগ খুব কম।

টোগেলিয়াস তার গবেষণার জন্য প্রাপ্তবয়স্কদের একটি প্রশ্নপত্র পূরণ করতে বলেন। এই প্রশ্নপত্র থেকে তাদের ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে কিছু ধারণা পাওয়া যায়। এরপর, তিনি প্রশ্নপত্রের উত্তরের সঙ্গে মাইনক্রাফ্ট খেলার ধরন তুলনা করেন। গবেষণায় দেখা যায়, মাইনক্রাফ্টে খেলার ধরনের ওপর উত্তরদাতাদের ব্যক্তিত্বের কিছু বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে মিল রয়েছে।

যদিও টোগেলিয়াস শিশুদের নিয়ে গবেষণা করেননি, তার ধারণা, বড়দের মতো শিশুদের ব্যক্তিত্বও গেমে প্রকাশ পায়। তার গবেষণায় তিনি দেখেছেন, মাইনক্রাফ্ট খেলোয়াড়রা সাধারণ মানুষের চেয়ে বেশি কৌতূহলী এবং তাদের মধ্যে প্রতিশোধ নেওয়ার প্রবণতা কম। অর্থাৎ, তারা নতুন জিনিস জানতে চায় এবং অন্যের ক্ষতি করার চেয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণে বেশি আগ্রহী

টেক্সাস টেক ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানী বেইলি ব্রাশিয়ার্স, যিনি মাইনক্রাফ্টকে মনস্তাত্ত্বিক গবেষণার কাজে কীভাবে ব্যবহার করা যায়, তা নিয়ে একটি গবেষণা পত্র প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, স্যান্ডবক্স গেমগুলোর (যেমন: মাইনক্রাফট) বিস্তৃত সুযোগের কারণে এটি অনেকের কাছেই জনপ্রিয়। ব্রাশিয়ার্স গেমটির পাঁচটি প্রধান দিক চিহ্নিত করেছেন:

১. সামাজিক দিক ( যেমন: অন্যদের নিয়ে একসাথে খেলা)

২. নিজের দক্ষতা প্রমাণের সুযোগ ( যেমন: যুদ্ধ বা অনুসন্ধান)

৩. প্রকৌশল ( যেমন: বিভিন্ন জিনিস তৈরি করা)

৪. সৃজনশীলতা ( যেমন: নতুন কিছু বানানো)

৫. টিকে থাকার চেষ্টা ( যেমন: বিপদ থেকে বাঁচা)

ব্রাশিয়ার্স বলেন, “সাধারণত একটি গেমে এই দিকগুলোর মধ্যে এক বা দুটি থাকে। যেমন, ফোর্টনাইট গেমটি মূলত সামাজিক খেলা এবং টিকে থাকার চেষ্টার উপর ভিত্তি করে তৈরি।”

শিশুরা মাইনক্রাফ্টে অনেক বেশি সময় কাটায়, যা তাদের অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম অভিভাবকদের উদ্বেগের কারণ। মেলিসা হোগেনবুমের একটি লেখায় স্ক্রিন টাইমের ভালো-মন্দ দিকগুলো আলোচনা করা হয়েছে।

মিনোট্টি বলেন, তার বাচ্চারা শুধু মাইনক্রাফ্ট খেলে না, তারা বাইরে বাস্কেটবলও খেলে। তবে, তিনি তাদের অতিরিক্ত ভিডিও গেম খেলা থেকে বিরত রাখেন এবং তাদের অনলাইন বন্ধুত্বের অনুরোধগুলো যাচাই করেন। তিনি বলেন, “আমরা তাদের ইন্টারনেটে অবাধে ছেড়ে দিই না।”

যুক্তরাজ্যের শিশুদের দাতব্য সংস্থা এনএসপিসিপি মাইনক্রাফ্ট খেলার সময় শিশুদের নিরাপত্তার জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছে। মাইনক্রাফ্টে শিশুদের ওপর নির্যাতন ও অপব্যবহারের মতো ঘটনা ঘটেছে। রোব্লক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের গেম প্ল্যাটফর্ম থেকে দূরে রাখতে বলেছেন। যদি তারা ক্ষতিকর কিছু দেখার ভয়ে থাকেন।

মিনোট্টি মনে করেন তার বাচ্চারা নিরাপদে মাইনক্রাফ্ট খেলতে পারে। কারণ তিনি তাদের ওপর নজর রাখেন। তিনি বলেন, এটি একটি ডিজিটাল খেলার মাঠের মতো। মাইনক্রাফ্টের মাধ্যমে মানুষ নতুন উপায়ে যোগাযোগ করতে পারে। কোভিড-১৯ এর সময় অধ্যাপকরা মাইনক্রাফ্টের মাধ্যমে অনলাইনে পড়িয়েছেন। আয়ারল্যান্ডের শিক্ষকরা মাইনক্রাফ্ট এডুকেশনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছেন।

শিক্ষার্থীদের গ্যেলিক ভাষা শেখার জন্য মাইনক্রাফ্টে একটি গেম তৈরি করা হয়েছিল। সেখানে রেস্টুরেন্ট ও খাবার তৈরি করে ভাষা শেখানো হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, মাইনক্রাফ্ট শিক্ষার্থীদের স্কুলের কাজে আগ্রহ বাড়ায়। মাইনক্রাফ্ট খেললে খেলোয়াড়রা গভীরভাবে মনোযোগী হয়। এটি তাদের মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে।

তবে, মাইনক্রাফ্ট সবার কাছে সমান জনপ্রিয় নয়। অস্ট্রেলিয়ায় একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা বেশি মাইনক্রাফ্ট খেলে। লেখকরা বলেন, ছেলে ও মেয়ে উভয়ের জন্য গেমগুলো আকর্ষণীয় হওয়া উচিত। কারণ, গেমগুলো শিশুদের ডিজিটাল দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে।

মিনোট্টি তার মেয়েদের কম্পিউটার দক্ষতা নিয়ে চিন্তিত নন। মাইনক্রাফ্ট তাদের পছন্দের খেলা। তাদের লেগো দিয়ে খেলার জায়গা নেই। তাই তারা মাইনক্রাফ্টে খেলে। তিনি বলেন, মাইনক্রাফ্টে তারা তাদের কল্পনার সব লেগো ব্লক ব্যবহার করতে পারে।

...

রাশমিকা বয়স কত হলো?

দক্ষিণী সিনেমার সুপার স্টার রাশমিকা মান্দানা এখনো ৩০ বছরে পা দেননি। অল্প সময়ে চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে একের পর এক সফল সিনেমার সঙ্গে নাম লিখেয়েছেন এ অভিনেত্রী। বলিউড থেকে দক্ষিণী বিনোদন ভুবন দুই জায়গাতেই কাজ করে যাচ্ছেন এ তারকা।

আল্লু অর্জুন থেকে শুরু করে সালমান খান কিংবা রণবীর কাপুর, এরই মধ্যে প্রথম সারির সব বলিউড তারকাদের সঙ্গে কাজ করা ফেলেছেন এ অভিনেত্রী। আসছে ৫ এপ্রিল ২৯ বছরে পদার্পণ করবেন রাশমিকা। জন্মের মাসের শুরুতে তার নতুন উপলদ্ধি তৈরি হয়েছে।

যদিও বয়স যত বাড়ে জন্মদিন নিয়ে উপলব্ধি পাল্টায়। যদিও রাশমিকার তেমন কিছুই হয়নি। তিনি নিজেকে নিয়ে ভীষণ খুশি। এ প্রসঙ্গে রাশমিকা বলেছেন, ‘এটা আমার জন্মদিনের মাস, আমি খুবই উত্তেজিত। আমি সব সময় শুনেছি যে বয়স যত বাড়ে, জন্মদিন উদযাপনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে মানুষ। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা উল্টো।’

রাশমিকা আরও বলেন, ‘বয়স যত বাড়ে, জন্মদিন উদযাপনে তত বেশি উতলা হয়ে উঠছি। বিশ্বাসই হচ্ছে না যে আমি এরই মধ্যেই ২৯ বছরে পা দিয়েছি। আমি আরও একটা বছর সুস্থ, সুখী এবং নিরাপদে কাটিয়ে দিলাম! উদযাপনের জন্য যথেষ্ট কারণটা!’

বাংলাদেশে আসছে পাকিস্তানি ব্যান্ড

পাকিস্তানের জনপ্রিয় রক ব্যান্ড বায়ান প্রথমবারের মতো কনসার্ট করতে বাংলাদেশে আসছে। এই সফর দিয়ে দলটির বিশ্ব ট্যুর শুরু হবে।

বাংলাদেশ সফর নিয়ে বায়ানের অফিসিয়াল ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয় ৩০ মার্চ। ভিডিওতে দলটির ভোকালিস্ট আসফার হুসেনকে বলতে শোনা যায়, ‘কেমন আছো বাংলাদেশ, আমাদের সফরের সঙ্গে যুক্ত হতে প্রস্তত সবাই?’ এর পরই ভিডিওটি বাংলাদেশে তাদের ভক্তদের নজর কারে।

বায়ানের ‘সফর ট্যুর’ শিরোনামের এই কনসার্টটি আয়োজন করেছে দেশের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এরই মধ্যে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ছাড়া হয়েছে টিকিটও। তবে ভেন্যু এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।

পাকিস্তানের সংগীত জগতের আলোচিত ব্যান্ড বায়ান। ‘দ্য সফর ট্যুর’ শিরোনামে তারা পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কনসার্ট করবে।

তাদের জনপ্রিয় গানের তালিকায় রয়েছে ‘নেহি মিলতা’, ‘মেরা মুসাফির’, ‘সুনো’, ‘ফারদা’, ‘কাহা যাউ’ ইত্যাদি।

বায়ান ব্যান্ডের সদস্য সংখ্যা : আসফার হুসাইন, শাহরুখ আসলাম, মনসুর লাশারি, মুকিত শাহজাদ, হায়দার আব্বাস।

...

‘ছিঃ ছিঃ ছিঃ রে ননী ছিঃ’ কেন ভাইরাল?

সামাজিক মাধ্যম খুললেই এখন একটাই গান, ‘ছিঃ ছিঃ ছিঃ রে ননী ছিঃ’। সেই গান দিয়ে মিম, রিলের ছড়াছাড়ি চারপাশে। হাসির ভিডিও, কান্নার ভিডিও, মজার ভিডিও, কোথায় ব্যবহার হচ্ছে না সেই গান!। এমনকি পিকনিকে যাওয়া বা বন্ধুদের সঙ্গে পার্তিতেও সেই একই গান। কিন্তু প্রশ্ন হল এই গানের আসল মানে কী, জানেন?

এটি আসলে ভারতের উড়িয়া ভাষায় গাওয়া একটি গান। বিখ্যাত উড়িয়া সঙ্গীত শিল্পী সত্য অধিকারীর গাওয়া এই গান। উড়িষ্যার কোরাপুটের স্থানীয় ভাষায় লেখা গান। এই গান প্রথম রেকর্ড করা হয় ১৯৯৫ সালে। ছয় বছর পরে তৈরি হয় মিউজিক ভিডিও।

এই গানে অভিনয় করেছেন সম্বলপুরের গোবিন্দতলার বাসিন্দা বিভূতি বিশ্বল। তিনি একজন মঞ্চ অভিনেতা। বেশ কিছু ছবিতেও নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। এমনকি, অল ইন্ডিয়া রেডিও-র একজন প্রতিষ্ঠিত শিল্পী এবং শিক্ষক।

‘ছিঃ ছিঃ ছিঃ রে ননী ছিঃ/ ধনকে চিনলি তুই ননী সিনা/ মনকে চিনলি নাই/ সুনাকে চিনলি, মনাকে চিনলি/ মানুষ চিনলি নাই/ ছিঃ ছিঃ ছিঃ রে ননী ছিঃ’। এই গান এখন চারিদিকে ভাইরাল। কিন্তু কী মানে এই গানের জানেন?

সত্যিই লজ্জার, ননী/ তুমি শুধুই সম্পত্তি দেখলে, কিন্তু আমার ভালোবাসার প্রকৃত মূল্য দিতে পারলে না/ তুমি সোনা ও দামি গয়না চিনতে পেরেছ। কিন্তু, প্রকৃত মানুষ চিনতে পারোনি/ আমার সম্পত্তির অভাব ছিল বলে তুমি আমাকে এ ভাবে ছেড়ে দিয়েছ/ যার টাকা পয়সা আছে তার মন নাই/ আমার মনকে দেখলি না ছিঃ ছিঃ ছিঃ রে ননী ছিঃ।

মিউজিক ভিডিও পরিচালনা করেছিলেন মানবভঞ্জন নায়েক। ভিডিওটির প্রযোজক ও গানটির রচয়িতা সীতারাম আগরওয়াল। গেয়েছিলেন সত্যনারায়ণ অধিকারী। পর্দায় দেখা গিয়েছে বিভূতি বিশ্বালকে। মঞ্চশিল্পী হিসেবে খ্যাতিমান ওই অভিনেতাকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল।

কে জানত, দুই দশক পরে আচমকাই ভাইরাল হয়ে যাবে গানটি। ইউটিউবে ভিউ ছাড়িয়েছে প্রায় দুই কোটি। নতুন বছরে সকলের ফোনে বা অন্য ডিভাইসে বাজছে, বেজেই চলেছে ‘ছি ছি রে ননী’।

...

ফের ঐশ্বরিয়ার হাতে বিয়ের আংটি, তবে কী বিচ্ছেদ হচ্ছে না? 

বচ্চন পরিবারের অশান্তির জল্পনা নতুন নয়। ঐশ্বরিয়া রায় বচ্চন ও অভিষেক বচ্চনের সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়েও নানা রটেছে এবং রটে চলেছে। কিছুদিন আগে দুবাই যাত্রার সময় ঐশ্বরিয়ার আঙুলে তাঁর বিয়ের আংটিখানি দেখা যায়নি। তাতেই নতুন করে তারকা দম্পতির বিচ্ছেদের জল্পনায় ঘৃতাহুতি পড়ে। তবে প্যারিস ফ্যাশন উইকে বিয়ে ভাঙার জল্পনা এক পোজেই নস্যাৎ করে দিলেন বচ্চন পরিবারের বধূ। আবারও তাঁর হাতে দেখা গেল অভিষেকের পরানো আংটিখানি।

একটি অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মেয়ে আরাধ্যাকে নিয়ে দুবাই গিয়েছিলেন ঐশ্বরিয়া। সেখানকার ছবি ও ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। নেটিজেনদের একাংশের নজরে পড়ে অভিনেত্রীর হাতে তাঁর বিয়ের আংটি নেই। তাতই প্রশ্ন ওঠে, তাহলে কি অভিষেকের সঙ্গে বিচ্ছেদ? আর সেই কারণেই আংটি খুলে ফেলেছেন প্রাক্তন বিশ্বসুন্দরী।

২০০৭ সালে অভিষেক ও ঐশ্বরিয়ার বিয়ে হয়। বচ্চন পরিবারের বধূ হন অভিনেত্রী। ২০১১ সালের ১৬ নভেম্বর অভিষেক-ঐশ্বরিয়ার একমাত্র মেয়ে আরাধ্যার জন্ম হয়। বলিউডে কানাঘুষো, শাশুড়ি জয়া বচ্চন ও ননদ শ্বেতার সঙ্গে নাকি ঐশ্বরিয়ার একেবারেই বনিবনা নেই। এমন পরিস্থিতিতে তাঁর ও অভিষেকের সম্পর্কও নাকি টালমাটাল। রটনা, মেয়েকে নিয়ে নাকি মা বৃন্দা রাইয়ের সঙ্গে থাকছেন অভিনেত্রী। এমন পরিস্থিতিতে তাঁর হাতে আংটি নেই দেখে অনেকেই উদ্বিগ্ন হয়েছিলেন।

কিন্তু প্যারিস ফ্যাশন উইকে সমস্ত জল্পনা, কল্পনার জবাব ঐশ্বরিয়া আংটি হাতেই দিলেন। এবারে প্যারিস ফ্যাশন উইকের র‌্যাম্পে সাটিনের লাল গাউন পরেছেন বচ্চন পরিবারের বধূ। তার সঙ্গেই ছিল বোল্ড রেড লিপস্টিক। বিশাল একটি ভেইল ছিল ঐশ্বরিয়ার এই পোশাকে। যে প্রসাধনী সংস্থার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হয়ে মার্জার সরণিতে হেঁটেছিলেন, তারই ক্যাচলাইন লেখা ছিল তাতে।
 

...

সালমান শাহর মৃত্যু নিয়ে এবার কি বললেন সামিরা?

সাবেক স্বামী সালমান শাহর মৃত্যু প্রসঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন সামিরা। বেসরকারি চ্যানেল টোয়েন্টিফোরকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সামিরা বলেছেন, ‘আত্মহত্যা যারা করে, তারা তো কিছু বলে করে না। এখন নীলা চৌধুরী বারবার বলেন, সামিরাকে কেন রিমান্ডে নেওয়া হয় না। একটা বাসায় একটা বাচ্চা যখন আত্মহত্যা করে, সে বাচ্চার মা–বাবাকে কি আমরা উঠিয়ে নিয়ে চলে যাই? তাহলে আমাকে কেন উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে? ইট ইজ সুইসাইড।’

কেন এটি সুইসাইড, সেই ব্যাখ্যা নিজেই দিলেন সামিরা। বললেন, ‘ও (ইমন) মেন্টালি সুইসাইডাল বাই নেচার। এর আগে তিনবার সুইসাইডের চেষ্টা করেছে। মেট্রোপলিটন হাসপাতালের রেকর্ড চেক করলে জানা যাবে। ওখানে দুবারের রেকর্ড আছে। আরেক হাসপাতালে একবার আছে। তিনটাই আমার বিয়ের আগে। তিনটা ঘটনাই আমি জানি। একবার মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে করেছিল। আরেকবার আমাকে বিয়েতে রাজি করানোর জন্য করেছে। আরেকবার ওর কিছু একটা হয়েছিল, সেটার জন্যও করেছিল।’

কথা প্রসঙ্গে সামিরা এ–ও বললেন, ‘একটা কথা বলতে চাই, ইমন কিন্তু ছবিতে ক্যারিয়ার করতে চায়নি। সে পড়াশোনা করতে চেয়েছিল। কিন্তু পড়াশোনা যখন এসএসসি, তখন একটা ঘটনার কারণে, এরশাদ (হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ)–সংক্রান্ত, নীলা চৌধুরীকে নিয়ে, সেই ঘটনায় ওই সময় নীলা চৌধুরী জেলেও যান, ময়মনসিংহ কারাগারে ছিলেন। ইমন কিন্তু একদিনও মাকে দেখতে যায়নি জেলে। কেন? তখন তো ওর লাইফে আমি নাই। আমার তো ১৯৯২ সালের ২০ ডিসেম্বর বিয়ে হয়েছে। আর এই ঘটনা জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি কিংবা মার্চের দিকের। ইমন কিন্তু তাঁর মাকে মা, আম্মা এসব ডাকত না। মহিলা বলে ডাকত। আমাদের সামনে অবশ্য ওভাবে বলত না। শুটিং সেটে যখন নীলা চৌধুরী যেতেন, তখন ইমন বলত, মহিলা আসছে। ডলি জহুর আন্টি একদিন সেটে থাকা অবস্থায় এমন ঘটনা ঘটেছিল। তখন বকা দিয়ে ইমনকে বলেছিল, “তুই এভাবে ডাকছিস কেন? তোর তো মা হয়।” ইমন তখন হেসে উড়িয়ে দিয়েছে।’

সামিরা আরও বললেন, ‘ইমনের মনে অনেক কষ্ট আগে থেকেই ছিল। ইমন অনেক কিছু দেখে বড় হয়েছিল, যেগুলো ওর দেখার দরকার ছিল না। এগুলো নিয়ে বাচ্চাদের হয় কি, আমরা এখন যেমন হিউম্যান সাইকোলজি নিয়ে অনেক পড়াশোনা করি, তখন তো এগুলো করতাম না। তখন আমাদের কোনো কাউন্সেলিংয়ের সুযোগও ছিল না। ছিল না রিহ্যাবিলিটিশেনরও। এখন রিহ্যাব আছে, কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা আছে। আমরা তেমন কিছু অনুভব করলে কারও সঙ্গে আলাপ করে তা ভাঙার চেষ্টা করি, বোঝার চেষ্টা। তখন তো ইমন এসব কাউকে বলতে পারেনি। সালমান শাহ হওয়ার পর তো আরও বলতে পারেনি। যাকে বলবে, এটা নিউজ হয়ে যাবে।’

সিনেমাজগতে সালমান শাহ নামে পরিচিত হলেও নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় এই অভিনেতার পুরো নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। তাঁর অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর থানা-পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ, সিআইডি, র‍্যাব, পিবিআই একে একে মামলাটির তদন্ত করে। চলেছে বিচার বিভাগীয় তদন্তও। সব কটি তদন্ত প্রতিবেদনে একে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হলেও প্রতিবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়ার পর পরিবারের আপত্তির (নারাজি) মুখে তদন্ত সংস্থা পরিবর্তন হয়।

মাত্র ২৫ বছরের জীবন পেয়েছিলেন সালমান শাহ। এই স্বল্প সময়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে রেখে গেছেন অসামান্য অবদান। বলা যায়, দেশের চলচ্চিত্রে ভিন্নধারার সূচনা হয়েছিল তাঁর হাত ধরেই। ছবিতে তাঁর উপস্থিতি মানেই ছিল নিশ্চিত সাফল্য, প্রেক্ষাগৃহে উপচে পড়া দর্শকের সরব উপস্থিতি। ছবির ব্যবসায়িক সাফল্য আর জনপ্রিয়তা—দুই–ই সমানতালে এগিয়ে নিয়ে গেছেন তিনি। অভিনয়ের স্বতন্ত্র ধারা আর ফ্যাশন সচেতনতা তাঁকে নিয়ে যায় ভিন্ন এক উচ্চতায়। এভাবে তিনি নিজেই নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন। তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের ক্ষণজন্মা নায়ক সালমান শাহ। দেখতে দেখতে তাঁর মৃত্যুর ২৬ বছর পেরিয়ে গেছে।

...

খেলাধুলা

মেসিকে ছাড়াই জিতলো আর্জেন্টিনা

আর্জেন্টাইন মহাতারকা না থাকলেও ঠিকই দাপুটে জয় তুলে নিয়েছে আকাশি-নীল শিবির। আসন্ন কোপা আমেরিকাকে সামনে রেখে প্রীতি ম্যাচে মাঠে নেমেছিল আর্জেন্টিনা। তবে চোটের কারণে এই ম্যাচে খেলা হয়নি লিওনেল মেসির। 

 

আর্জেন্টিনার হয়ে গোল তিনটি করেছেন ক্রিস্টিয়ান রোমেরো, এনজো ফার্নান্দেজ এবং জিওভানি লো সেলসো। শনিবার (23 মার্চ) যুক্তরাষ্ট্রের লিংকন ফিনান্সিয়াল ফিল্ড স্টেডিয়ামে এল সালভাদরের বিপক্ষে একচেটিয়া আধিপত্য দেখিয়ে ৩-০ গোলের বড় ছিনিয়ে নিয়েছে বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।

 

ম্যাচের ১৬তম মিনিটে অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার কর্ণার কিক থেকে বাড়ানো বলে দারুণ এক হেডে লে আলবিসেলেস্তেদের লিড এনে দেন ক্রিস্টিয়ান রোমেরো। এদিন ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণ চালায় আর্জেন্টিনা। এরপর ক্রমেই মাঝমাঠের দখল নিয়ে আক্রমণ তৈরি করে তারা। ফলে ম্যাচের শুরুতেই লিডের দেখা পায় স্কালোনির শিষ্যরা।

 

ম্যাচের ২৯তম মিনিটে সমতা ফেরানোর খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল সালভাদর। তবে নিখুঁত ফিনিশিংয়ের অভাবে গোলবঞ্চিত হয় তারা। লিড নেওয়ার পর দলটির বিপক্ষে একের পর এক আক্রমণ চালিয়েছে কাতার বিশ্বকাপের শিরোপাজয়ীরা।

 

প্রথমার্ধের শেষদিকে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন এনজো ফার্নান্দেজ। চেলসির এই তারকার দর্শনীয় এক গোলে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় আর্জেন্টিনা।

 

লো সেলসোর গোলে ৩-০ ব্যবধানে লিড নেয় আর্জেন্টিনা। শেষ পর্যন্ত আর কোনো গোল না হলেও আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে ৩-০ গোলের দাপুটে জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছে স্কালোনির শিষ্যরা। বিরতি থেকে ফিরেও ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে ৮০ ধাপ পিছিয়ে থাকা প্রতিপক্ষের বিপক্ষে দাপট বজায় রাখে স্কালোনির শিষ্যরা। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ফের ব্যবধান বাড়ায় লে আলবিসেলেস্তেরা।

 

এবং, দ্বিতীয় প্রীতি ম্যাচে আগামী ২৬ মার্চে যুক্তরাষ্ট্রেই মাঠে নামবে বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা